লিনজ্ শহর থেকে পেয়ারগ্ মাতহাওজেন কনসেন্টট্রেশন চেম্বার মাত্র ২৪ কিলোমিটার দূরে , গাড়িতে যেতে সময় প্রয়োজন মাত্র ১০ মিনিটের মত। এই ঐতিহাসিক চেম্বারটি জার্মানিদের অনেক বড় বড় চেম্বারের একটি । ছোট্ট করে এর ইতিহাস, ১৯৩৮ সালের ৮ই আগুস্ট তৈরি হয় এবং ১৯৪৫ সালের ৫ই মে ইউ এস আমেরিকান বাহিনী দ্বারা এই বিভৎস্ব কনসেন্টট্রেশন চেম্বারের সমাপ্তি ঘটে । ইতিহাস সাক্ষী এই একটি চেম্বারেই ১০০,০০০ লক্ষ্যো মানুষের প্রান হানি ঘটে । অস্ট্রিয়ায় এই কনসেন্টট্রেশন চেম্বারটি ১৯৪৭ সালে থেকেই ঐতিহাসিক স্মৃতি হিসেবে অতি যত্নকরে ইহার ঐতিহাসিক মূল্যায়ন রক্ষন করা হইয়াছে । এই চেম্বারে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অনেক বড় বড় বসদের দায়িত্ব পালনের ইতিহাস আছে । তবে মূলত হিটলারের ডান হাত হিসেবে হেনরিখ্ হিমলারই ছিলেন বস্ দের বস্ । ইতিহাসের একজন জঘন্য তম ব্যক্তিদের একজন । এই চেম্বারের ভিতরে বিভৎস্ব ভাবে কিভাবে লাখো মানুষের প্রাণ বিলিন করা হইয়াছে সে ইতিহাস এই দেশের বয়স্ক মানুষেদের চাক্ষুষ সাক্ষী এবং ইতিহাসের অংশ থেকে কোনো এক সুবিধা জনক সময়ে লিখার ইচ্ছা আছে। ছোট্ট করে শুধু বলি এই চেম্বার থেকে বেঁচে আসা একজন বয়স্ক ভদ্রলোকের নিজের মুখের কথা ” ক্ষুধার্ত মানুষেরা কি ভাবে মৃত মানুষের মাংস খেয়েছে! ” সেই ইতিহাস একসময় বলবো।
ছোট্ট করে বললে বলা যায় মক্কার মানুষ হ্জ্জ পায় না । পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের লাখো মানুষ এই চেম্বারটি দেখার জন্য আসে । হাজারো বাঙালির বসবাস এই অস্ট্রিয়ায় , ঐতিহাসিক চেম্বারটি কতজন দেখেছেন আমি সঠিক ভাবে বলতে পারবো না । তবে অনেকের সাথে আলাপচারিতায় দেখিছি ইচ্ছা বা আগ্রহ একেবারেই অনুপস্থিত । আমেরিকা থেকে মিশুর বন্ধু সাহারিয়া এবং রুবেল গত কয়েক বছর আগে অস্ট্রিয়ায় ঘুরতে এসেছিল । চমত্কার মনের মানুষ । তাদের সাথে আমার পরিচয়ের একপর্যায়ে বলেছিলাম অস্ট্রিয়ায় কয়েক দিন থাকার জন্য যখন এসেছেন , এখানকার ঐতিহাসিক কিছু বিষয় আছে যা দেখাটাও একটা সৌভাগ্যোর ব্যাপার ।অনেকে চেয়েও পারেন না । তাদের উওর কি ছিল নাই বা বললাম, শুধু বলি আমি অবাক হয়ে চেয়েছিলাম । অথচ তাদের সাথে কথাবার্তায় বাংলাদেশ পৃথিবী থেকে কত বছর পিছিয়ে আছে বা তাদের ভাষায়, আমাগো বাঙালিগো জিন্দিগিতেও অইবো না হ ইত্যাদি ! বা বাংলাদেশ কত……কি !!
