আধুনিক জীবনযাত্রা, পরিবর্তিত খাদ্যাভ্যাস ও সময়ের অভাবই আমাদের শরীরে ডেকে আনে নানা রোগব্যাধি। বিশেষজ্ঞদের মতে, যত বেশি প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়ছি আমরা, ততই অসুখ কামড় বসাচ্ছে শরীরে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র সমীক্ষা অনুযায়ী, ওবেসিটি, কোলেস্টেরল, থাইরয়েডের মতো সমস্যা বাড়ছে বিশ্বজুড়ে। আর সেসব রোগের হাত ধরে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হৃদরোগর ঝুঁকিও।

সংবাদপত্রে চোখ রাখলেই আচমকা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর। ১৮ থেকে ৬০—সব বয়সীদেরই কাবু করছে সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক বা সাইলেন্ট অ্যাকিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন (এসএএমআই)। গত বছর কেকে, সিদ্ধার্থ শুক্লা, সিদ্ধার্থ সূর্যবংশী, রাজু শ্রীবাস্তবের উদাহরণ মৃত্যুভীতি তৈরি করছে অল্প বয়সীদের মনে।

প্রতিদিনের রুটিনের বেশ কিছু ভুল আমাদের ঠেলে দিচ্ছে হৃদরোগের দিকে। কিছু ভুল আমরা জেনে বুঝে করছি, কিছু অভ্যাসের কুপ্রভাব অজান্তেই মারণরোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। তবে এ বছর যা যা অনিয়ম করেছেন, সে সব ক্ষতি পুষিয়ে দিতে পারেন আসন্ন বছরে আর একটু যত্নবান হয়ে। জীবনশৈলীতে কী কী পরিবর্তন আনলে হৃদরোগের আশঙ্কা কমবে?

হার্টের যাবতীয় অসুখবিসুখকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ। এই রোগের ঝুঁকি কাদের বেশি, তাকে দু’ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথম ভাগ হলো ‘নন-মডিফায়েড রিস্ক ফ্যাক্টর’ অর্থাৎ চাইলেই আমরা পরিবর্তন করতে পারব না। এ ক্ষেত্রে যাদের বাবা-মা কিংবা পূর্বপুরুষদের হৃদরোগের ইতিহাস রয়েছে, যাদের বয়স বেশি— তাদের ক্ষেত্রে হৃদরোগের ঝুঁকিও বেশি। চাইলেই এই ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব নয়। দ্বিতীয় ভাগ হলো ‘মডিফায়েড রিস্ক ফ্যাক্টর’ অর্থাৎ যা চাইলে পরিবর্তন করা যায়। মূলত ‘মডিফায়েড রিস্ক ফ্যাক্টর’ নিয়েই আলোচনা করা হবে।

হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে যে নিয়মগুলো মেনে চলা জরুরি

১. হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে সবার আগে ধূমপান একেবারে ছাড়তে হবে। ধূমপান ও তামকজাত কোনো দ্রব্য হার্ট অ্যাটাক হওয়ার অন্যতম বড় কারণ। এর পাশাপাশি মদ্যপানেও লাগাম টানতে হবে।

২. যার যত ওজন বেশি, তার হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। উচ্চতা অনুযায়ী আপনার ওজন আদৌ কত হওয়া উচিত, তা জেনে নিন। ওবিসিটির সমস্যা থাকলেই মুশকিল! ওজন কমানোর জন্য ডায়েটের ওপর নজর দিন। কার্বোহাইড্রেট খাওয়া কমাতে হবে, খেলেও রিফাইন্ড কার্বোহাইট্রেট অর্থাৎ সাধারণ পাউরুটির বদলে ব্রাউন ব্রেড, ময়দার রুটির বদলে আটার রুটি খেতে পারেন। ডায়েটে বেশি করে শাকসবজি ও ফল রাখতে হবে। অল্প অল্প করে বার বার খান। বাইরের খাবার নয়, বাড়িতে তৈরি খাবার খান। ভাজাভুজি, প্রক্রিয়াজাত খাবার, রেডমিট এড়িয়ে চলুন। খাবারে লবণ ও চিনির পরিমাণ কমিয়ে আনুন।

৩. সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন শরীরচর্চা করতেই হবে। ৭ দিন করতে পারলে খুব ভালো। ভারী শরীরচর্চা না করলেও রোজ অন্তত পক্ষে আধঘণ্টা দ্রুতগতিতে হাঁটতে পারেন। সঙ্গে কিছু হালকা ব্যায়াম করলেও হবে।

৪. পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে নানা বিষয় নিয়েই আমরা অত্যধিক চাপে থাকি। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি তো বাড়েই, সেই সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ, বেশি খাওয়া, ধূমপান, ঘুমের সমস্যা, ক্লান্তি দেখা দেয়। সেই জন্য কোনো ধরনের মানসিক চাপ বা উদ্বেগকে প্রশ্রয় না দেওয়ার চেষ্টা করুন। মনোসংযোগ বাড়াতে ধ্যান করতে পারেন। বই পড়া কিংবা গান শোনার অভ্যাস থাকলে, সেগুলোও চাপমুক্ত করতে সহায়তা করে। কাজের সময় বেঁধে দিন। অফিসের কাজ বাড়ি বয়ে আনবেন না। অবসরে নিজের পছন্দের কাজ যেমন ঘুরতে যাওয়া, ছবি তোলা, সিনেমা দেখার ওপর জোর দিতে পারেন।

৫. রাতে ঠিকমতো ঘুম না হলে কিন্তু হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। ফলে স্ট্রোক, হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিয়মিত যদি ঠিকমতো ঘুম না হয়, তাহলে রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ ভালোমতো হয় না। কাজেই শরীর তখন স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ ঘটায়, যার ফলে হৃদরোগের আশঙ্কা থাকে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading