আজ ৬ ই ডিসেম্বর, স্বৈরাচার পতন দিবস। সামরিক জান্তা স্বৈরশাসক দীর্ঘ ৯ বছর পর এই দিনেই পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। দেশে তখন দীর্ঘদিনের আন্দোলন সংগ্রামের ফলাফল এরশাদের পদত্যাগ এবং নতুন করে জনগণের মাঝে গণতন্ত্রের সুবাতাস বইতে থাকে। কতটুকু গণতন্ত্র আমরা আনতে পেরেছি তা আজ স্পষ্টতই দৃশ্যমান । সেটা আজকের আলোচনার বিষয় নয়। সামনে একটি জাতীয় নির্বাচন, এই নির্বাচনে সেই পূর্বেকার সামরিক জান্তার রোল মডেল কেমন তাই রাশিচক্রে দেখার চেষ্টা করবো।
পৃথিবীর সব দেশেই কমবেশি রাশিচক্রের চর্চা আছে। সেই দিক দিয়ে আমাদের দেশেও তা বেশ প্রচলিত। ১২ মাসে ১২ প্রকারের রাশি। এই ১২ প্রকার রাশির বিশ্লষণ করছি না। আমি শুধু দেখার চেষ্টা করবো জান্তা এরশাদের রাশিচক্র কেমন? সাধারণত মানুষের একটি রাশিরই প্রক্রিয়া থাকে। সাথে জন্মদিন কবে সেটার উপর নির্ভর করে রাশিচক্রের আগেপিছের রাশির কিছুটা ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া। তবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এরশাদের রাশিচক্র তার কর্ম ক্রিয়ার উপর ১২ প্রকার রাশির উপরে নিচে অনেক রাশির বেশ মিল পাওয়া যায় ।
মূল কথায় আসি, এরশাদের পূর্বের কর্মে জনগণের মনে হতেই পারে তিনি হলেন “কন্যা রাশির” জনক (আজরা ভার্জো কুমারী মেয়ে)। কেননা এরশাদের নারী ঘটিত কর্মকা বাজারে তখন বেশ প্রচলিত ছিলো, এমনকি সময় সময় এখনও সেগুলোর কথাবার্তা হয়ে থাকে। এরশাদ একজন সুদর্শন জন, এ কথা অস্বীকার করা রীতিমতো অন্যায় হবে নিশ্চয়ই । অবশ্য এরশাদ একবার নিজেই উল্লেখ করেছিলেন, ” আমার প্রতি নারীরা আকর্ষীত হয়, আমার কি করার আছে!”। এরশাদের জন্ম তারিখ কি? সেটার চেয়ে বাজারে ৮০ র দশকে বেশি প্রচার ছিলো তিনি কন্যা রাশির জনক।
সমস্যা হলো ২০১৪-র ৫ ই জানুয়ারির নির্বাচনে এরশাদ শুধু কন্যা রাশি নন, সেটা প্রমাণ করে “ধনু রাশিতে” রূপান্তরিত হন ( কৌস স্যাজিটারিয়াস ধনুক)। বর্তমান সরকারের এই বিশেষ দূত তখন একেবারেই বেঁকে ধনুকের আঁকাড় ধারন করেন। অবশ্য এই রাশির চরিত্র তিনি বেশি দিন ধরে রাখতে পারলেন না! নিশ্চয়ই সবার মনে আছে তিনি কিভাবে তখন বেঁকে বসে ধনুকে পরিণত হয়েছিলেন। নির্বাচন করবেন না, পিস্তল লোড করে রেখেছেন, ভিন্ দেশি সুজাতার গোপন কথা বাজারে প্রকাশ করে দিলেন! তখন সাধারণ জনগণের মনে হতেই পারে , এরশাদ সত্যি সত্যি ধনু রাশির জনক। কিন্তু না ,বিধিবাম! বর্তমান সরকার তাকে গল্ফ ক্লাব থেকে কারখানায় ( হাসপাতালে) প্রেরণ করে সোজা করে আনলেন এবং রীতিমত “বৃষ রাশিতে” ( থৌর টবাস বলদ) এ পরিনত করলেন। সেই বৃষ রাশির বলদ এখনও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত! একেবারে যুতসহি রাশি বটে।
