মাহমুদুর রহমান মান্নার গুম উপন্যাসের মোড়ক উন্মোচন ও তার কয়েকটি গ্রন্থের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় আজ ২৪ শে   সেপ্টেম্বর। গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের মিলনায়তনে অনুষ্ঠানে গুম বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিবৃন্দ, এবং লেখকের বিভিন্ন বইয়ের উপর আলোচনা করেন।

 

গুম উপন্যাস নিয়ে কথা বলেন অধিকার এর পরিচালক নাসির উদ্দিন এলান, মায়ের ডাক এর প্রধান সমন্বয়ক আফরোজা আঁখি, ব্যরিস্টার আবরার ইলিয়াস। তারা বলেন, গুম হওয়া পরিবারগুলোর যে কথাগুলো আমরা স্বল্প পরিসরে ঠিকঠাক প্রকাশ করে উঠতে পারি তার সবই তিনি তুলে ধরেছেন। তিনি নিজে একজন গুম হয়ে ফিরে আসা মানুষ। আমাদের এই পরিবারের মানুষগুলোর সাথে তিনি সবসময় ছিলেন, হৃদয় দিয়ে তাদের কথা শুনেছেন, অনুভব করেছেন, এবং তুলে ধরেছেন। উপন্যাসের নায়ক অর্ক্য, এবং সবগুলো চরিত্রের কোন ঘটনাটি মায়ের ডাকের সাথে আসা গুম হওয়া কোন পরিবারের কার ঘটনার সাথে মিলে যায় তা ধরে ধরে বর্ণনা করেন।

কবি আব্দুল হাই শিকদার বলেন, ১৯৮৮ সালে প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস বিপ্রতীপ এখনও তার আবেদন একই রেখেছে এই সমাজে। অনেক স্বপ্ন, প্রত্যাশা নিয়ে গ্রাম ছেড়ে শিক্ষা নিতে ঢাকা আদা শফিকেরা তাদের দরজায় এসে কড়া নাড়া সৌন্দর্যকে গ্রহণ করতে পারে না আজও। ফিরিয়ে দিতে হয় শিলাদের। বইটির প্রথম রিভিউ করেছিলাম বিচিত্রা পত্রিকায় আমি আব্দুল হাই শিকদার। সেটি ছিলো বিচিত্রার ৫ পৃষ্ঠা জুরে। জোনায়েদ সাকি বলেন, রাজনীতি যার প্রধান কর্ম তাকে, একজন মাহমুদুর রহমান মান্না আজ গুম নিয়ে উপন্যাস লিখছেন গুম হওয়া পরিবারগুলোর অধিকার আদায়ের জন্য, তাকে লিখতে হচ্ছে। অথচ লিখছেন না যথেষ্টভাবে যারা সাহিত্যশিল্পের চর্চাকেই ধ্যানজ্ঞান করেন, তারা হয়তো লিখতে পারছেন না, এটিই রাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থা। এই না বলতে পারাগুলো নিয়েই জেলে বসে উপন্যাস লিখেছেন তিনি ‘আটকে পড়া শব্দরাজি।’ এ-জন্য আমরা কী করবো? সে নির্দেশনাটি রয়েছে মাহমুদুর রহমান মান্নার উপন্যাস গুম এর শেষ কটি বাক্যে।

 

গুম উপন্যাস নিয়ে বলি, গুম হওয়া মানুষগুলো বা তাদের স্বজনরা অনেকক্ষেত্রেই জানেন না, তারা কেন গুম হচ্ছেন। আজ মাহমুদুর রহমান মান্না গুম নিয়ে যা লিখেছেন তা আগামীদিনে নাটক বা ছবি আকারে হয়তো সামনে আসবে, মানুষ আরও জানবে, আমরা তা প্রত্যাশা করি। তার বই ‘বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতি : অতীত, বর্তমান ভবিষ্যৎ’ আমাদের রাজনীতিক অঙ্গনের ধারাপ্রবাহের একটি প্রামাণ্য। বাকশাল নিয়ে যে বিষয়গুলো আমাদের জানা প্রয়োজন তা অত্যন্ত চমৎকারভাবে তিনি তুলে ধরেছেন এ বইয়ে। আমি মনে করি, বইটি আমাদের সবারই পড়া উচিৎ। পরবর্তী সংস্করণে কাগমারী সম্মেলন আমাদের সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে যে প্রভাব ফেলে, ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি আমাদের রাজনীতিতে যে প্রভাব রাখে, এমন বিষয়গুলো আরও সবিস্তার ও অধিক গুরুত্ব যোগ করার অনুরোধ করেন সাইফুল হক।

 

রাজনীতিবিদ, ছাত্র রাজনীতির কিংবদন্তি, লেখক মাহমুদুর রহমান মান্না তার লেখার আলোচনা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেন, আমি জানি না আমি কতোটা ভালো লিখি, যদিও ভালো বক্তব্য করি যা সবাই সুদীর্ঘসময় সবাই বলেছেন বলে জানি, এবং আমার লেখা উপন্যাস, কবিতা নিয়ে সকলের উত্তরোত্তর উৎসাহ পেয়ে আমি এর মান নিয়েও ভালো ধারণা করতে শুরু করেছি। স্বাভাবিক, নির্মোহভাবে ঘটনা-কথার প্রবাহই আমি লিখে যাই, এটিই আমার সাহিত্যচর্চা। বিতর্ক করতাম, বক্তব্য করতাম, সবাই পছন্দ করতাম। একজন পত্রিকায় প্রকাশের জন্য কলাম লিখতে বললেন, তা লিখতে লেগেছিলো আড়াই দিন। এরপর তিনমাসে তা নেমে এসেছে অর্ধেক দিনে। এভাবেই আমার লিখালিখি শুরু। গুম হওয়া পরিবারগুলোর জন্য আমার যে লেখা তা আমি প্রতি মুহূর্তে অনুভব করি। আমি নিজেও গুম হয়েছিলাম। আমার লেখা নিয়ে আপনাদের আলোচনা-সমালোচনা আমার লেখাকে আরও নতুন আঙ্গিক দেবে। অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী, প্রকাশক এস এম এ কবীর হাসান জানান, গুম এবং কারাবাসের বাইশ মাস বই দুটির ইংরেজি অনুবাদ ও প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে নাগরিক প্রকাশন। সারা বিশ্বের মানুষের জানা প্রয়োজন, বাংলাদেশে সমাজ-রাজনীতির বর্তমান প্রামাণ্য। তিনি বলেন, বিপ্রতীপ, সামাজিক উপন্যাস বইটি নাগরিক প্রকাশনের সর্বাধিক বিক্রয় হওয়া বইগুলোর একটি, বইটি অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে কারাবাসের বাইশ মাস বই নিয়ে কথা বলতে চেয়েছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। অসুস্থতার জন্য তিনি আসতে পারেননি। তিনি তার জন্য দোয়া করতে আহ্বান জানান সকলকে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading