মঙ্গলবার ভোরে গুরুগ্রামে নিজের বাড়িতে বসেই বালাকোটে ভারতের হামলার খবর পান ভারতীয় বায়ুসেনার প্রাক্তন যুদ্ধবিমান চালক রাজীব ত্যাগী। তারপর সারা দেশ যেভাবে বিজয় উল্লাসে মেতে উঠেছিল, তা-ও খেয়াল করেছেন তিনি। এবার দেশবাসীর উচ্ছাস কিছুটা সীমিত হবার পরই কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি প্রশ্ন তুলেছেন ত্যাগী। জঙ্গী ঘাঁটির ওপরে এ ধরণের হামলা শত্রু পক্ষের সামরিক সক্ষমতা কোনো ভাবেই নষ্ট হয়না। তাহলে এরকম হামলায় কী লাভ? আগের বারের মতো এবারও এমন অভিযানের ছাড়পত্র দিয়েছে সরকার। আদতে এই ঘটনায় নিজের আত্মপ্রচারের জন্য আবারও সেনাবাহিনীকে নিখুঁত ভাবে ব্যবহার করল মোদী সরকার।
রাজীব ত্যাগী সামরিক যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, কেন এই হামলা নিষ্ফল। যে কোনও হামলার আগে বায়ুসেনাকে উপযুক্ত অস্ত্র বেছে নিতে হয়। তার জন্য দরকার নিশানার চরিত্র নির্ধারণ করার। যদি সেনা ট্রাক বা জিপের মতো ‘পাতলা চামড়া’র টার্গেট হয়, তা হলে ৩০ মিলিমিটারের মেশিনগান যথেষ্ট। রকেটও ছোঁড়া যায়, কিন্তু সেটাও বাড়াবাড়ি হয়ে যায়। ৩০ মিমি বন্দুক ধাতুর চাদর ফুঁড়ে দিতে পারে। তা-ও যদি ট্রাঙ্ক বা সাঁজোয়া গাড়ি নিশানা হয়, তাহলে ৫৮ মিমি রকেট ব্যবহার হয়। কিন্তু এরকম নির্দিষ্ট নিশানার বদলে যদি বড় এলাকা বা একগুচ্ছ বাড়ি ধ্বংস করতে হয় তাহলে সেক্ষেত্রে বোমা ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সাধারণ বোমা না লেজার রশ্মি নিয়ন্ত্রিত বোমা, তা নির্ভর করে নিশানার গুরুত্বের ওপর। তবে একটা সাধারণ টিনের চালের বাড়ি উড়িয়ে দিতে কখনই লেজার নিয়ন্ত্রিত বোমা ব্যবহার করা হয় না।
রাজীব ত্যাগী বুঝিয়েছেন, ভোর ৩.৩০ নাগাদ বালাকোট অঞ্চলের ঘন কুয়াশাঘেরা আবহাওয়ায় যুদ্ধবিমানের লেজার প্রযুক্তি কীভাবে ভুল দেখতে পারে! তাঁর আরও প্রশ্ন, বালাকোটে বিমান হামলার ঠিক পর পরই দেশের সব সংবাদ মাধ্যম কীভাবে জেনে ফেলল হামলায় কটা জঙ্গী ঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে, আর কতজন জঙ্গীই বা মারা গেছে! সরকারই কি টিভি চ্যানেলগুলিকে এই খবর জোগান দিচ্ছে? পুলওয়ামা কান্ডের পর নিজেদের মুখরক্ষা করতেই কি এমন কিছু একটা করে দেখানোর দরকার ছিল কেন্দ্রের? এমনই অনেক প্রশ্ন তুলেছেন ত্যাগী।