গ্রাম অঞ্চলে রশি দিয়ে কোনো কিছুকে বাঁধতে হলে একপ্রকার গিট্ঠু দেওয়া হয় যার নাম সরকারি গিট্ঠু। অর্থাত্ বলা যায় রশি দিয়ে একপ্রকার বিশেষ গিট্ঠু দেওয়া। রশিতে গিট্ঠুটি কিভাবে দেওয়া হয় তা লিখে দিলেও, রশিতে সেই গিট্ঠু দেওয়া অনেকের পক্ষেই সম্ভব হবে না । কেননা এটা একটি বিশেষ প্রক্রিয়া বা কৈশাস , যা কিনা কেবলমাত্র চর্চার মাধ্যমেই সম্ভব । রশির এই সরকারি গিট্ঠু শেখানো আমার উদ্দেশ্য না। আমি যা বলবো তা হলো রশির এই সরকারি গিট্ঠুর উপকারীতা বা ফলাফল কতটুকু কার্যকর । রশিতে কোনো কিছু বেঁধে রাখার মূল উদ্দেশ্য সাধারণত হয় , যেন কোনো প্রকারে সেই বাঁধা অংশটি সহজে না খুলে যায় । আর রশি দিয়ে কোনো কিছু সরকারি গিট্ঠু দিয়ে বাঁধলে , তার সুবিধে বা উপকারীতা হলো , রশিতে যত জোরে টান পরবে গিট্ঠুটি ততটাই শক্ত হবে কিন্তু রশি ছিঁড়বে না। আবার সময় মত কখনো সেই গিট্ঠু যদি খুলতে হয় , তাহলে রশির এক অংশ ধরে টান দিলেই অনায়াসে গিট্ঠুটি খুলে যাবে। সম্ভবত এই কারণেই এই বিশেষ প্রকারের বন্ধন কে সরকারি গিট্ঠু বলা হয় । কেননা সরকারি মাল সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে হয় , আবার কোনো ক্ষতিকরও যেন না হয়।
সত্যি বলতে সরকারের হাত অনেক লম্বা হয়, সরকার চাইলে পারে না এমন কোনো কাজ সম্ভবত নাই। শুধুমাত্র সরকারের সদিচ্ছার উপর নির্ভর করে।
সরকারের সকল কর্মকর্তা/ কর্মচারী সকলেই আসলে সরকারের রশিতে বাঁধা থাকে। বলা যায় সরকারি রশির সেই বিশেষ গিট্ঠুর মধ্যেই থাকে। এখন প্রশ্ন হলো সরকার কতটুকুন টান দিবেন বা খুলে দিবেন , তার উপরেই সব নির্ভর করে। সরকারি গিট্ঠুর হাজারো উদাহরণ দেওয়া যাবে । একটা উদহারণ বলি , যেমন ডাক্তাররা গ্রামে যেত চায় না। আচ্ছা , সরকার যদি তার রশিটি জোরে টান দেয় , ডাক্তাররা শুধু কি গ্রাম (!)আমার তো মনে হয় জঙ্গল কিংবা পাহাড়েও চলে যাবে।
সরকারের হাত যেমন লম্বা, তার রশিটিও অনেক লম্বা । আর রশির গিট্ঠু আমাদের সরকার গুলো ইচ্ছা বা নিজের সুবিধা মতো খুলে আবার ব্যবহার করে। এখানেই হয় শত সমস্যা ।
যেমন , একেবারে সদ্ব্য ঘটিত একটি উদহারণ , গতকালই মন্রীপরিষদের অনেক রদবদল হলো। সরকারের মন্ত্রীপরিষদে রদবদল হবে , এটাতো নিতান্তই নিয়মতান্ত্রিক কার্যক্রম , সেটা নিয়ে মোটেও প্রশ্ন নেই। প্রশ্নটি হলো ভিন্ন জায়গায় । সরকারের ক্ষমতার মেয়াদ সর্বকালীন আর মাত্র এক বছর খানেক বাকি আছে। মাত্র এক বছরে একজন মন্ত্রী একটি মন্রণালয়ের কি এমন করে ফেলবে ? নাকি এই মন্রীরা হাতে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ নিয়ে আসছেন?
প্রশ্নটি কেন তোলা ।
লক্ষ্যণীয় যে বর্তমানের রদবদলটি ( হতে পারে কাকতালীয়, তবে সরকার এত বোকা না ) কেবলমাত্র জোট সরকারের শরিক মন্ত্রীদের মন্রণালয়ের । ধারণা করি সরকার এখানে তার সরকারি রশিটি একটু ভিন্ন ভাবেই ব্যবহার করেছে। সরকার তার সুবিধা অনুযায়ী করুক তাতেও কারো আপত্তি থাকার কথা নয়।
* আপত্তিটি ভিন্ন জায়গায় । যেমন , পানি সম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ পেয়েছেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় , ঠিক তার উল্টো পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পেয়েছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় !! তাহলে বিষয়টি কি দাঁড়ালো?
* অর্থাত্ এই দুই মন্রীরা তাদের মন্ত্রণালয়ের জন্য যোগ্য ছিলেন না। যদি তাই হয়( !) তাহলে এটা কি বুঝতে চার বছর সময় লাগলো ?
* আর যদি একটি মন্রলায় চার বছরেও ভালোভাবেই না চালাতে পারে , তাহলে এক বছরে ভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কিডাবে যোগ্য মন্ত্রী হবেন ?
* প্রশ্নটি কেনো তুললাম ।
কেননা এই পরিবর্তনের মাঝে মৎস ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা নারায়ণ চন্দ্র চন্দকে ওই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাহলে অন্তত বলা যায় এই প্রতিমন্ত্রী একজন কাজের মানুষ বটে। ওনাকে যোগ্য হিসেবেই উপরে উঠানো হয়েছে নিশ্চয়ই ।
* পৃথিবীতে কোন দেশে শুধুমাত্র এয়ারলাইনস এর জন্য মন্ত্রী আছে , আমার সঠিক জানা নাই । তবে আমাদের দেশে এই উড়জাহাজের জন্য সব সরকারের আমলেই একজন পূর্ণ মন্ত্রী দায়িত্ব পালন করেছেন। অবশ্য বর্তমানে উড়জাহাজের সাথে পর্যটন যোগ করা আছে।
বলাই বাহুল্য তারপরেও সহিছালামতে আমাদের বিমানের অবস্থা হ য ব র ল ! আর পর্যটনের কথা নাই বললাম ।
* আবার গর্ব করে বলাই যায় , এবার এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন দীর্ঘ চার বছর একজন কমরেড। এই কমরেড সাহেব বিমান কে কোন অবস্থায় রেখে গেলেন , সেটা মোটামুটি সকলেরই জানা। আজকে ফেসবুকে কেউ একজন কমেন্টস করেছেন , কমরেড রা এখন ” কম রেট ” ( কম মূল্য)হয়ে গেছে !
সেই কম রেটের ব্যক্তি টিভির কোনো এক চ্যানেলএ নিজেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উওরে বললেন ” এটা কে ডিমোশন না বলে বলতে পারেন , আমাকে আকাশ থেকে মাটিতে আনা হয়েছে ” ! কম রেট সাহেব নিজেই স্বীকার করেল ওনার মূল্য কমে যাওয়ার কথা ! এখন দেখা যাক বাহির থেকে আসা নতুন মুখ শাহজাহান কামাল সাহেব বিমানকে কত উচ্চতায় উড়াতে পারেন। আর কম রেট সাহেব সমাজ কল্যান মন্ত্রণালয়ের কতটুকু কল্যাণ এক বছরে করতে পারেন ।
* তথ্যপ্রযুক্তির মন্ত্রী ইনু সাহেব একবার জোট সরকারের মূল্য বুঝাতে নিজেকে দুআনা বলে উল্লেখ করেছিলেন। তবে বলাই যায় দুআনার মূল্য একেবারে ফেলনা না। কেননা উনার মন্ত্রণালয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অবশ্য প্রতিমন্ত্রী নিজের আক্ষেপ কে লুকিয়ে রাখেননি। এখন সামনের এক বছর উনি দুআনা মন্ত্রীর সাথে কতটুকু খাপ খাইয়ে নিতে পারেন । অন্যদিকে তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোস্তাফা জব্বার সাহেব এক বছর কেই অনেক সময় ভাবছেন ( অবশ্য কম নয়) । আর কাজী কেরামত আলী সাহেব কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী । দেখা যাক মাদ্রাসা ভবিষ্যতে কোন দিকে মোড় নেয়, সময়ই সব বলে দিবে।
তাই বলছিলাম , সরকারি রশি , সরকারি গিট্ঠু দেখা যাক টাইট হয় না খুলে ।
বুলবুল / অস্ট্রিয়া , লিন্জ।