
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, নির্বাহী আদেশে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাময়িক মুক্তির ক্ষেত্রে রাজনীতি করা নিয়ে কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি, তবে তার শারীরিক অবস্থা রাজনীতি করার মত নয়। বৃহস্পতিবার ঢাকায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্ট্যারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন আইনমন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া ঢাকাস্থ নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন, দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। এর বাইরে কোনো শর্ত নাই। আপনারা প্রশ্ন করেছেন উনি রাজনীতি করতে পারবেন কি না। আমি সত্য বলি বলেই বলেছি, রাজনীতি করার ব্যাপারে কোনো শর্ত নাই। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০০৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয় খালেদা জিয়ার। সেদিনই কারাবন্দি হন তিনি। বিএনপি এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে।
ওই বছরের ৩০ অক্টোবর উচ্চ আদালত সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করে। তার আগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপি নেত্রীর সাত বছরের সাজা হয়।
খালেদা জিয়ার স্বজনদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৪ মার্চ শর্ত সাপেক্ষে সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয় খালেদা জিয়াকে। পরের দিন তিনি মুক্তি পান। গত ১৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠবারের মতো ছয় মাসের জন্য সাময়িক মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। ফলে আগামী ২৫ মার্চ পর্যন্ত খালেদাকে কারাগারে যেতে হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, উনি নির্বাচন করতে পারবেন না কারণ উনি দণ্ডিত, রাজনীতি করতে পারবে না এমন কথা কোথাও নাই। খালেদা জিয়ার বাস্তব পরিস্থিতিও বিবেচনা করতে হবে মন্তব্য করে আইনমন্ত্রী বলেন, তার যে আবেদন তার ভাইরা করেছেন, সেখানে বলা আছে তিনি গুরুতর অসুস্থ। তার যদি আরো ভালো চিকিৎসা না হয়, তাহলে তার জীবন বিপন্ন হবে। তাকে মানবতার খাতিরে প্রধানমন্ত্রী দণ্ড স্থগিত রেখে মুক্তি দিয়েছেন। তিনি অসুস্থ, তিনি রাজনীতি করতে পারবেন কি না, সেটি আমি বারবার বলেছি আপনারা দেখেন।
স্বাভাবিকভাবে মানুষ মনে করে তিনি অসুস্থ তার রাজনীতি করার অবস্থা নেই। এটাই বাস্তবতা। বিএনপিকে নির্বাচনে আনার বিষয়ে সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নে আনিসুল হক বলেন, আগামী নির্বাচন আওয়ামী লীগের আমলে অতীতে যেমন সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে, তেমনই হবে। সংবিধানের আলোকে নির্বাচন হবে। নির্বাচনে যেন সবাই আসে এটা আওয়ামী লীগ চায়। কিন্তু কে আসবে কে আসবে না সেটা তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। জাতির পিতা যে গণতান্ত্রিক আদর্শ ও সংবিধান দিয়ে গেছেন, তার বাইরে আমরা এক চুলও যাব না। ১৯৯৬ এর মত ভোটারবিহীন নির্বাচন আমরা করব না। নির্বাচন ২০১৪, ২০১৮ সালের মত সুষ্ঠু হবে। নির্বাচন নিয়ে ‘আন্তর্জাতিক চাপ নেই’ মন্তব্য করে আনিসুল হক বলেন, বলা হয় ২০১৪, ২০১৮ এর নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। সুষ্ঠু না হলে, জনগণ মেনে না নিলে আমরা ক্ষমতায় থাকতে পারতাম না। নির্বাচন যেন সুষ্ঠু না হয়, সেই চেষ্টা বিএনপি করেছে, অগ্নিসন্ত্রাস করেছে। অনেকে অনেক কথা বলবে। কিন্তু শেখ হাসিনার অধীনে আমাদের এই সরকার মনে করে, আন্তর্জাতিক কোনো চাপ নয় বরং জনগণ ও গণতন্ত্রের প্রতি আমাদের যে দায়বদ্ধতা, সেখান থেকেই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি বঙ্গবন্ধু যেটা করে গেছেন, এখন প্রধানমন্ত্রী করছেন তা হচ্ছে জনকল্যাণমুখী। অপরদিকে বিএনপির রাজনীতি হচ্ছে মিথ্যার আর হত্যার।