বিএনপি জনদুর্ভোগ তৈরি করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বসে থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে সচিবালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত ‘বিএসআরএফ সংলাপে’ এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

সরকারের মেয়াদের শেষদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা যায়, আমরা সেটা লক্ষ্য করছি। সরকার সেটা কীভাবে মোকাবিলা করবে— জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময় মনে করে যে নির্বাচনের মাধ্যমে পাবলিক ম্যান্ডেটে সরকার বদল হবে। আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা অনেক কিছুই দেখেছি, ষড়যন্ত্র দেখেছি। এগুলোর মাধ্যমেও ক্ষমতা বদল হয়ে গিয়েছিল। আওয়ামী লীগ এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রী সবসময়ই মনে করেন সরকার বদল করার একমাত্র উপায় হলো নির্বাচন। সেজন্য সংবিধান অনুযায়ী পাঁচ বছর পর পর নির্বাচনের মাধ্যমেই, সেই নির্বাচনকেই আওয়ামী লীগ সরকার বিশ্বাস করে।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলো একটু সক্রিয় হয় কিংবা নানান ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে, যাতে একটা বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয় কিংবা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। নির্বাচনের সময় এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়, আমরা দেখেছি নির্বাচনের সময় যার যার দলের কথা, ব্যক্তিগত প্রচারণা নিয়ে অনেক সময় অনেক কিছু হয়।’

‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, যেকোনো দল তার কর্মকাণ্ড করবেন। তাতে আমাদের ইয়ে (আপত্তি) নেই। কিন্তু তারা যদি জনদুর্ভোগ তৈরি করেন, রাস্তাঘাট আটকে দিলেন…। আজ আমি দেখলাম একজন সংসদ সদস্য বলছেন তার তিন ঘণ্টা সময় লেগেছে কোনো এক জায়গায় যেতে। তিন ঘণ্টা লাগে কেন, হয় রাস্তার মধ্যে কোনো মিটিং হয় তখন কিংবা খোঁড়াখুঁড়িসহ কিছু উন্নয়নকাজ হয়।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের যদি যদি কেউ রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয় কিংবা গাড়ি-ঘোড়া ভাঙচুর করে কিংবা জনগণের দুর্ভোগ তৈরি করার জন্য তারা যদি কিছু করে তাহলে তো আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বসে থাকবে না। তাদের অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে- এটাই স্বাভাবিক। এটা বিশ্বের সব দেশেই হয়ে থাকে, আমাদের বাংলাদেশেও তার ব্যতিক্রম নয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী মনে করেন যে, যার রাজনীতিতে কর্মকাণ্ড যদি স্বাভাবিকভাবে পরিচালনা করে, তারা মিটিং করবে তাদের দাবি-দাওয়ার কথা বলবে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সেগুলো করবে আমাদের সরকারের কোনো রকম বাধা দেওয়ার ইচ্ছা নেই এবং আমরা বাধা দিচ্ছিও না।’

আপনারা দেখেছেন, কোনো এক দলের নেতা বলতেছেন- আপনারা আসবেন, লাঠিটা নিয়ে আসবেন। লাঠিটা নিয়ে আসার সময় দেশের ফ্ল্যাগটা বেঁধে নেবেন, তাহলে কেউ কিছু বলতে পারবে না। ইনটেনশনটা কী সেখানে আপনাদের? দেখলাম পুলিশের ওপর হামলা শুরু করেছে। আপনারা এ দৃশ্য দেখেছেন। এ সব কিছু হলে তখন তো নিরাপত্তা বাহিনী তার অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে। আমরা সবসময় বলে আসছি, সবসময়ই বিশ্বাস করি- জনগণের ম্যান্ডেটের মাধ্যমে আসতে হবে। এবং কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যদি কিছু ঘটায়, চেষ্টা করে তাহলে নিরাপত্তা বাহিনী সেটার ব্যবস্থা নেবে।

তিনি আরও বলেন, ‘কোনো ভাঙচুর হবে বা কোনো কিছু হয় তাহলে মামলা হবেই। এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কালকে একজন বিচারপতির গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। বিচারপতি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় মামলা করেছেন। এ মামলা তো হবেই। এখানে রাজনীতির গন্ধ আনা উচিত নয়। বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে যদি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় না যেয়ে তারা যদি ভাঙচুর করেন, তারা যদি জনদুর্ভোগ তৈরি করেন তাহলে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী তার অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন।’

পুরনো রাজনৈতিক মামলা সক্রিয় হচ্ছে কিনা- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পুরনো মামলা রয়ে গেছে। এগুলো নিষ্পত্তি করতে হবে। পুরনো বলে কিছু না। পুরনো মামলা তো যুগ যুগ ধরে রাখবো না। নতুন করে কিছু হচ্ছে না।

মাদক নিয়ন্ত্রণে প্রতিবেশি দেশ মিয়ানমারের সহযোগিতার অভাবে মাদক আসা ঠেকাতে শতভাগ সফলতা আসছে না বলেও জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে ক্ষতিকর মাদক আসে মিয়ানমার থেকে। এ জন্য দেশটির সঙ্গে আলাপ হচ্ছে। কিন্তু মিয়ানমার বলে অনেক, করে না কিছুই। এ জন্য দেশটি থেকে আসা মাদক নিয়ন্ত্রণে তেমন সফলতা আসছে না।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসআরএফ সভাপতি তপন বিশ্বাস। সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading