গণতন্ত্রই আমার হত্যার মূল কারণ
অস্ট্রিয়ার লিনজ্ শহরে আমি ছিলাম শত বছর পুরাতন একটি লোহার ব্রিজ । আমি আমার আত্মজীবনী বলছি না । মানব তৈরি গণতন্ত্র আমাকে কিভাবে হত্যা করলো ,শুধু তাই বলতে এসেছি। আমার দেহে কোনো প্রাণ ছিল না, কিন্তু আমি শত বছর যাবত গণতন্ত্রের প্রাণী গুলো সহ ধাতব্ তৈরির রেলগাড়ি /মোটরযান / বাস/ মোটরসাইকেল / কিংবা সাইকেল সকলের ভার বহন করে নিজের ধাতব দেহের ভিতর প্রাণের সঞ্চার অনুভব করতাম । শত বছর ধরেই আমি ছিলাম ওদের সকলের যাত্রা পথের সাথি। হ্যাঁ একথা সত্য যে , আমি ওদের ভারে শত বছর পর একসময় কিছুটা দুর্বল হয়ে যাই। আমার উপর ওদের ভরসা দিন দিন নিম্নগামী হতে থাকে । আমাকে নিয়ে শহরে অনেক কথার সুচনা হয়। চায়ের টেবিলে, ঘরে/বাহিরে এমন কি রাজনীতির আলোচনায় আমি ওদের বিশেষ বিষয়ে পরিণত হই। আমার মন কিন্তু তখন বেশ সতেজ হয়ে উঠে। আমি শত বছর পরে ও নিজেকে বেশ সবল এবং সফল ভাবতে থাকি। শত বছর ধরে আমার ধারণায় ছিল, ওরা আমাকে কেবল ব্যবহারই করে। কিন্তু না, আমার ধারণাকে ওরা ভুল প্রমাণ করে দিল। আমাকে নিয়ে শহরে ভীষণ ভাবনা। আমাকে কিভাবে নতুন করে প্রাণ দেওয়া যায় ,কিভাবে আমার শত বছরের ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করা যায় , এ নিয়ে আমি বিরামহীন খবরের কাগজে রিপোর্ট হতে থাকলাম । ওদের এই কাজকর্ম দেখে আমি একদিকে ভীষণ উজ্জীবিত হই আবার বেশ লজ্জাও পাই । আমাকে নিয়ে কি করবে বা কি করার উচিত, এ নিয়ে খবরের কাগজে লেখালেখি, টেলিভিশনে আলোচনা কোনো কিছুতেই আমাকে নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে না। এর মূল কারণ আমার শত বছরের ঐতিহ্যে । এমনকি বড়বড় রাজনীতিবিদরাও আমার বেলায় কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার সাহস দেখাতে পারেন নি ! যদি কোনো ভুল হয় , আবার পাছে লোকে কিছু বলে ! কিন্তু আমি তো শত বছর অতিবাহিত করে ফেলেছি, আমার ভালোর জন্যই কিছু একটা সিদ্ধান্তে ওদের যে আসতেই হবে। কি আর করা ? আমার শত বছরের আপনজন ওঁরা নিজেদের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে , আমাকে ওদের নিজেদের তৈরি গণতন্ত্রের হাতে ছেড়ে দেয়। আমি ভীষণ মর্মাহত হই। কেননা আমি জানি এই মানুষ তৈরি গণতন্ত্র আমাকে জীবন দিতে পারে আবার হত্যাও করতে পারে । আমার অধীর অপেক্ষা ছাড়া আর কিছুই করার থাকলো না । অতঃপর ওদের প্রেসিডেনট নির্বাচনের সময় আমাকেও ভোটের অংশ করে ফেলে। অর্থাত্ প্রেসিডেনট নির্বাচনের সময় আমার নামেও একটা কাগজে ভোট প্রদানের ব্যবস্থা করে। আমার কাগজের উপরও আমাকে জীবিত রাখা হবে না হত্যা করা হবে ? ( মানে ভাঙা হবে) ওখানে একটা হাঁ /না মত দিতে হবে । আমিও ভোটের অংশ এইভেবে একদিকে ভীষণ খুশি আবার ভাবি এই কঠিন রুপের গণতন্ত্র আমার ধাতব মনকে না বুঝে যদি আমায় হত্যায় মত দেয় ! আমার অপেক্ষা ছাড়া আর কিছুই করার রইলো না । অতঃপর কোনো একদিন অস্ট্রিয়ার একজন ভালো প্রেসিডেনট নির্বাচিত হন এবং সাথে আমাকে হত্যা করার মতামতও জয় লাভ করে । গণতন্ত্রকে সম্মান দিতে যেয়ে আমাকেও মৃত্যুবরণ করতে হয়। আজ থেকে প্রায় বছর খানেক পূর্বেই আমার মৃত্যুবরণ কার্যক্রম সমাপ্ত করা হইয়াছে । আমি এখন পরপারে তবে ওদের ওই কঠিন গণতন্ত্রকে ভীষণ ভাবে সম্মান করি। একেই সম্ভবত প্রকৃত গণতন্ত্র বলে , গণতন্ত্র তুমি দীর্ঘজীবী হও ।
বুলবুল / অস্ট্রিয়া , লিন্জ।