যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মঙ্গলবার তার দ্বিতীয় স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন ভাষণে বলেন, আমেরিকার কাহিনী সবসময়ই অগ্রগতি এবং স্থিতিস্থাপকতার কাহিনী। তিনি তার ভাষণে রিপাবলিকান বিরোধীদের একসাথে কাজ করার আবেদন জানিয়ে দেশের অর্থনৈতিক নীতির উপর সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ করার প্রতি জোর দিয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে বলেন, দুই বছর আগে, কোভিড আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়েছিল, আমাদের স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দিয়েছিল, এছাড়া কোভিড আমাদের অনেক কিছুই লুট করে নিয়েছিল।

তিনি বলেন, কিন্তু আজ, কোভিড আর আমাদের জীবন নিয়ন্ত্রণ করে না।

তিনি আরো বলেন, এবং দুই বছর আগে, আমেরিকান গৃহযুদ্ধের পর আমাদের গণতন্ত্র সবচেয়ে বড় হুমকির সম্মুখীন হয়েছিল। কিছুটা ক্ষত-বিক্ষত হলেও, আজ আমাদের গণতন্ত্র ঠিকই অবিচল এবং অটুট রয়েছে।

বাইডেন বলেন, আমি আমার রিপাবলিকান বন্ধুদের বলতে চাই, যদি আমরা বিগত কংগ্রেসে একসাথে কাজ করতে পারি, তাহলে এই নতুন কংগ্রেসেও আমাদের একসাথে কাজ করার এবং ঐকমত্য খুঁজে না পাবার কোনো কারণ নেই।

বাইডেন বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতি বজায় রাখার জন্য, যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোত্তম অবকাঠামো প্রয়োজন। তিনি বলেন, সর্বোত্তম মানদণ্ড নিশ্চিত করতে, রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো প্রকল্পগুলোকে শুধুমাত্র আমেরিকাতে তৈরি নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে।

এছাড়া, ঋণের সীমা বাড়ানোর পক্ষে যুক্তিও দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ বিল পরিশোধের জন্য সর্বোচ্চ পরিমাণে ঋণ নিতে পারে। জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণের সীমা ৩১.৪ ট্রিলিয়ন বা ৩১ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ খেলাপি হওয়ার আগে, ঋণের সীমা বাড়ানোর জন্য কংগ্রেসের কাছে এখনো বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময় আছে।

বাইডেন বলেন, কংগ্রেস এর আগে ‘অর্থনৈতিক বিপর্যয় রোধ করতে’ দেশের অর্থ পরিশোধ করেছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কৃতিত্বকে কখনই প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে না, তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার জন্য আইন প্রণেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।

তবে, প্রতিনিধি পরিষদের নবনির্বাচিত স্পিকার কেভিন ম্যাককার্থি বলেন, রিপাবলিকান পার্টি তাদের অত্যধিক ব্যয় হিসাবে এর বিরোধিতা করতে থাকবে।

আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে পুলিশ কর্মকর্তার নির্যাতনে নিহত টায়ার নিকোলসের বাবা-মাও উপস্থিত ছিলেন।

প্রথা অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টের স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন ভাষণে সেইসব অতিথিদেরই আমন্ত্রণ জানানো হয়, যারা বিশেষ কোনো আলোচিত বিষয়ের সাথে জড়িত।

২৯ বছর বয়সী নিকোলস গত মাসে পাঁচজন কৃষ্ণাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তার হাতে নিহত হন। প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস ২০২০ সালে মিনিয়াপলিসের বাসিন্দা জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার পর ডেমোক্র্যাটরা যে পুলিশ সংস্কার আইনটি প্রস্তাব করেছিলেন, সেই স্থবির আইনটি পুনর্বিবেচনা করতে, কংগ্রেসকে অনুরোধ করার জন্য নিকোলসের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি তুলে এনেছেন।

অস্টিনের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক জেরেমি সুরি উল্লেখ করেছেন, বাইডেন তার ভাষণে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেননি যে তিনি আগামী ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কিনা। যদিও তার সমালোচকরা বলছেন, ৮০ বছর বয়সে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য তার বয়সটা একটু বেশিই বটে।

পররাষ্ট্র নীতি
ইউক্রেনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের হামলার প্রতিক্রিয়ায় বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোকে একত্রিত করেছে এবং একটি বৈশ্বিক জোট তৈরি করেছে।

তিনি বলেন, আমরা পুতিনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি। আমরা ইউক্রেনের জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছি।

যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ওকসানা মার্কারোভা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বাইডেন তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সমর্থনে একতাবদ্ধ এবং যত সময়ই লাগুক, আমরা আপনাদের সাথেই থাকবো।

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক নতুন করে সর্ব নিম্ন পর্যায়ে পৌঁছে যায়, যখন একটি চীনা গুপ্তচর বেলুন এক সপ্তাহ ধরে দেশটি অতিক্রম করছিল। বাইডেন বলেন, তিনি চীনের সাথে এমন উপায়ে কাজ করতে চান, যাতে করে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে সবসময় অগ্রাধিকার দেয়া যায় এবং সবসময় বিশ্ব লাভবান হতে পারে।

তিনি বলেন, তবে এটি সম্পর্কে কোনো ভুল করবেন না: যেমনটি আমরা গত সপ্তাহে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছি, চীন যদি আমাদের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, তবে আমরা আমাদের দেশকে রক্ষার জন্য যা করা প্রয়োজন, ঠিক তাই করব।

অন্য প্রসঙ্গে, তিনি অ্যাসল্ট রাইফেলের উপর নিষেধাজ্ঞা এবং পুলিশ সংস্কারের পক্ষেও কথা বলেন।
সূত্র : ভয়েস অফ আমেরিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading