নামমাত্র বা সহজ শর্তের ঋণগুলো অফিশিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স বা বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা (ওডিএ) হিসেবে পরিচিত। দাতাগোষ্ঠীর এই সহায়তা দিয়ে দক্ষিণ এশিয়াতে বড় বড় অবকাঠামো গড়ে উঠছে, মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। তারপরও মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো পিছিয়ে। এই ওডিএর ধরন, ব্যবহারের কৌশল, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয় বঙ্গোপসাগর সংলাপে।

ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হুইটলি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো থেকে শেষ ৫ বছরে বাংলাদেশ প্রায় ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ওডিএ পেয়েছে, যা বাংলাদেশের পাওয়া মোট বৈদেশিক সহায়তার ১০ শতাংশ। বাংলাদেশ ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণ হবে। ইইউতে বাংলাদেশে ৩ বছর অতিরিক্ত সময় পাবে। ওডিএ আর খালি চেকের মতো থাকবে না। পোশাক খাতের পাশাপাশি ওষুধ, চামড়া, পাটজাত পণ্যের মতো খাতগুলোয় রপ্তানি বাড়াতে জোর দিতে হবে।

দেশে প্রতিনিয়ত অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, অবকাঠামো ও মানব উন্নয়নের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখতে হবে। শিক্ষা ও দক্ষতা বাড়াতে বিনিয়োগ করতে হবে। যে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, সেগুলো জনগণের মঙ্গলের জন্য, নাকি অন্যদের পকেট ভরতে, তা দেখতে হবে। উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকার পাচার হচ্ছে।

করোনার আগে থেকেই দেশে বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ কমছে বলে জানান ইউএনডিপি বাংলাদেশের কান্ট্রি ইকোনমিস্ট নাজনীন আহমেদ। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এই ওডিএর পরিমাণ বাড়বে, তা বলা যাচ্ছে না। ঋণের সুদ ও কিস্তি পরিশোধে সময় বাড়াতে কূটনৈতিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। কোনো দেশের সঙ্গে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার আগে নিজ দেশের ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের কথা ভাবতে হবে।

জাপানের রাকুতেন সিকিউরিটিজ ইকোনমিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রিসার্চ ফেলো ইয়োশিকাজু কাতো বলেন, করোনা মহামারির পরেও বাংলাদেশে ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। জাপানের ৩২৪টি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ব্যবসা করছে। উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়া, দারিদ্র্য দূর করা ও টেকসই অর্থনীতি গড়ে তুলতে বাংলাদেশকে সহায়তা করছে জাপান।

অধিবেশনের আলোচনায় বলা হয়, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে ২০২৬ সালের নভেম্বরে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। এ ঘটনা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ এত দিন বহির্বিশ্ব থেকে যেসব শুল্ক সুবিধা পেয়ে আসছিল, ২০২৬ সালের পর সেগুলো থাকবে না।

অধিবেশনটি সঞ্চালনা করেন ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পারভেজ করিম আব্বাসী। তিন দিনের এই সংলাপে সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাঁরা অংশ নেননি। তবে আজ কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক অনুষ্ঠানস্থলে আসেন। কিন্তু তিনি মঞ্চে ওঠেননি। কিছুক্ষণ থেকে তিনি অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন। কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্য দেওয়ার কথা থাকলেও দেননি।

দক্ষিণ এশিয়ায় নারীর ক্ষমতায়নবিষয়ক অধিবেশনটি সঞ্চালনা করেন সাবেক সংসদ সদস্য মাহজাবীন খালেদ। তিনি বলেন, একটা সময় সমাজের ধারণা ছিল, নারী শুধু ঘরে থাকবেন, সংসার সামলাবেন। এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। মেয়েরা এখন জীবনের নানা ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছেন।

নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে এখনো অনেক পথ পাড়ি দেওয়া বাকি বলে মনে করেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো দলই তা করতে পারেনি। তৃণমূলের নারীদের জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা যায়নি। বাল্যবিবাহের হার দেশে অনেক বেশি। করোনায় অনেক মেয়েশিশু স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে।

নারীর প্রতি সম্মানের শিক্ষা পরিবার থেকেই দিতে হয় বলে মন্তব্য করেন দেশ গ্রুপের পরিচালক বিদ্যা অমৃত খান। তিনি বলেন, সমাজের নানা ক্ষেত্রে এখনো লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য রয়েছে। দেশের পোশাক কারখানাগুলোয় নারী শ্রমিকের সংখ্যা বেশি। কিন্তু তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ৩৫ জন পরিচালকের মধ্যে মাত্র ৩ জন নারী।

মালদ্বীপে নারী-পুরুষের বৈষম্য অনেকটা কম বলে জানান দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্সের মহাপরিচালক মরিয়ম নাসির। তিনি বলেন, তাঁর দেশে মেয়ে ও ছেলে উচ্চশিক্ষার সমান সুযোগ পায়।

নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে সুযোগের বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দেন ভারতের তিলোত্তমা ফাউন্ডেশনের পরিচালক কামাক্ষী ওয়াসন। তিনি বলেন, নারীদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সুযোগের অভাব থাকে। নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা জরুরি। প্রত্যেক সফল নারীর ক্ষেত্রেই কঠোর পরিশ্রম, বাধা পার হওয়ার গল্প আছে। এখনো পারিবারিক নির্যাতন নারীদের জন্য বড় সমস্যা।

অস্ট্রেলিয়ার ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্সের কাউন্সিল অন অস্ট্রেলিয়া অ্যান্ড লাতিন আমেরিকা রিলেশনের বোর্ড সদস্য এরিন ওয়াটসন বলেন, অস্ট্রেলিয়াতে নারী-পুরুষের মজুরিতে প্রায় ২০ শতাংশের পার্থক্য রয়েছে। পারিবারিক নির্যাতনের কারণে নারীর প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটছে ।

সুত্র, প্রথম আলো ।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading