সভায় বক্তব্য দিতে না দেওয়ায় ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা আপত্তি দিয়ে তা বর্জন করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। আজ সোমবার সকালে শুরু হওয়া নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সভা শুরুর ৫ মিনিটের মধ্যে তা বর্জন করেন এই নির্বাচন কমিশনার।‘নোট অব ডিসেন্টে’ মাহবুব তালুকদার লিখেছেন, ‘বাকস্বাধীনতা ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা সংবিধানপ্রদত্ত আমার মৌলিক অধিকার। নির্বাচন কমিশন কোনোভাবেই আমার এই অধিকার খর্ব করতে পারে না।’ তিনি বলেন, ‘এমতাবস্থায় অনন্যোপায় হয়ে আমি নির্বাচন কমিশনের এরূপ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নোট অব ডিসেন্ট প্রদান করছি এবং এর প্রতিবাদস্বরূপ কমিশনের সভা বর্জন করছি।’

মাহবুব তালুকদার বলেন, গত বছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত কমিশন অংশীজনের সঙ্গে অর্থাৎ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করে। এতে ৪০টি দল অংশ নেয়। এসব দলের প্রস্তাব ও সুপারিশ নিয়ে এখন পর্যন্ত কমিশনের বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়নি। এ কারণে তিনি তা পর্যালোচনা করে কমিশনের সভায় উত্থাপন করার অনুরোধ জানান।

এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, তিনি যেন কমিশন সভায় প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করতে না পারেন, সে জন্য অপর তিনজন নির্বাচন কমিশনার প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে (সিইসি) অনুরোধ জানান। সিইসি ওই তিনজন কমিশনারের সঙ্গে একমত পোষণ করে বক্তব্য উপস্থাপন করতে দেননি। এই সিদ্ধান্তে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বিস্মিত ও মর্মাহত হয়েছেন বলে ‘নোট অব ডিসেন্টে’ উল্লেখ করেন।

নির্বাচন কমিশনের একটি সূত্র জানায়, মাহবুব তালুকদার তাঁর বক্তব্য নির্বাচনে সেনা মোতায়েন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সরকারের জন্য নির্বাচন নিয়ে সংলাপসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন।

আপত্তির কথা জানিয়ে আজকের বৈঠকে যোগ দিয়েই বেরিয়ে যান নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। আজ বেলা ১১টা ১০ মিনিটে নির্বাচন কমিশনের বৈঠক শুরু হয়। চলে বিকেল পর্যন্ত। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার আর বৈঠকে যোগ দেননি।

বৈঠক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকেরা তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। সভা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন কি না, জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব বলেন, ‘হ্যাঁ’। কোনো বিষয়ে কোনো নোট অব ডিসেন্ট বা আপত্তি দিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ’।

কী বিষয়ে আপত্তি দিয়েছেন? জানতে চাইলে মাহবুব তালুকদার কোনো উত্তর দেননি।

মাহবুব তালুকদার সভা থেকে বেরিয়ে গেলেও সভার কাজ চলেছে। সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, কমিশন সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ ও অন্য কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

আজ প্রায় দেড় মাস পর নির্বাচন কমিশনের সভা হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি ও তফসিল নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে।

সর্বশেষ গত ৩০ আগস্ট নির্বাচন কমিশনের সভা হয়। ওই সময় আগামী সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে আইন সংশোধনের প্রস্তাবে আপত্তি দিয়ে সভা ত্যাগ করেন মাহবুব তালুকদার। এরপর আজই বৈঠক হলো।

সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সিইসি ও অন্য চার কমিশনারের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। টানা দেড় মাস কোনো বৈঠক না হওয়ার এটাও একটা কারণ। সুত্র : প্রথম আলো

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading