গ্রেপ্তারের পর মামুনুল হক তার তিন বিয়ের কথা পুলিশের নিকট স্বীকার করেছেন। প্রথম স্ত্রী আমিনা তাইয়্যেবা গত ৩ এপ্রিল নারায়নগঞ্জের রয়্যাল রিসোর্ট কান্ডের পর আর বাসায় ফেরেননি। তিনি এখন মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অপরদিকে দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্নাও পৃথক মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রিসোর্টে স্থানীয়দের দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে মামুনুল সঙ্গীনিকে আমিনা তাইয়্যেবা নামে পরিচয় করিয়ে দেয়ার ঘটনাটি ফেসবুক লাইভে মোহাম্মদপুরের কাদেরাবাদ হাউজিং এর এক নম্বর সড়কের ৭ নম্বরের বাড়িতে বসেই দেখেন তিনি।

কিছুক্ষণ পরে তিনি চার সন্তানকে নিয়ে বাসা ছেড়ে চলে যান। ছয় দিন পর ৯ এপ্রিল খানিক সময়ের জন্য দুই সন্তানকে নিয়ে এই বাসায় ফেরেন। এরপর আবার চলে যান। এরপর আর ফেরেননি।

রিসোর্টে বেকায়দায় পড়ে মামুনুল তাইয়্যেবাকে বলেন, তার সঙ্গীনি শহীদুল ইসলামের স্ত্রী। ঘটনার চাপে পড়ে তাকে স্ত্রী পরিচয় দিতে বাধ্য হয়েছেন।

পরে মামুনুল দাবি করেন, দুই বছর আগেই তিনি রিসোর্টের সঙ্গীনি জান্নাত আরা ঝর্ণাকে বিয়ে করেছেন।

এ নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই তাইয়্যেবার সঙ্গে মামুনুলের মনোমালিন্যের বিষয়টি জানা যায়।

এর মধ্যে আবার আরও এক নারীর সঙ্গে মামুনুলের সম্পর্কের বিষয়টি গণমাধ্যমে জানাজানি হলে হেফাজত নেতা সেই নারীকে তার তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে দাবি করেছেন বলেও সংবাদ প্রচার হয়েছে।

ওই নারীর সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের পর তার ভাইকে মামুনুল মোহাম্মদপুরের জামিয়া রহমানিয়া মাদ্রাসায় ডেকে নিয়ে বিয়ের কথা জানান বলে তিনি মোহাম্মদপুর থানায় করা সাধারণ ডায়েরিতে উল্লেখ করেছেন।

এর মধ্যে মামুনুলের গৃহবিবাদের বিষয়টি সামনে আসে।

রিসোর্টকাণ্ডে বিপাকে পড়া মামুনুলের অতীতের নাশকতার মামলাগুলোও সামনে চলে আসে। রোববার জামিয়া রহমানিয়া থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বাসা লাগোয়া জামিয়া রহমানিয়া থেকে গ্রেপ্তারের পর কাদেরাবাদ হাউজিং এর বাসা থেকে কেউ বের হননি । ওই বাসায় মামুনুলের পাশাপাশি থাকেন তার ভাইয়েরাও। হেফাজত নেতার গ্রেপ্তারের পর সকাল ও সন্ধ্যায় দুইবার গিয়েও পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি।

পরিবারের সদস্যরা কেউই বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। দরজায় কড়া নাড়লেও দারোয়ান ছাড়া আর কেউ আসেননি।

বাইরের কারও সঙ্গে কথা না বলতে কড়া নির্দেশ আছে বলে জানিয়েছেন দারোয়ান ইকবাল হোসেন।

সাংবাদিক পরিচয় দিলে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিক কেন, বাইরের যে কারও সঙ্গেই কথা বলা নিষেধ আছে।’

মামুনুল হকের ভাইদের সঙ্গে কথা বলিয়ে দিতে অনুরোধ করলে তিনি বলেন, ‘আগে থেকেই সবার মনের অবস্থা ভালো না। হুজুর (মামুনুল হক) অ্যারেস্টের পর বাসার সবারই মনের অবস্থা আরও খারাপ। কেউ কথা বলবে না, আমারেও কথা কইতে নিষেধ করছে।’

মামুনুল হকের স্ত্রী আমিনা তাইয়্যেবা কোথায় আছেন- জানতে চাইলে ইকবাল হোসেন বলেন, ‘ঘটনার প্রথম দিনেই (৩ এপ্রিল) তিনি বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে চলে গেছেন। কোথায় গেছেন আমি জানি না, হয়তো তার আত্মীয় স্বজনদের বাড়ি গেছেন।’

এর পরই দরোয়ান ইকবাল বলেন, ‘ভাই আমারে আর কিছু জিগায়েন না, আমি দারোয়ান মানুষ। আমারে বাসার কেউ কিছু কইব না আর আমি কিছু কইতে পারব না। আপনি এখন যান।’

এই বলে বাড়ির দরজা বন্ধ করে দেন দারোয়ান।

তবে রিসোর্টকাণ্ডের পর দুই হেফাজত নেতার কথোপকথনে উঠে আসে, তাইয়্যেবা সম্ভ্রান্ত ঘরের সন্তান। মামুনুলের বাবা আজিজুল হক জীবিত থাকতে তাদের বিয়ে পড়ান।

মামুনুল একটি বইয়ে লিখেছেন, তার শ্বশুর একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা।

আমেনা তাইয়্যেবা ও জান্নাত আরা ঝর্ণার মামলার প্রস্তুতি

বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, মামুনুল হকের বিরুদ্ধে এখন মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তার দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী আমেনা তাইয়্যেবা তার বিরুদ্ধে মামলা করবেন যে প্রথম স্ত্রীকে রেখে অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্ক এবং কথিত ২য় বিয়ে।

২য় বিয়ে করার ক্ষেত্রে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নেয়ার যে আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে সেটি অনুসরণ করা হয়নি। প্রথম স্ত্রী প্রতারণা, ২য় বিয়ে এবং অন্য নারীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। একাধিক সূত্র বলছে, প্রথম স্ত্রী আমেনা তাইয়্যেবার সঙ্গে আনশৃঙ্খলা বাহিনীর যোগাযোগ হচ্ছে, এই মামলার প্রস্তুতি চলছে।

অন্য একটি মামলা হচ্ছে তার কথিত ২য় স্ত্রী জান্নাত আরা ওরফে ঝর্ণার পক্ষ থেকে। ঝর্ণার অভিযোগ হলো তাকে আশ্বাস দেয়ার পরও তাকে বিয়ে করেনি এবং বিবাহবহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্ক করেছেন, তাকে প্রতারণা করেছেন। এই মামলারও কার্যক্রম, প্রস্তুতি চলছে। এই মামলার স্বাক্ষী হবে ঝর্ণার প্রথম পক্ষের সন্তান, ঝর্ণার ডায়েরি এই মামলার মূল্যবান দলিল বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন।এই মামলাগুলো কখন হবে এই ব্যপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, প্রস্তুতি চলছে, যথাসময়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading