খনার বচন অনেক আগে পড়েছি , বর্তমানে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে সেগুলো মনে নেই। তারপরেও একটি খনার বচন আওরাবার চেষ্টা করছি , ভুল হলে কেউ শুদ্ধ করে দিলে কৃতজ্ঞ থাকবো। খনারবচনটি হলো ,
” আষাঢ় মাসে উওর পশ্চিম আকাশে
মেঘ যদি থাকে ফানা ফানা
সে বছর গাছের আগায় শোলের পোনা” ।
অর্থাত্ খনার বচনটির মানে দাঁড়ায় শোলমাছের পোনা গুলো পানির উঁচ্চতার কারণেই গাছের আগায় উঠবে, সহজ ভাষায় সে বছর বন্যা হবার প্রচুর সম্ভাবনা ।মুরুব্বিরা বলতেন খনার বচন সাধারণত খুবই প্রায়োগিক ছিলো ।
খনার বচনটি কেন বললাম ? গতকাল ২০১৭ সালের বছরের শেষ দিনে দেশের জাতীয় পত্রিকা গুলোতে একটি খবর দেখে চোখ আমার ছানাবড়া । খবরটি হলো
” আসাম থেকে ৩০ লাখ হিন্দু-মুসলিমকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে ” !!
উওর -পূর্ব ভারতের বিজেপি শাসিত রাজ্য আসামে রোববার মধ্যরাতে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন ( এন আর সি)তালিকা প্রকাশ হচ্ছে । ৬৫ বছর পর এই নাগরিক তালিকা প্রকাশ নিয়ে আসামের ৩০ লাখ বাঙালি হিন্দু-মুসলিমদের মাঝে আতংক দেখা দিয়েছে । ” অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি ” হিসেবে চিহ্নিত করে এইসব বাঙালি হিন্দু-মুসলিমদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। এই খবরটি বর্তমানে সেখান একপ্রকার আশণ্কা । এটা নিয়ে আসামে উৎকন্ঠা , আতঙ্ক দেখা দিয়েছে এবং একই সঙ্গে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার আশণ্কাও তৈরী হয়েছে । এই প্রেক্ষিতে ৬০ হাজারের বেশি সেনা ইতিমধ্যেই মোতায়েন করেছে ভারত সরকার । ভারতে একমাত্র আসামেই ন্যাশনাল রেজিস্ট্রি অব সিটিজেনশিপ ( এন আর সি) রয়েছে। ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে এনআরসি প্রেরিত খসড়া তালিকা অনুযায়ী আসামের বাসিন্দাদের মধ্যে ৩০ লাখ অবৈধ নাগরিক । উল্লিখিত যে , আসামে ৬৮ লাখ পরিবারের ৩ কোটি ৩৫ লাখ মানুষ এনআরসিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করেছে , তবে কতৃপক্ষ ২ কোটির মতো নাম প্রথম তালিকায় প্রকাশের জন্য বাছাই করেছে ।
খনা সাহেবের পুরো নাম জানিনা । আজকে খনা সাহেব বেঁচে থাকলে আসামের আকাশে নয় বাতাসে যে গন্ধ , তা শুকে কি বচন বলতেন , সেটা একটা বড়সড় প্রশ্ন বটে । খনা সাহেবের মতোই বলতে হয় ,
” আসামের বাতাসে যা রটে
বাংলাদেশে কোন্ বিপদ না ঘটে ” !
এখানে বলতে হয়, মায়ানমারে রোহিঙ্গা ইসুটি সন্দিহান ভাবে বলা যায় হঠাৎ করে ঘটেনি । এর পিছনে নিশ্চিত পূর্ব পরিকল্পনা ছিলো । সন্দেহ বসত বলতে হয়, বর্তমান পৃথিবীর একটি পরাশক্তি চীন রোহিঙ্গা ইসুর পূর্বে বাংলাদেশে এসে “মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মতো বাংলাদেশকে অনেক টাকার অফার দিয়ে গেলো ” । আমরাও খুশিতে বগল বাজাতে লাগলাম । ঠিক তার কিছুদিন পরেই রোহিঙ্গা ইসুর তৈরী, সাথে আমাদের বগল বাজানোর শব্দ আমাদের কানেই ঢুকিয়ে দিলো।
এখন প্রায় ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গা আমাদের ঘাড়ে !আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্যাঁচে দূরদর্শিতা , দুর্বলতা বা কমশক্তির দেশ হিসেবে আমাদের কিছু কূটনৈতিক ফুলঝুরি কথাবার্তা , আর সাথে আন্তর্জাতিক বিষয়কে দ্বিপাক্ষীক বিষয় করা ছাড়া, এখন অব্দি কিছুই হয়নি। ভবিষ্যতের কথা ফলাফল না আশা পর্যন্ত শুধু অপেক্ষার পালা।
এখানে উল্লেখ করা ভালো যে , চীন আমাদের পরম বন্ধু রাষ্ট্র আর ভারত তো আমাদের পহেলা পড়শী ( এটা ভারতের বিদেশ মন্ত্রীর কথা) , হৃদয়ের বন্ধু । তাই বলছিলাম, ভারতের বাতাসে যে রটনা ২০১৭ বছরের শেষে দেখা দিলো , তা ২০১৮ সালে বাংলাদেশের ভাগ্যে কি ঘটায় । এখানেও পহেলা পড়শী হৃদয়ের বন্ধুর ভবিষ্যত কর্মকার উপরেই ভর করে থাকতে হবে। তাই সঠিক ভাবে বিপদ সংকেত নাম্বার বলতে বা লিখতে পারলাম না । তবে সংকেত যে ১- ১০ স্কেলের মাত্রার একটু উপরের দিকেই আছে , তা মনে হয় জোর গলায় বলা যায় ।
সকলের মতো আমিও ২০১৮ সাল সকলের জন্য মঙ্গল বয়ে আনুক সেই কামনা করি । ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সকল সমূহ বিপদ কে পরাস্ত করে , সমৃদ্ধিলাভ করুক , সেই আশা নিয়েই বাংলাদেশের জন্য শুভ নববর্ষ কামনা রইলো।
বুলবুল Austria,Linz