এই কথাটা বলার কারণটা বলি। আমি আর মিশু একসময় একসাথে ব্যাবসা করতাম । আমাদের হিসেব নিকেসের চাটার্ড একাউন্ট্ কম্পানির নাম ছিল মার্শ । সেই কম্পানির প্রধান ভদ্রলোকের নাম ছিল ক্রয় । শিক্ষিত এবং মার্জিত, ওনার জ্ঞানগরিমার পরিমাণ আমাকে অবাক করে দিয়েছিল ।সেই ভদ্রলোক একদিন কথাবার্তায় আমাদের দেশের নানান বিষয় ওনার এত নখদর্পণে শুনে আমি হতভম্ব হইয়াছিলাম । শিক্ষিত জনেরা সত্যিই পৃথিবীর অনেক খবর রাখেন। উনি ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস সাহেবের ব্যক্তিগত উদ্বেগে গ্রামীণ ব্যাংকের উৎপত্তী হইতে শুরু করিয়া ,মাননীয় হাসিনা/ মাননীয় খালেদার একটা মুসলিম দেশের দীর্ঘদিনের ক্ষমতায় থাকা বা দেশ চালানোর চমত্কার সব প্রশংসা আমায় করেছিলেন । এখন ওনার সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই , মাঝে মাঝে ভাবি উনি হয়তো খুব ভালো করেই জানেন আমারা কি ভাবে পৃথিবীর সম্মানিত মোহাম্মদ ইউনুস সাহেব কে আবার অপমানিত ও’করি । এই ভদ্রলোক একদিন কথায় কথায় বলেছিলেন, দেখ আমাদের ইউরোপে যে গণতন্ত্র তুমি দেখো এর জন্য আমাদের অন্তত ৫০ লাখের বেশি মানুষকে রক্ত দিতে হয়েছে । এখানেই ওনার মাতহাওজেন চেম্বারের কথা । ওনার জিজ্ঞাসা তুমি মাতহাওজেন চেম্বার দেখেছো কিনা ? আমার উওর কয়েকবার । তখন উনি আমায় কিছু ছোটো কাহিনি শোনালেন এবং সাথে এও বললেন আমি সুযোগ পেলেই সেখানে যাই , উপলব্ধি করার চেষ্টা করি , কত কস্টে আমাদের লাখো মানুষেরা এই জায়গায় প্রাণ দিয়ে আমাদের জন্য একটা সুন্দর জীবন রেখে গেছেন । আজ অনেকেই তা অনুধাবন করতে পারে না ।ওনার ভাষায় ইতিহাস মানুষের মাঝে সবসময় জীবিত রাখতে হয় । তাই বলছিলাম জীবনে কে কি গিলবে বা না গিলবে তা একান্তই নিজের ব্যাপার । তবে কেও ইতিহাসের কিছূকে অবজ্ঞা করলে সে নিজেকেই অবজ্ঞা করে ।
তবে এর উল্টো কাহিনি বলি । গত বছর দুয়েক আগে বন্ধু লুতফর হায়দার (বাবলু) তার এক আত্মীয় স্বামী/ স্ত্রী জাভেদ আর সুপ্তি দুজনেই কাতার প্রবাসী । দুইজনই কাতার এয়ারলাইন্সের এয়ার হোস্টেজ । ইউরোপ টুড়ে এসেছিল । চমত্কার একটা কপল।ওদের সাথে আমার প্রথম পরিচয়েই বলেছিল আমরা মাতহাওজেন কনসেন্টট্রেশন চেম্বার সমন্বে অনেক শুনেছি আপনার সাথে সেখানেই প্রথম যেতে চাই । ওদের একদিন , সারাদিন সেখানে নিয়ে ঘুরেছিলাম ।অনেক ছবি তোলা ,সাথে ওদের ইতিহাস নিয়ে আগ্রহ আমাকে বিমোহিত করে । ওদের আমার ভীষণ ভালো লেগেছিল, জাভেদতো আমায় এমন ভাবে মামা ডাকে যেন আমিই ওর মামা আমার বন্ধু বাবলু ওর দূরের মামা। ওদের সুন্দর জীবন কামনা করি।
আর একটি পরিবারের কথা বলবো আজ । কেবলই মাস ছয়েক আগের কথা । লিন্জ শহরের পিচ্চি বাবুল আর রুমি এই দুই ভায়রা ভাইয়ের আর এক ভায়রা ভাই জনাব তোফায়েল এবং ওনার স্ত্রী ফেরদৌসির সাথে ওনাদের দুইটি চমত্কার ছোটো মেয়ে বাংলাদেশ হতে অস্ট্রিয়ায় বেড়াতে এসেছিল । (মেয়ে দুটোর নাম এই মূহুর্তে মনে করতে পারছি না) ওদের সাথে আমার পরিচয়টা ছোট্ট একটি ঘটনার মধ্যে দিয়ে, সেটা আজকের বিষয় নয়। ওদের কে নিয়ে মাতহাওজেন কনসেন্টট্রেশন চেম্বার ঘুড়ে এসেছিলাম । ওদের আগ্রহ দেখেও ভীষণ ভালো লেগেছিল । ওদের বড় মেয়েটি বেশ ভালো জ্ঞানের অধিকারী, বয়স কেবল মাত্র ১৪ ।তার জানাশোনা আমাকে অবাক করেছে।এমনকি তার প্রশ্ন গুলোর মানও আমায় মূগ্ধ করে। মেয়েটিকে আমি লক্ষ্য করেছি ইংরেজিতে টেন্শলেসন করা লেখা এবং অডিও গুলো কি আকর্ষণ নিয়ে পড়া বা শোনা । মেয়ে টি দেশে ইংরেজি ইস্কুলে পড়াশোনা করে বিধায় ওর জন্য একটু সুবিধাও হচ্ছিলো। আমার ধারণা থেকে বলছি মেয়েটির ভবিষ্যত অনেক উজ্জ্বল । যদি সঠিক মনে করতে পারি ছোটো মেয়েটির বয়স ১০ এর কাছাকাছি ।(দুঃখিত চমত্কার মেয়ে দুটোর নাম ও বয়স ঠিক মনে করতে না পারায়) ।ছোটো মেয়েটি ভীষণ চঞ্চল এবং ভারি মিষ্টি । সারাক্ষণ সাথে সাথে চলা ও মজার মজার জিজ্ঞাসা । একটা সুন্দর দিন ওদের সাথে কাটাতে আমারও ভীষণ ভালো লেগেছিল । পাশাপাশি তোফায়েল সাহেব যেমন অমায়িক ওনার গিন্নি ফেরদৌসির বাংলা ভাষার দক্ষতা আমাকে মুগ্ধ করেছিল । ওনাদের সকলের সুন্দর ভবিষ্যত কামনা করি ।
আজ আমার একটি কবিতার দুটো লাইন দিয়ে শেষ করবো
ইতিহাস তুমি কি
কেবলই পাতায় পাতায় ?
তোমায় তো ধরিনি বক্ষে !
পাইবো কি ক্ষমা
হইবে কেমনে যদি না তোমায় রাখি
ভবিষ্যতের লক্ষ্যে ।
বুলবুল / অস্ট্রিয়া , লিন্জ ।