একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগে এবং নির্বাচিত প্রার্থীর বিজয় চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন বিএনপির সাতজন প্রার্থী। গতকাল মঙ্গলবার ও আজ বুধবার ( ১২ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি) আসনভিত্তিক প্রার্থীরাই বাদী হয়ে এসব মামলা দায়ের করেন। আগামী কয়েক দিনে ৬৪ জেলা থেকে অন্তত একজন করে পরাজিত প্রার্থী বাদী হয়ে মামলা করবেন বলে জানা গেছে।

বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হাইকোর্টের নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়েছে। সাতটি আসন থেকে মামলা করা হয়েছে। আইনগত যতগুলো বিধান আছে, তার সবটুকুই যথাযথ প্রক্রিয়ায় দলীয়ভাবে ব্যবহার করা হবে।
নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের মামলার কাজে যুক্ত একাধিক দায়িত্বশীল ব্যক্তি জানান, গতকাল মঙ্গলবার ঝিনাইদহ-৪ আসন থেকে সাইফুল ইসলাম ফিরোজ ও টাঙ্গাইল-৭ আসন থেকে আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী এবং বুধবার বরিশাল-১ আসনের জহির উদ্দিন স্বপন, গাজীপুর-৪ আসন থেকে শাহ রিয়াজুল হান্নান, মৌলভীবাজার-৩ আসনের নাসের রহমান, মুন্সীগঞ্জ থেকে আবদুল হাই ও ভোলা-২ আসনের হাফিজ ইব্রাহিম বাদী হয়ে মামলা করেন।
তারা জানান, আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) মানিকগঞ্জ-২ আসনের মঈনুল ইসলাম শান্ত, নরসিংদী-৫ আসনের আশরাফ উদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের নজরুল ইসলাম আজাদ, ঢাকা-৫ আসনের নবী উল্যাহ নবী এবং ঢাকা-২ আসনের প্রার্থী ইরফান ইবনে আমান অমি মামলা করতে পারেন।
ঢাকা বিভাগের বিএনপির প্রার্থীদের মামলাগুলোর আইনজীবী হিসেবে আছেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী নির্বাচিত প্রার্থীদের বিজয় চ্যালেঞ্জ করে আমরা মামলাগুলো করেছি। গত দুই দিনে সাতটি মামলা করা হয়েছে। আগামী কয়েকদিনে সবগুলো জেলা থেকেই একজন করে পরাজিত প্রার্থী মামলা করবেন।’
বিএনপিপন্থী এই আইনজীবী মামলা করার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, ‘কীভাবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট কারচুপি হয়েছে, এটা আমরা মামলা করে আদালতের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কীভাবে সাজানো নির্বাচনের ফলাফল আনা হয়েছে, তা মামলায় দেখিয়েছি।’
রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘আমরা অনেকগুলো আসন দেখিয়েছি, কেন্দ্র দেখিয়েছি, যেখানে শূন্য ভোট পেয়েছে বিএনপি। এমন কেন্দ্র রয়েছে যেখানে অবিশ্বাস্যভাবে শতভাগ ভোট পড়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পক্ষে। আমরা আদালতের কাছে এসব বিষয় দেখানোর চেষ্টা করেছি।’
রুহুল কুদ্দুস জানান, আনুমানিক প্রত্যেকটি জেলা থেকে পরাজিত বিএনপির প্রার্থীরা মামলা করবেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির হাইকমান্ড ইতোমধ্যে এসব মামলা দেখভালের জন্য আইনজীবীদের একটি টিম গঠন করেছে। ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস ছাড়া এই টিমে আছেন ব্যারিস্টার আমিনুল হক, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, মীর নাসির উদ্দিন, ফজলুর রহমান এবং ব্যারিস্টার রাজিব প্রধান।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে সারাদেশের ৬৪ জেলা থেকে হাইকোর্টের নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য মামলা না করার বিষয়ে অবস্থান নিলেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তা আমলে নেননি। ওই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয়, আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সবগুলো জেলার প্রতিনিধিদের হাইকোর্টে মামলা করার।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, নির্বাচনের ৪৫ দিনের মধ্যে নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করতে হয়। এ বিষয়ে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘৪৫ দিন মানে কিন্তু অলঙ্ঘনীয় ৪৫ দিন নয়। কোনও মামলা করতে বিলম্ব হয়, এক্ষেত্রে যথোপযুক্ত কারণ দেখাতে পারি, তাহলে কোনও সমস্যা হবে না।’

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading