আজ থেকে প্রায় কয়েক বছর আগে পৃথিবীর এক দেশে পৃথিবীর সেরা বুদ্ধিজীবি হিসেবে খ্যাতরা এক প্রহসনের বিচার শুরু করলেন।আসামী একসময়ের বিরাট প্রভাবশালী লোক।প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে আসামীকে বিচারক ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুর আদেশ দিলেন।আসামী বিচারকের সামনে দাঁড়ালেন।বিচারকের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমার একদিনের কথা এখনো মনে পড়ছে,আমি এক লোককে বিচারপতি নিয়োগ দিতে চাইলাম।দেশের সব বড় বড় এমপি,মন্ত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণের অনেকে আমাকে জানালো এই লোককে বিচারক নিয়োগ না দেয়ার জন্য।সবার প্রতিউত্তরে আমি বলেছিলাম,এই লোক সৎ ও সত্যের পথে নির্ভীক,এ কখনো সত্য থেকে ঠলবে না।“
আজ আমি পরিস্কার দেখতে পাচ্ছি,আমার সিদ্ধান্ত কিভাবে ভুল প্রমাণিত হল।আমার দেশে বসে,আমারই নিয়োগ দেয়া বিচারপতি,আমাকে বিনা অপরাধে ফাঁসির আদেশ দিলো,হায় দুঃখ,দুঃখ রে।
যার কথা আমি এতক্ষণ বললাম তিনি হলেন ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন।আমি আজ পর্যন্ত যত লেখা এই লোকটাকে নিয়ে লিখেছি,একটাও তার পক্ষ নিয়ে লেখিনি।সবগুলাতেই তার মারাত্মক বিরোদ্ধাচরণ করেছি।
একবারের ঘটনা।যখন তাকে ফাঁসি দেয়ার জন্য জেলের কক্ষ থেকে বের করা হবে তখন সাদ্দাম হোসেন কারাগারের প্রহরীর কাছে কোট চেয়েছিলেন।প্রহরী জিজ্ঞেস করেছিল কেন স্যার? তিনি উত্তরে বলেছিলেন,বাইরে এখন প্রচন্ড ঠান্ডা।আমি যখন তোমাদের সাথে গাড়ি দিয়ে ফাসি’র মঞ্চে যাবো,তখন গাড়িতে যদি একবারও আমার শরীর ঠান্ডায় কেঁপে উঠে,তখন সবাই ছড়াবে একসময়ের মুসলিম বিশ্বের সিংহ সাদ্দাম হোসেন মৃত্যুর ভয়ে কেঁপেছে।আমি কাউকে এই কথা বলার সুযোগ দিতে চাই না।
সাম্রাজ্যবাদের দালালী করা এবং ইরান,কুয়েতের বিরুদ্ধে কোনো কারণ ছাড়া যুদ্ধ করাই সাদ্দাম হোসেনকে পৃথিবীর অন্যতম স্পেসিয়াস নেতা হওয়া থেকে আটকিয়ে দিয়েছিল।এই দুইটি বড় ভুল ছাড়া তার জীবনে খুব কম ভুলই তিনি করেছিলেন।কিন্তু যখন তিনি তার ভুল বোঝতে পেরেছিলেন,তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে।তার এতো বড় মানচিত্রের দেশ তার কারণেই মৃত্যকূপে পরিণত হয়ে অন্যের দখলে চলে গেছে,তার সাথে তখন আর কেউই ছিল না।
কয়দিন আগে তার মৃত্যুবার্ষিকী ছিল,আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম যে রয়টার্স,টাইমস সহ বড় বড় ম্যাগাজিন একসময় সাদ্দাম হোসেনকে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর মানুষ হিসেবে প্রকাশ করেছিল,আজ তারা কেউই উল্লেখ করার মতো কিছু বলে নি।
আজ কোথাও কেউ নেই।হায় সময়,তুমি কারো নও।
লেখকঃ মোঃ শাহিন আহমদ রিয়াদ