সরকারের সমালোচনা করা প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের। তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও প্রজাতন্ত্র মানে জনগণের তন্ত্র, প্রজাদের তন্ত্র। রাজতন্ত্র নয়। প্রজারা সেখানে দেশ চালাবে। জনগণ নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি ঠিক করবে। সেই প্রতিনিধি তাদের কথামতো দেশ চালাবে। আমি মনে করি, সরকারের সমালোচনা করা প্রতিটি নাগরিকের অধিকার নয়, এটা তাদের দায়িত্ব। তাদের প্রতিনিধিকে বলতে হবে যে আমি কি চাই। প্রতিনিধি কথা শুনছে কি শুনছে না, সেটা অনুযায়ী পরবর্তী নির্বাচনে গিয়ে আপনারা তাকে পরিবর্তন করবেন। এটাই হলো গণতন্ত্র।

এ সময় জিএম কাদের প্রশ্ন রেখে বলেন, এই গণতন্ত্র কি এখন আমাদের দেশে আছে? এ সময় জাপা নেতাকর্মীরা উচ্চস্বরে তার কথার জবাবে বলেন, না। 

মঙ্গলবার বিকালে ‘শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভাটি জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।

জাপা চেয়ারম্যান প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনারা কি প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারেন? প্রতিনিধি কি আপনাদের কথা শুনতে চায়? তিনি বলেন, যখন কথা বলেন তখন কণ্ঠরোধ করার ব্যবস্থা করা হয়। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললে মনে হয় রাষ্ট্রবিরোধী কথা। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বললে, রাষ্ট্রের কোনো ক্ষতি করলে সেটা রাষ্ট্রদ্রোহ। সরকার রাষ্ট্রের কর্মচারী। একইসঙ্গে পুলিশ, আর্মি, বিজিবিÑএরা সবাই রাষ্ট্রের কর্মচারী। এরা সরকারকে দেশ ও মানুষের কল্যাণে দেশ পরিচালনায় সাহায্য করে। এটা তাদের দায়িত্ব। তারা কিন্তু সরকারের লোক নয়। তারা সরকারকে সাহায্য করার জন্য আছে।

তিনি বলেন, দলীয়করণ করে এখন রাষ্ট্র হয়ে গেছে সরকারের দলের। রাষ্ট্র এখন সরকারের মতো আচরণ করছে। রাষ্ট্রের প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা এখন সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের মতো কাজ করছে। যার জন্য দেশের মানুষ রক্ত দিলো, যার জন্যে দেশ স্বাধীন হলো, সেই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ এখন কোথায় গেল?

জিএম কাদের বলেন, আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন সময়ে দেশের জনগণের মুখের দিকে তাকিয়ে তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় যায়। ক্ষমতায় যাওয়ার পরে তারা আর ফিরে তাকায় না। এই কথাগুলো তারা আর মনে রাখে না। তারা ক্ষমতার বাইরে  গেলে এককথা বলে, ক্ষমতায় গেলে এককথা বলে, আবার ক্ষমতার বাইরে গেলে আরেক কথা বলে। এটা আমাদের দেশের রাজনৈতিক চরিত্র। আমরা রাজনৈতিকভাবে যে সংস্কৃতি গড়ে তুলেছি, এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। যে প্রত্যাশা নিয়ে মানুষ তাদের নেতা নির্বাচন করছেন, প্রত্যাশা পূরণে এসব রাজনীতিকরা ব্যর্থ হচ্ছেন।

তিনি বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পরে যারাই ক্ষমতায় এসেছেন তারা সকলেই সত্যিকার অর্থে নির্বাচন দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। পর্যায়ক্রমে এই সময়ে এসে বাংলাদেশ একটি সম্পূর্ণভাবে একনায়কতন্ত্রবাদী একটি দেশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে গণতন্ত্রের কথা বলে, প্রতিশ্রুতি দিয়ে এক সরকার থেকে আরেক সরকার আসে, কিন্তু একানব্বইয়ের পর থেকে গণতন্ত্রে আনার পথে আমরা কাউকেই অগ্রসর হতে দেখিনি।

তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা উন্নয়নে একটি বিল্ডিং হয়েছে, তারা কি কাজ করছে তা আমরা জানতে পারছি না। এই সরকারের কৃতিত্ব শুধু বিল্ডিং আর কমিশন।  জনগণের কথা বলার অধিকার নেই। গণমাধ্যম বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। একতরফাভাবে খবর দেয়া হচ্ছে। দেশে ডলার সংকট চলছে। কাঁচামালের অভাবে কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মানুষ সংসার চালাতে পারছে না। একটি শ্রেণি দেশের ৯০ ভাগ সম্পদ লুটপাট করছে। আর মাত্র ১০ ভাগ সম্পদের ভোগ করছেন দেশের বেশির ভাগ মানুষ।

আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, কো- চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম, এসএম ফয়সল চিশতী, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, এডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, মোস্তফা আল মাহমুদ প্রমুখ।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading