রাজধানীর ফার্মগেটেস্থ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে (কেআইবি) ঘটা করে আয়োজন করা হয়েছিল সবজি মেলার। লাখ লাখ টাকা খরচ করে নজরকাড়া স্টল এবং প্যাভিলিয়ন তৈরি করে যখন এই মেলা বসানো হয়। তখন উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা সবজির ন্যায্যমূল্য না পেয়ে কাঁদছে। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে হাড়ভাঙা পরিশ্রমে ফলানো সবজির দাম পাচ্ছে না। জমি থেকে সবজি তুলে বাজারে নিতে যে ভ্যান ভাড়া লাগে তাও উঠছে না। ফলে জমির সবজি জমিতেই পচে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন ও কৃষি বিপণন অধিদফতরের কর্মকর্তারা যুক্তিসঙ্গত কোনো জবাব দিতে পারেননি।

সরকারের এসব প্রতিষ্ঠান কৃষির সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে কাজ করছে। এ ছাড়া ‘একটি বাড়ি, একটি খামার’ প্রকল্পের মাধ্যমেও দেশে প্রচুর পরিমানে শাক-সবজি উৎপাদন হচ্ছে। প্রতি বছরই এ সময় উত্তরাঞ্চলে মূলা জমি থেকে তোলা হয় না। ক্ষেতের টমেটো ক্ষেতেই পচে যায়। আর বাঁধাকপি-ফুলকপি গরু খায়। কৃষক যে তার সর্বশেষ মূলধন দিয়ে সবজি চাষ করে দাম না পাওয়ায় সে মূলধনও হারিয়ে ফেলে। এরপরও কৃষক আশায় থাকে- পরবর্তী বছরে আবারও কৃষি কর্মকর্তাদের প্ররোচনায় আবার সবজি চাষ করে। কিন্তু বাজারজাত করার কোনো উপায় সরকারের কর্মকর্তারা কৃষককে দেখায় না। তাছাড়া প্রতি বছর দেশে সবজির ডিমান্ড কত এবং কী পরিমান সবজি অবাদ করতে হবে সে সম্পর্কেও কৃষকরা কোনো ধারণা পায় না। ফলে প্রতিবারই সবজি চাষ করে ঠকে তারা।

আমাদের বগুড়ার শিবগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, উত্তরাঞ্চলে সবজির সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার মহাস্থান হাটে শীতকালীন সবজি ফুলকপি এক টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি মণ ৪০ টাকা। এতে প্রতি পিস গড়ে এক টাকা করে পড়ে। আর বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে মাত্র দেড় টাকায়। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদন করা সবজির দাম কৃষক না পেলেও হাত বদলের মাধ্যমে এই সবজি সাধারণ মানুষকে কিনতে হচ্ছে কয়েক গুণ বেশি দামে।

মহাস্থান হাটে সবজি বিক্রি করতে আসা কৃষক আশরাফ আলী বলেন, ফুলকপি এক টাকা কেজি, বাঁধাকপি দেড় টাকা পিস দরে বিক্রি করেছি। এই দামে সবজি বিক্রি করায় চালান তো দূরের কথা, ভ্যান ভাড়াও হচ্ছে না। অথচ অনেক টাকা খরচ করে সবজি চাষ করেছি, সে সবজি বাজারে এনে পানির দরে দিয়ে যাচ্ছি।

বগুড়ায় যখন এক কেজি ওজনের ফুল কপিরস দাম এক টাকা তখন ঢাকায় এ পরিমাণ ওজনের একটি ফুল কপি বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা, বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা।

southeast

এ বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটা আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠান। সারাদেশের কৃষির উন্নয়নের জন্য আমরা কাজ করি। আমাদের মূল কাজ হচ্ছে কৃষকদের মধ্যে সার, সেচ ও বীজ বিতরণ করা। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন সারাদেশে ডিলারদের মাধ্যমে কৃষকের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেয়।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিদেশে বাংলাদেশের সবজির চাহিদা অনেক। কৃষকরা সবজি রফতারির উদ্যোগ নিলে ভালো দাম পাবেন।’

কৃষি বিপণন অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মীর এনামুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সমবায়ের মাধ্যমে কৃষকরা বড় বড় শহরে তাদের পণ্যে পাঠালে তারা ভালো দাম পাবে। কৃষক যাতে তার উৎপাদিত সবজির মূল্য পান সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ফার্মার্স মার্কেটিং গ্রুপ সরাসরি তাদের পণ্য ঢাকার গাবতলী সেন্টার মার্কেটে বিক্রি করতে পারবেন। বগুড়ার শিবগঞ্জে ফার্মার্স মার্কেটিং গ্রুপ কাজ শুরু করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, পণ্যের হাত বদল ও চাঁদার কারণে মূলত পণ্যেও দাম বাড়ে। তবে কৃষক যদি পণ্যের সঠিক মূল্য পায় তাহলে আমরাও খুশি হবো।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading