রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘মাস্টার মুহিবুল্লাহ’ নামেই পরিচিত ছিলেন তিনি। মিয়ানমার ছেড়ে আসার আগে সেখানকার একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন বলেই এমন নাম তার। ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্ববাসীর নজরে এসেছিলেন তিনি। সে সময় গণহত্যা বিরোধী একটি সমাবেশে নাগরিত্ব প্রদান, নিরাপত্তা, রাখাইনে ফেলে আসা জন্মভিটা ফেরতসহ কয়েকটি দাবি পূরণ না হওয়ায় রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মুহিবুল্লাহ।

মুহিবুল্লাহ ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ)’ নামের একটি সংগঠন তৈরি করেছিলেন। যেটির চেয়ারম্যানও করা হয় তাকে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের চেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছিলেন তিনি। আর এই কারণেই খুন করা হয়েছে তাকে, এমনটাই দাবি স্বজনদের।

বাংলাদেশে আসার পর বিশ্বের নানাপ্রান্ত থেকে আসা জাতিসংঘ, বিভিন্ন রাষ্ট্রের নেতা ও বাংলাদেশে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের অধিকার নিয়ে কথা বলতো মুহিবুল্লাহ। সবার পক্ষে হয়ে কথা বলার কারণে সবাই মুহিবুল্লাহকে নেতা বলে মেনে নিয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি। রোহিঙ্গাদের নেতা হওয়া ও মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার জন্য কথা বলার জন্যই তার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি মুহিবুল্লাহর মেঝভাই হাবিবুল্লাহর।

উল্লেখ্য, গতকাল বুধবার নিজ অফিসেই হামলার স্বীকার হন এই রোহিঙ্গা নেতা। গায়ে গুলি লেগেছে ৪টি। বুকে ৩টি ও হাতের বাহুতে একটি। প্রথমে ব্লকের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, পরে এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

গতকাল দিবাগত রাত ২টার দিকে মুহিবুল্লাহ মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ সময় অ্যাম্বুলেন্সে ছিলেন তার মেঝ ভাই হাবিবুল্লাহ, ছোট ভাই আহম্মদ উল্লাহ ও মুহিবুল্লাহর প্রতিবেশী নুরুল আমিন।

এর আগে, ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করে আলোচনায় এসেছিলেন মুহিবুল্লাহ। সে সময় তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বলেছিলেন, ‘আমরা (রোহিঙ্গারা) দ্রুত মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই। এ বিষয়ে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাই।’

এছাড়া, তিনি জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট উখিয়ার কুতুপালং শিবিরের ফুটবল মাঠে কয়েক লাখ রোহিঙ্গার গণহত্যাবিরোধী যে মহাসমাবেশ হয়েছিল, তা সংগঠিত করেছিলেন মুহিবুল্লাহ। গণহত্যাবিরোধী ওই সমাবেশ বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছিল।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading