ফাগুন এলো, ফাগুন গেলো! ফুলের বাহারও কম ছিলো না । চমত্কার, এক কথায় চমত্কার বরাবরের মত যা আমরা প্রত্যাশাও করি। ফাগুনের এই দিনে সংসদে প্রধানমন্ত্রী কে দেখলাম সদ্যসমাপ্ত জাতীয় নির্বাচনে সকল নির্বাচিত সাংসদদের সংসদে এসে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার এবং প্রয়োজনে সকল কথা বলতে পারবেন , সেই কথা বলেছেন। এতে জাতির কি লাভ হবে, যেখানে কোনো পরিবর্তনের ভূমিকা রাখার কোনো সুযোগই নেই, তাও ভালো যে কথা বলার নিশ্চয়তা আছে। এখন বিশ্বাস আর অবিশ্বাস তাদের সিদ্ধান্ত । তবে বলতেই হয় দায়িত্বশীল বক্তব্য, ভালো এবং অতিব ভালো।
অপরদিকে দেশের রাজনীতিতে নেতা গড়ার কারখানা বা কথিত দ্বিতীয় সংসদ ডাকসুর নির্বাচন নিয়েও চলছে বেশ মহরা। আজকের এই ফাগুনের দিনে ছাত্রদলের মধুর ক্যান্টিনে আগমন এবং অপর দলের দ্বারা স্বাগতম ও শুভেচ্ছা, সত্যি কাঙ্ক্ষিত বটে। ফাগুনের ফুলের মতন সুভাষ ছড়ায় আরো সুবাসিত হোক এটাই নিশ্চয়ই সবার চাওয়া হবে।
ছাত্রদল আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে, নিশ্চয়ই এটা সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীদের জন্য ভালো খবর হওয়ার কথা। এখন ছাত্রদল এই বিষয়ে কি ভূমিকা রাখতে পারে সেটা সময়ই বলে দেবে। যতটুকু মনে পরে, ২০১০ সালে শেষবারের মত তত্কালিন ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের আগমনী ঘটেছিলো। ছাত্রলীগের ছেলেরা “রেন্জ” দিয়ে টুকুর মাথায় আঘাতের পরে রক্তাক্ত ছাত্রদল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ছেড়েছিলো এবং আবার আজকে নতুন করে ক্যাম্পাসে আগমন। ডাকসুকে কেন্দ্র করে সকল ছাত্র সংগঠনের সহবাস সুন্দর হোক এটাই সকলের প্রার্থনা থাকবে নিশ্চয়ই । অতীতের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে কোনো দলই কাউকে কম দৌড়ানোর উপর রাখেনি। অবসান হোক ছাত্রদের স্বার্থেই ছাত্রদের সেই সকল অপকর্মের ।
এবার বলি ছাত্রদলের প্যারেন্টস্ সংগঠনের ভুতের কথা। ছাত্রদল ক্যাম্পাসে এসেই যে দাবি তুলেছে :
* ” নির্বাচন তিনমাস পিছিয়ে দেবার” !
ডাকসু নির্বাচন এমনিতেই হয় না, এখন যাও ২৯ বছর পরে তারিখ ঘোষণা হয়েছে , সেটিকেও পেছানোর দাবি ! বুঝে আসে না , ছাত্রদল এতে কি লাভোবান হবে ? তিনমাস পিছালে কি ভোটের ক্যাম্পেইনে অনেক লাভোবান হবে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলো বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। এখানকার সকল ছাত্র-ছাত্রীরা সার্বিকভাবে সচেতন। এই শিক্ষিত ও সচেতন ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে ভোটের ক্যাম্পেইন করে মনে হয় না খুব বেশি কিছু করার থাকে। কেননা এরা সচেতনভাবেই ভোট প্রদান করবে। সুতরাং এই তিনমাস পিছানোর দাবি খুব বেশি ধোপে টিকে না। আর যদি ছাত্রদলের ধারণায় থাকে নিজেদের কে একটু বেশি গোছানো যাবে, সেটার জন্য ডাকসু নির্বাচন পিছানো । তাহলে বলতেই হবে, সাংগঠনিকভাবে এতবড় ছাত্র সংগঠন সত্যিকারেই ভীষণ দূর্বল । এই নির্বাচনী পেছানোর খেলায় না আবার আম-ছালা দুটোই হারিয়ে যায় ।
* সংগঠনের খাতিরে দাবি যদি করতেই হয় সেটা নির্বাচনের যৌক্তিক বিষয় নিয়ে দাবি করুন। লক্ষ্যণীয় বাম দলগুলোর দাবি দাওয়ায় অনেক যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায় । যেমন , ভোট হলের বাহিরে করার কথা। কেননা বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয়ের যতটা ক্ষমতার চর্চা করে, সেই ক্ষেত্রে হলে গিয়ে ভোট প্রদান একটু বেশিই ঝামেলা হবে। সেই বিষয়ে কিভাবে এবং কোথায় সুষ্ঠু ভোট করা যায় , তা নিয়ে স্মারকলিপি দিন।
* গত প্রায় দশ বছরে দৌড়ের উপর থেকে অনেক নেতৃস্থানীয় ছাত্র নেতাদের ছাত্রত্ব হারিয়েছে। তাদের কে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ আইনে কিভাবে নৈশকালীন কোর্সে ভর্তি করিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানো যায়, সেটা নিয়ে সোচ্চার হোন। সেই যুক্তিক দাবিতে স্মারকলিপি দিন। এরকম আরো অনেক যৌক্তিক বিষয়ে সোচ্চার হোন, যাতে সুষ্ঠু একটি ডাকসু নির্বাচন হয়।
* প্যারেন্টস্ সংগঠনের মত অবরোধ দিয়ে ঘরে বসে থেকে যেমন কিছুই হবে না, ঠিক এই তিনমাস পিছানো নিয়েও কোনো আন্দোলন গড়ার কি ক্ষমতা আছে , দ্বিতীয়বার ভেবে দেখা ভালো। নিজেদের জ্ঞাণ গরিমায় ছাত্র সংগঠন পরিচালনা করলেই বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাবে।
মনে থাকা ভালো, এই প্রাচ্যের অক্সফোর্ডেও ব্যালট বাক্স ছিনতাই এর ঘটনা আছে। শুধু স্বরণের জন্য বলি, ৭৩ এ লেলিন-গামা পরিষদের বিপরীতে মাহাবুব-জহুর পরিষদের ভোটের ব্যালট বাক্স ছিনতাই হয়েছিলো। সুতরাং প্যারেন্টস্ সংগঠনের ভুত মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে, সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের চাওয়া পাওয়ার দিকে নজর রেখে দাবি-দাওয়া নিয়ে অগ্রসর হন।
বুলবুল তালুকদার
সহকারী সম্পাদক, শুদ্ধস্বর ডটকম