বর্তমান সরকারের দুঃশাসন থেকে বাঁচতে জনগণকেও লড়াই-সংগ্রামে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, আগামী দিনে দুই-তিন রকমের কর্মসূচি দেবে গণতন্ত্র মঞ্চ। এই সরকারের শেষ না দেখা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

সরকার প্রধান এবার বিদেশ সফর করে সুবিধা করতে না পেরে ভুলভাল বলছেন। প্রতিবার যখন বিদেশ সফর করে আসেন তখন সংবাদ সম্মেলন করেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মহা ধুমধাম করে দেখা করেন। কিন্তু এবার এসব করছেন না। কারণ কি? বিদেশিরা এবার আর ভোট ডাকাতির নির্বাচন দেখতে চায় না। তারা বলছেন সরকার যেহেতু দাবি করছেন তারা দেশের বহু উন্নয়ন করছেন। উন্নয়নের রোল মডেল দাবি করছেন। সেই কারণে বিদেশিরা এবার বলছে, তাহলে নির্বাচনটাও রোল মডেল করা হোক। মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে পদত্যাগ করে দ্রুত অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার আহ্বানও জানান এই নেতা।

তিনি বলেন, কোনো দলীয় সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাবো না। যারা যাবেন তারা দেশের জনগণের কাছে জাতীয়  বেঈমান হিসেবে চিহ্নিত হবেন। শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটে শুরু হওয়া সমাবেশে মাহমুদুর রহমান মান্না এসব কথা বলেন। বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করে গণআন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। মঞ্চের নেতারা বলেছেন, আন্দোলন আসন্ন, আর তা কেবল ক্ষমতার বদল নয়, বরং রাষ্ট্র সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে। 

এ সময় নেতারা সরকার ও শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান, অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা পূরণের দাবি জানিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বক্তব্য দেন। এতে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক এডভোকেট হাসনাত কাইয়ুমের সভাপতিত্বে এতে  উপস্থিত আছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক সাইফুল হক, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, নাগরিক ঐক্যর সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ্ কায়সার, জেএসডি’র সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বাংলাদেশ ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে পল্টন মোড় থেকে প্রেস ক্লাবের দিকে আসার সড়কটি বন্ধ করে দেয় পুলিশ। এ কারণে পল্টনের দিকে হালকা গাড়িজটের সৃষ্টি হয়। সমাবেশে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আপনাকে ক্ষমতায় রেখে বিরোধী দল কোনো নির্বাচনে যাবে না। বেশি খারাপ পরিণতি না চাইলে ক্ষমতা থেকে সরে যান। ডিসেম্বরের মধ্যে গায়ের জোরে নির্বাচন করবেন, এবার সেটা আমরা হতে দেবো না। হয় যান, নয় নিদারুণ পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকুন।

গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, গত ১৪ বছরে এত পাপ করেছেন, তা আপনাদের নৌকা আর সেই বোঝা বহন করতে পারবে না। বুড়িগঙ্গায় ঝাঁপ দিয়েও নিজেদের রক্ষা করতে পারবেন না। সিরাতাল মোস্তাকিমের পথে (সোজা পথ) হাঁটুন। ফন্দি আঁটছেন আরেকটি তামাশার নির্বাচন করার জন্য। এই চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিন। মানুষ এখন রাজপথে নেমে এসেছে। এসব স্বপ্ন আর বাস্তবায়ন হবে না। বিরোধী দলের প্রতি সাইফুল হক বলেন, আমরা যারা বিরোধী দলে আছি, যারা-যারা যুগপৎ আন্দোলনে আছি তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, তীরে এসে যেন তরী না ডুবে। সব সংকীর্ণ চিন্তা পরিহার করে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এ সময় বিরোধী দলগুলোকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান সাইফুল হক। গণঅধিকার পরিষদের মঞ্চ ত্যাগের বিষয়ে সাইফুল হক বলেন, আমাদের মঞ্চ ছেড়ে গেছে একটি দল। তারা কেন চলে গেল, জানি না। আন্দোলন যখন চলে তখন নানা ধরনের ঘাপটিবাজরা, সুবিধাবাদীরা থাকে। আগামী কোরবানির ঈদে কোরবানির পশুর মতো ঘাপটিবাজদের কোরবানি হয়ে যাবে।

ক্ষমতাসীন সরকারের উদ্দেশ্যে জোনায়েদ সাকি বলেন, মানুষের মন যদি বোঝেন, তাহলে আসন্ন গণঅভ্যুত্থান ঠেকাতে পারবেন না। যারা যারা মনে করছেন, ঘরে বসে থাকবেন, তাদের বলছি, মানুষ ঘরে-ঘরে গিয়ে ধাওয়া দেবে। সেজন্য প্রস্তুত থাকেন। জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সাকি বলেন, আন্দোলনের প্রস্তুতি নিন, মাঠে আপনাদের নামতেই হবে। দেশের ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছি। মাত্র একটি পরিবারের স্বার্থ রক্ষার জন্য তারা পুরো দেশকে বিভাজিত করে রেখেছেন। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্বাচনকালীন সরকার প্রসঙ্গে দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে সাকি বলেন, ‘এখনই আপসের কথা আসছে, এখনও তো আন্দোলন শুরু করিনি। চলমান এই আন্দোলন কেবলমাত্র ক্ষমতার পরিবর্তন নয়, উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘বিএনপিসহ সব বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান থাকবে, কোনোভাবে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করবেন না। এ দেশের গতিপথ নির্ধারিত হয়ে গেছে। এই সরকারের পদত্যাগ করতেই হবে। ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে হবে। ‘যারা মনে করেন, ক্ষমতায় গিয়ে এসব সংস্কার ভুলে যাবেন, তাহলে জনগণ সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দেবে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading