
হজ্জ্ব ইসলাম ধর্মাবলম্বী অর্থাৎ মুসলমানদের জন্য একটি আবশ্যকীয় ইবাদত। হজ্ব হল ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে পঞ্চম স্তম্ভ। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য জীবনে একবার হজ্ব সম্পাদন করা ফরজ। নামের শুরুতে হাজী বা আলহাজ্ব শব্দটি ব্যবহার হয়ে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। হজ্ব গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলেও আমাদের বাংলাদেশে কিছু কিছু মানুষ হজ্ব পালন করা কে ফ্যাশন ও প্রচারের( আত্ম অহংকারে) মাধ্যম হিসেবে পরিণত করেছেন।বিশেষ করে বাংলাদেশের কতিপয় ব্যাবসায়ী, রাজনীতিবিদ, মাওলানা পরিচয়ধারী ব্যক্তিসহ ইমাম, বক্তা ও পীরদের মাঝে হাজী বা আলহাজ্ব শব্দের ব্যাপক প্রচলন লক্ষণীয়। ইবাদত করেই যদি উপাধি লাগানো হয়, তাহলে দীর্ঘকাল থেকে নামাজ আদায় করলেও নামের আগে নামাজি বা মুসল্লি শব্দটি কি ব্যবহার করতে পারবে? আর যারা শুধু শুক্রবারে জুমার নামাজ আদায় করে তাদের কি জামাতি বলা হবে? অনেকে মনে করেন যে, হাজী সাহেব বললে সমাজে তার প্রভাব বেড়ে যাবে, আস্থা বাড়বে। সেই আস্থাকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসায় প্রতারণার জাল ফেলবে, মানুুষ তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে থাকবে, এমন নিরর্থক চিন্তা করা নিতান্তই বোকামি ছাড়া কিছু নয়। আমি মনে করি নামের আগে হাজী ও আলহাজ্ব শব্দ ব্যবহার করাটা অধিকাংশ সময় অহংকারের ব্যবহারিক রূপ। সওয়াবের পরিবর্তে যদি পাপ হয় তাহলে অর্থ, সময় ও জীবন সবই নিষ্ফল। অথচ অহংকার সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ কোনো আত্ম-অহংকারী দাম্ভিক মানুষকে ভালোবাসেন না।” (সূরা লোকমান: ১৮)। “নিশ্চয়ই আল্লাহ দাম্ভিক আত্ম-গর্বিত ব্যক্তিকে কখনো পছন্দ করেননি।” (সূরা নিসা: ৩৬)। হাদিস শরীফে বলা হয়েছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করীম (স.) বলেছেন— যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না। ইসলামে কি এমন কোন বিধান আছে যে, হজ্ব করলেই নামের আগে হাজী বা আলহাজ্ব ব্যবহার করতে হবে? তা হলে রাসুল (স:) কেন নামের আগে হাজী ব্যবহার করেননি? কেন চার খলিফার একজনও নামের আগে হাজী ব্যবহার করেননি? (সূরা আল ইমরান: ৩১ ও সূরা হাসর: ৭) এই আয়াতে স্পষ্ট লেখা আছে যে, আমাদের কে অনুসরন করতে হবে আল্লাহ ও রাসুল(স:)। কিন্তু আমরা কি করছি? হজ্ব একটি ইবাদত তা যেন ভুলে যেতে বসেছি। হজ্ব কবুল হওয়ার অনেক শর্ত রয়েছে। সে সব শর্তের দিকে ভ্রূক্ষেপ নেই। যারা হজ্ব করতে যাবেন তাদের এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। প্রত্যেক ইবাদতের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ইবাদত কবুলের শর্তসমূহ পূরণ করলে আশা করা যায় আল্লাহর কাছে ক্ষমা পাওয়া যাবে। শুধু নামের আগে পিচে হাজী বা আলহাজ্ব টাইটেল উপাধি পাবার জন্য হজ্ব নয়, হজ্ব হবে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। আল্লাহ আমাদের অহংকারমুক্ত করে ইবাদত করার তৌওফিক দিন। আমীন।
লেখক: আবু জাফর শিহাব