বর্তমান সরকারের পুরোপুরি পাঁচবছর বিশেষ দূত থেকেও কেমন জানি নিজ দলের ক্ষমতায়ও বিচ্যুতি হন। নিজের গিন্নির কাছে রামধরা খেয়ে হাবুডুবু অবস্থা । সংক্ষেপে বলা যায়, সরকারের চাপে আর গিন্নির ঠেলায় পরে নিজেকে এক ভিন্ন রাশির জনক হিসেবে হাজির করলেন। আর তা হলো, ” মিথুন রাশি” ( জৌরা জেমেনি নর-নারী)। দলের বিরাট অংশ যখন মন্ত্রীত্বের ক্ষমতার লোভে গিন্নির কোলে বসে দলকে নিয়ে খেলায় মেতে উঠে। নিশ্চয়ই সবার মনে পরবে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক মঞ্চে হঠাত্ করে এই স্বৈরাচার গিন্নির হাতে হাত রেখে ” মিথুন রাশির ” চরিত্র প্রকাশ করেছিলেন। আহ্হা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে , কি চমত্কার জেমেনি নর-নারী।
ঘুরেফিরে আবার জাতীয় নির্বাচন । এরশাদ তার রাশির নতুনত্ব দেখাবেন না! এটা কেমন করে হয়। বেশ ! গত কয়েকদিন হলো ওনার কোনো খবর নাই! কেউ বলে হাসপাতালে , আবার কেউ বলে প্রেসিডেন্ট পার্ক হাউজে নিরিবিলি আছেন। এবার ওনার রাশি বিশ্লষণ করলে দেখা যায় , আসলে তিনি ” মকর রাশির” জনক ( জিদ্দি ক্যাপ্রিকর্নস ছাগল) ! তার দলের সাধারণ সম্পাদকের হঠাত্ পরিবর্তন, নতুন রাঙার আগমন। অথচ যে এরশাদের নামেই দল, জিনি দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আ-মৃত্যু দলের চেয়ারপার্সন! তিনিই এত উলোট পালটের আগে পিছে নাই। এতে বুঝাই যায়, বর্তমান সরকার তাকে কতটা মকর রাশির ( ছাগল) জনক বানিয়ে রেখেছে। এ কথা জোর গলায় বলাই যায়, ৩০০ সিটের বা কোন জোটে আমি( এরশাদ) যাবো , ইত্যাদি ইত্যাদি কথাবার্তার কারনেই আজকে উনি মকর রাশির জনক।
এরশাদের বর্তমান লুকোচুরির কর্মকাণ্ড কে বিবেচনায় নিলে বলাই যায়, উনি আসলে ” কুম্ভু রাশির” ( দলওয়া একোয়ারিয়াস কলস) । যত কথাই বলুক, উনি বর্তমান সরকারের বৃত্তের বাহিরে যেতে পারবেন না। কুম্ভুকারে এখানেই ওনার রাশির ভাগ্য কুুুুম্ভ রাশি ।
অপেক্ষা করুণ, আর কয়েকদিন পরেই উনি একেবারে ভিন্ন রাশি নিয়ে জনগণের সামনে উদয় হবেন নিশ্চিত । আর তা হবে , ” মেষ রাশি” ( হামাল এরিস ভেড়া) । আগামীতে উনি জন সম্মুখে এসে এই মেষ রাশির চরিত্র কি ভাবে পালন করেন, সেটাই দেখার অপেক্ষায় আছি।
আজ ৬ ই ডিসেম্বর, এরশাদের পতনের দিবস। এই এরশাদ সেই সময়ে সকল কিছুকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে যে ” সিংহ রাশির” ভাব নিয়েছিলেন! যা তিনি মোটেও নন। যিনি নিজেকে সৈনিক বলে দাবী করেন, অথচ ৭১ এ সৈনিক থাকা অবস্থায় দেশের হয়ে যুদ্ধ করেন নি! যিনি সামরিক জান্তা থেকে রাজনৈতিক বোনে, জেলের ভয়ে কাঁপেন! তিনি কখনোই সিংহ রাশির নন। অতীতেও ছিলেন না, বন্দুক আর রাজনীতি এক সাথে যায় না। শেষে শুধু বলবো, যে সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে আজকের এই ৬ ই ডিসেম্বর, যে গণতন্ত্রের আশায় আজকের এই দিন। এখন সময় এসেছে, তার চর্চা হোক। সামনের জাতীয় নির্বাচন দিয়েই আবার তা নতুন করে শুরু হোক।
বুলবুল তালুকদার
সহকারী সম্পাদক, শুদ্ধস্বর ডটকম