১ মাস ১ দিনেও নিখোঁজ সাংবাদিক কাজলের কোনো খবর মিললো না——

কাজলের স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, স্বজন, বন্ধু, সহকর্মীরা ১ মাস ১ দিনেও কাজলের কোনো খবর পেলো না  ।

করোনার অনিশ্চয়তা ও আতংকের ভয়াল সময় কি কাজলের পরিবার৷ স্বজন, বন্ধুদের কাজলের জন্য চিন্তা থেকে বিযুক্ত করতে পেরেছে? না। পারবেও না।
শফিকুল ইসলাম কাজল একজন পেশাদার সাংবাদিক। ফটো তোলার নেশা থেকে পেশাদার ফটোজার্নালিস্টে পরিনত হয়েছিল। নিয় এজ, সমকাল, বনিক বার্তায় ফটো জার্নালিস্ট হিসাবে কাজ করেছে। পরবর্তীতে পক্ষকাল নামে একটি পাক্ষিক পত্রিকার ডিক্লারেশন নিয়ে পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশ করেছে। আরও পরে পাক্ষিক পত্রিকাটিকে দৈনিকে উন্নীত করে। তার পত্রিকা সরকারের মিডিয়া তালিকাভুক্ত। আর্থিক সংকটে পত্রিকাটির নিয়মিত প্রকাশ না হলেও অনলাইনে প্রকাশনা ছিল।
কাজল মেহেরপুরের মাটির সোদাগন্ধেভরা এক প্রাণবন্ত মানুষ। স্কুল ও কলেজ জীবনেই প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হয়। এরশাদ সামরিক শাসন বিরোধী ছাত্র গণআন্দলনে জানবাজি রেখে যুক্ত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনে আরও সাহসী ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়। ৯০- এরশাদের অস্ত্র ও অর্থের মদদ নিয়ে নিরু-অভিচক্র আন্দোলনের দুর্গ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ নেয়ার অভিযান চালালে যে সাহসী তরুনরা নিরু-অভিদের বিতারণ করতে সর্বাত্মক প্রতিরোধ যুদ্ধে জীবনবাজি রেখে ঝাপিয়ে পড়েছিল কাজল তাদের একজন। ৯০ এর গণ অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত উত্তাল দিনগুলিতে কাজল ছিল সামনের কাতারে।

১৯৯২ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্ব গণ আদালত গঠন ও গণ আদালত কেন্দ্রিক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জামাত শিবির নিষিদ্ধ করার আন্দোলনেও কাজল ছিল সামনে কাতারে।
ছাত্রজীবন শেষে পেশাদার সাংবাদিকতা জীবনেও কাজল ছিল দুঃসাহসী ভুমিকাই পালন করছে। ১/১১ পরবর্তী সেনাসমর্থিত সরকারকে আওয়ামী সভানেত্রী জননেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করলে তার মুক্তির দাবিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মীরা আন্দোলন শুর করলে কাজল শেখ হাসিনার মুক্তির আন্দোলনের ছবি তোলা ও দেশেবিদেশের মিডিয়ার কাছে পৌঁছে নিবেদিত একনিষ্ঠ ভুমিকা পালন করেন। সে কারণে শেখ হাসিনা কাজলকে ব্যক্তগতভাবে অসামান্য স্নেহও করেন।
বয়সে ছোট থাকার কারনে কাজল মুক্তিযুদ্ধে যেতে পারেনি, কিন্তু মানুষের মুক্তির স্বপ্নকেই লালন করে কাজ করাই তার নেশা।

বাসায় ক্যান্সার আক্রান্ত স্ত্রী, আর্থিক সংকট কাজলকে দমাতে পারে নি।

ক্যাসিনো কান্ডের পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শুদ্ধি অভিযানকে কাজল সর্বান্তকরণে সমর্থন দিয়ে ফেসবুকে লেখালেখি করেছে। পাপিয়াকান্ডের পরও কাজল ফেসবুকে লেখালিখি করেছে। সেই লেখায় বাড়াবাড়ি, আবেগের বহিঃপ্রকাশ থকতে পারে। কিন্তু কাজল চেয়েছে শেখ হাসিনার শুদ্ধি অভিযান সফল হোক। দুর্নীতি ও খারাপ কাজের সাথে যুক্ত সবার মুখোশ খুলে যাক।
মানব জমিন পত্রিকার একটি রিপোর্টের লিঙ্ক শেয়ার করা এবং পাপিয়া কান্ড নিয়ে একটি পোস্ট দেয়ায় ৯ মার্চ ও ১০ মার্চ কাজলসহ অনেকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। ১০ মার্চ সন্ধ্যা ৭টার দিকে হাতিরপুলে তার পত্রিকার অফিস থেকে নামার পর থেকে কাজল নিখোঁজ। এব্যাপারে কাজলের পরিবার থেকে চকবাজার থানায় জিডি করা হয়। পরিবার অনেক চেষ্টা করেও মামলা দায়ের করতে পারছিল না। অবশেষে হাইকোর্টের নির্দেশে চকবাজার থানা অপহরণের মামলা নিয়েছে। থানা থেকে মামলার তদন্তের সামান্যতম কোনো তৎপরতা চালানো হয়নি। মামলা পিবিআই’তে স্থানন্তরের অনুরোধ করা হয়েছিল তাও হয়নি।
কাজলের মুক্তি দাবি করে বাংলাদেশের সম্পাদক পরিষদ, BFUJ, DUJসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিবৃতি দিয়েছে। কাজলের বন্ধু স্বজন ও BFUJ-DUJ এর ব্যানারে প্রেসক্লাবের সামনে পর পর দুইদিন মানববন্ধন হয়েছে। এসব মানব বন্ধনে ৯০ এর গণ অভ্যুত্থানে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের নেতা-কর্মী ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
এমেনেস্টি ইন্টারন্যশনাল, ডেমোক্রেসি ওয়াচ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

কাজলঅকে সুস্থ্য দেহে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবির ভিতরে কোনো রাজনীনি নাই। এটা রাজনৈতিক কোনো দাবিও না। এটা কারো বিরুদ্ধে দোষারোপ করার রাজনৈতিক বিষয়ও না।
কাজল সুস্থ্যভাবে পরিবারের কাছে ফিরুক সামান্য একটু চাওয়া।

শফি আহমেদ , সাবেক ছাত্রনেতা ।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading