কয়েক দশক আগে রক্তে সংক্রমণ ও তার জেরে হওয়া মৃত্যুর ঘটনায় অবশেষে চলতি বছরের মধ্যে বাকি জীবিতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে সরকার। এই আবহে দেশের পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে সেই ঘটনার জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক।

পুরো বিষয়টির সূত্রপাত ১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে। চলেছিল প্রায় ১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত। কয়েক দফায় বিস্তৃত এই কেলেঙ্কারিতে অস্ত্রোপচার, দুর্ঘটনায় আহত, সদ্য সন্তানপ্রসূতিদের দেহে রক্ত দেওয়ার সময়ে জীবাণুমুক্ত সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়নি বলে জানা গিয়েছে। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত বহু কারাবন্দি এবং নেশাসক্তদের রক্তও কার্যত বিনা পরীক্ষায় রোগীদের দেহে দেওয়া হয়েছে। একই ভাবে হিমোফিলিয়ায় আক্রান্তদের দেহেও প্লাজ়মা দেওয়া হয় জীবাণুমুক্ত সরঞ্জাম ছাড়াই। বহু ক্ষেত্রে অপরীক্ষিত রক্তও রোগীর শরীরে দেওয়া হয়। এর ফলে সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ এইচআইভি (হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়্যান্সি ভাইরাস) এবং হেপাটাইটিস সি রোগে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে ৩৪০
জন শিশুও ছিল বলে পরে সরকারি সূত্রেই জানা যায়। প্রায় তিন হাজার জনের মৃত্যুও হয়। তৎকালীন সরকার ও ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) ঘটনার সঠিক তদন্ত করার বদলে সেটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। এই ঘটনাটিকে ব্রিটেনের চিকিৎসাক্ষেত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিপর্যয় হিসেবে বর্ণনা করা হয়।

যদিও পুরো বিষয়টি চাপা পড়েনি। বরং তা নিয়ে গত কয়েক বছরে বিস্তর তদন্তমূলক লেখা সামনে আসার পরে গোটা দেশের মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সম্প্রতি এই ঘটনাটি নিয়ে ২৫০০ পাতার একটি রিপোর্টও প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে এই স্বাস্থ্য কেলেঙ্কারি নিয়ে বিশদে বর্ণনা করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, ৮০ থেকে ১০০ জন রোগী এইচআইভি এবং প্রায় ২৭ হাজার জন হেপাটাইটিস-সি-তে আক্রান্ত হন। ওই রিপোর্টে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, আক্রান্তদের অনেকে আবার না জেনেই তাঁদের সঙ্গীকেও হয়তো রোগের শিকার করে ফেলেছেন। ফলে সঠিক ভাবে কত জন গোটা বিষয়টিতে আক্রান্ত হয়েছেন, কত জন মারা গিয়েছেন বা কত জন এখনও বেঁচে, তার সংখ্যা জানা প্রায় অসম্ভব। এর পরেই সোমবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চেয়ে সুনক বলেন, “এটি ব্রিটেনের কাছে চরম লজ্জার দিন।” বিষয়টি নিয়ে দুঃখপ্রকাশও করেন তিনি। আরও বলেন, “ক্ষমতার শীর্ষে থাকা লোকেরা সংক্রমণ রোধ করার সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁরা তা করতে ব্যর্থ হন।”

সেই সময়ে ওই রক্ত সংক্রমণে আক্রান্তদের মধ্যে এখন মাত্র ৩০ জন বেঁচে রয়েছেন বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি সোমবার আক্রান্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া প্রসঙ্গে সুনক জানান, যা খরচই হোক না কেন, তাঁর সরকার সেই ক্ষতিপূরণ দেবে। এ জন্য একটি তহবিল গঠন করা হবে বলে ঘোষণা করেছে সরকার।

Leave a ReplyCancel reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading