মমতাজুল ফেরদৌস জোয়ার্দার: এই নিবন্ধের শিরোনাম দেখে অনেকের মনে হতে পারে আজ জাতির জনকের মৃত্যুর ৪৬ বছর পর একথা অপ্রাসঙ্গিক। যত কিছুই হোক না কেন তিনি তো আর ফিরে আসবেন না। সেটা আমরা সবাই জানি, তিনি ফিরে আসবেন না; কেউই মৃত্যুর পর ফিরে আসে না। কিন্তু একটি ভুল থেকে শিক্ষা নিলে পরবর্তীতে তা এড়িয়ে চলা সম্ভব। যার কারণেই বিশ্বে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা হয়েছে ও হচ্ছে। আর এতে করে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম সতর্ক হতে পারবে, সম্ভব হবে ভবিষ্যতে এজাতীয় অঘটন এড়িয়ে যাওয়া।

১৯৭৫ এর ৪ঠা সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু কন্যা ও তাঁর জামাতাকে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আবাস ১ নম্বর সফদরজং রোডে নিয়ে যাওয়া হয়। একটি লম্বা সোফায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে বসানো হয় আর তাঁর স্বামীকে আরেকটি লম্বা সোফায়। শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী উক্ত কক্ষে প্রবেশ করে বঙ্গবন্ধু কন্যার পাশে বসেন। সামান্য কুশলাদি বিনিময়ের পর ইন্দিরা গান্ধী ডক্টর ওয়াজেদের কাছ থেকে জানতে চান যে, তাঁরা ১৫ই আগস্টের ঘটনা সম্পর্কে সঠিকভাবে জানেন কিনা? তিনি যা জানতেন তার উল্লেখ করেন। এরপর ইন্দিরা গান্ধী সেখানে উপস্থিত র-কর্মকর্তাকে ১৫ই আগস্টের ঘটনা সম্পর্কে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য জানাতে বলেন।

তখন উক্ত কর্মকর্তা দুঃখ-ভারাক্রান্ত মনে ইন্দিরা গান্ধীকে জানান যে, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের কেউই বেঁচে নেই। এই সংবাদে বঙ্গবন্ধু কন্যা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ইন্দিরা গান্ধী তখন তাঁকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, “তুমি যা হারিয়েছে তা আর কোনভাবেই পূরণ করা যাবে না। তোমার একটি শিশু ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। এখন থেকে তোমার ছেলেকেই আব্বা এবং মেয়েকে মা হিসেবে ভাবতে হবে। এ ছাড়াও তোমার ছোট বোন ও স্বামী রয়েছে সাথে। এখন ছেলে-মেয়ে ও বোনকে মানুষ করার ভার তোমাকেই নিতে হবে। অতএব এখন তোমার কোন অবস্থাতেই ভেঙ্গে পড়লে চলবে না।”

আমরা জানি যা ১৫ই আগস্ট জাতি যা হারিয়েছে তা ফিরে পাবার না। মহামতি ইন্দিরা গান্ধীর কণ্ঠেও সে কথায় প্রতিধ্বনিত হয়েছে। কিন্তু শত্রু, ষড়যন্ত্রকারী ও মদদদাতাদের চিহ্নিত করা জরুরী আমাদের জাতীয় স্বার্থে। বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বঙ্গবন্ধু হত্যা ষড়যন্ত্রের পিছে রাষ্ট্রের অনেকেই জড়িত ছিল বা জেনে নিশ্চুপ ছিল। কিন্তু তারা সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিলে ইতিহাসের এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড প্রতিহত করা যেত। কর্নেল শাফায়াত জামিলও তাঁর গ্রন্থ ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ রক্তাক্ত মধ্য-আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর’-এ যা লিখেছেন তাতে প্রতীয়মান হয় এই হত্যাকাণ্ড প্রতিহত করা সম্ভব ছিল। কিন্তু যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল তাদের যথেষ্ট গাফিলতি ও অনিচ্ছা এই হত্যাকাণ্ডের কারণ হয়েছে। আর এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় তৎকালীন তিন সামরিক বাহিনীর প্রধানেরা ব্যবস্থা নিলে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পরও ক্ষমতা খুনিদের হাতে যেত না। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী শক্তি দ্বারা শাসিত হত না।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী বিভিন্ন অবৈধ শাসক মুস্তাক, সায়েম, জিয়া, এরশাদ ১৯৭৫এর ১৫ই আগস্ট থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত, এবং পরবর্তীতে তাদের দোসর ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সর্বমোট ২১ বছর একাধারে সংবিধানের চার মূলনীতিকে পদদলিত করেছে। আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেও নস্যাৎ করে দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। দেশ পিছিয়ে গেছে শতবর্ষেরও বেশি। যে জঞ্জাল তারা সৃষ্টি করেছে তা থেকে বেরিয়ে আসা দুষ্কর হয়ে উঠেছে।

সামরিক বাহিনীর যারা এই হত্যাকাণ্ডের সাথে সরাসরি জড়িত ছিল তাদের বিচার হয়েছে। কিন্তু যারা জেনে নিশ্চুপ ছিল বা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ দিয়েছিল তাদের বিচারের আওতায় আনা যায়নি। আরও বিচারের আওতায় আনা যায়নি যারা কর্তব্যে অবহেলা করেছিল তাদের। এসকল ব্যক্তিদের কেউ কেউ মারা গেছে বা হত্যাকাণ্ডের স্বীকার হয়েছে। বাংলাদেশের আইনে মৃত ব্যক্তির বিচার করা যায় না, সে নিশ্চিত খুনি হলেও। সাবেক সামরিক কর্মকর্তা অবৈধ রাষ্ট্রপতি(উচ্চ আদালতের রায়ে) জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জ্ঞাত ছিল। কিন্তু এই খুনিদের মদদদাতা কোন ব্যবস্থা নেয়নি। বরং তাদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছে। এমন অনেকেই পার পেয়েছে এই হত্যাকাণ্ডের দায় থেকে। জিয়া পরবর্তীতে হত্যাকাণ্ডের স্বীকার হয়েছে। যার কারণে সেও রেহাই পেয়েছে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ থেকে। এখানে বিচারকও ছিলেন নিরুপায় যার কারণে একটি কমিশন গঠন করে সত্য উন্মোচনের নির্দেশনা ছিল বিচারে। কমিশনের তদন্তে কেউ দোষী হলে সে অপরাধী কিন্তু তার কোন শাস্তি হয় না। কিন্তু জাতী অপরাধীকে জানতে পারে চিনতে পারে, তার থেকে সতর্ক থাকতে পারে। রাষ্ট্রীয় নৈতিকতার কারণেই এই জাতীয় কমিশন গঠনের প্রয়োজন পড়ে।

প্রয়াত কর্নেল সাফায়াত জামিল মুক্তিযুদ্ধের অগ্র-নায়কদের একজন। তিনি পনেরোই আগস্টের ঘটনাবলী স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছেন। তাঁকে লেখার ক্ষেত্রে কোন গ্রন্থের সাহায্য নিতে হয়নি, কারো কাছ থেকে শুনে লিখতে হয়নি। এসবের আলোকে আমি তাঁর লেখা গ্রন্থটিকে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করি; নিঃসন্দেহে বিদেশী কোন নামকরা সাংবাদিকের গ্রন্থের চেয়েও। কারণ তারা সেদিন ঘটনা সমূহ সরাসরি প্রত্যক্ষ করেননি। তারা পরবর্তীতে তা শুনে বা পড়ে লিখেছেন।

বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ একজন দপ্তর সহকারী মনোয়ারুল ইসলাম ‘১৫ই আগস্ট ১৯৭৫ এর কালরাত্রির মর্মদন্তু ঘটনা’ নিবন্ধের মধ্যে তাঁর নিজের একটি করুণ অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করেছেন। তাঁর সরকারি বাসা ছিল মন্ত্রিপাড়া নামে খ্যাত মিন্টো রোডের পাশেই এলিফ্যান্ট রোডে ‘সাগরিকা’ বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলায়। গভীর রাতে মন্ত্রিপাড়ায় প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ শুনে তিনি জেগে উঠেন। এমন সময় কে যেন বেশ জোরে দরজার কড়া নাড়তে লাগল। তখন তাঁর মনে পড়ল এমনি করেই সেবার পাকিস্তানি সেনারা তাঁর দরজায় কড়া নেড়ে ঢুকে বাড়ি তন্নতন্ন করে খুঁজেছিল, কোনো কাল পতাকা আছে কি না। দরজা খুলেই তিনি অবাক দৃষ্টিতে দেখেন তাঁর সামনে গেঞ্জি-লুঙ্গি আর পায়ে স্যান্ডেল পরা অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর দুই মন্ত্রী।

হাঁপাতে হাঁপাতে দুজনই তাঁকে বলে তারা প্রাণ বাঁচাতে এক কাপড়ে দৌড়ে বেরিয়ে এসেছে। তাঁর ভবনের নিচে কয়েকজন কর্মচারী বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন। তাদের কাছে খবর পেয়ে ওপরে তার বাসায় চলে এসেছেন। দুজনেই বলে, তাদের বাসায় অবশ্য আক্রমণ এখনো হয়নি। ‘তবে সেরনিয়াবাত ভাইকে বোধ হয় এতক্ষণে মেরে ফেলেছে।’ মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ভগ্নীপতি। দুই মন্ত্রীকে ভেতরে এনে বসিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বাসাতেই থাকুন, আল্লাহ ভরসা।’ তাঁর দুটো জামা এনে দেন মন্ত্রীদ্বয়কে পরার জন্য, কিন্তু তারা পরেননি। ওদিকে মন্ত্রিপাড়ায় গোলাগুলি আর সেনাদের চিৎকার বেশ কিছুক্ষণ চলার পর স্তিমিত হয়ে এসেছিল। জনাব ইসলাম দুই মন্ত্রীর পাশে বসে রেডিওর খবর শোনার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনো খবর ছিলা না। দুই মন্ত্রী ফিসফিস করে বলে, ‘এর মধ্যে নিশ্চয়ই মোশতাক ভাইয়ের হাত আছে। কিছুদিন ধরে তার ইতিউতি কথাবার্তা শুনে একটা কিছু হবে বলে আমাদের মনে হচ্ছিল। এত বড় একটা বিশ্বাসঘাতকতার কাজ!’ ইত্যাদি। তিনি অবাক বিস্ময়ে ভাবতে লাগলেন, এত বড় একটা কথা জেনেও তারা বঙ্গবন্ধুকে কিছুই বলেননি কেন?

এরপর ওই দুই মন্ত্রী তখন নিজেদের মধ্যে কী যেন সলাপরামর্শ করছিল দেখে জনাব ইসলাম সরে যান। সেদিন রাতের টেলিভিশনেই দেখা গিয়েছিল, সদ্য নিহত বঙ্গবন্ধুর সেই দুই মন্ত্রী, খন্দকার মোশতাকের জঘন্য বিশ্বাসঘাতকতায় যারা অত্যন্ত ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল, তারা মোশতাকের মন্ত্রীসভার সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করছে! জনাব ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী নিজেদের চোখ-কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।

উপরের ঘটনা প্রমাণ করে সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী বা বেশিরভাগ মন্ত্রীও হত্যাকাণ্ডের চক্রান্ত সম্বন্ধে জানতো। তা নাহলে কেমনে বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রীসভার ২১ জন সদস্য খন্দকার মোশতাকের মন্ত্রীসভায় যোগ দিয়েছিল? জনাব মনোয়ারুল ইসলামের বাসায় কোন দুজন মন্ত্রী গিয়েছিল তাদের নাম প্রকাশও জরুরী। এইসব ঘটনা প্রমাণ করে, শুধু কয়েকজন বিপথগামী সেনাসদস্যের কুকর্ম ছিল না বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড।

প্রবীণ ভারতীয় সাংবাদিক সুখরঞ্জন দাসগুপ্তের মুজিব ‘হত্যা ষড়যন্ত্র’ গ্রন্থের কিছু তথ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। ৫৩ পৃষ্ঠায় সুখরঞ্জন দাসগুপ্ত জানিয়েছেন, “তাজ গোড়া থেকে ব্যাপারটা বলতে থাকেন। ক’দিন আগে, এক রাত্রে। মেজর জেনারেল জিয়া দেখা করতে আসে। সে প্রস্তাব দিল, সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে মুজিবকে ক্ষমতাচ্যুত করা হবে। তারপরে তাঁকে আটক রাখা হবে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে। এ ব্যাপারে সে তাজউদ্দীনের সমর্থন চায়। তাজউদ্দীন তাকে সাফ বলে দেন, এর মধ্যে আমি নেই। এরকম জঘন্য ব্যাপারে আমাকে জড়াবেন না।

তাজউদ্দীন বললেন, নিজের থেকে যে জিয়া আসেনি আমার কাছে, তা তা বেশ বুঝতে পারলাম। ওকে পাঠানো হয়েছিল, এরকম একটা প্রস্তাবে আমার কী প্রতিক্রিয়া হয় তা বুঝতে। আমি অবশ্য সঙ্গে সঙ্গেই জিয়ার কথাটা জানিয়ে দেই মুজিবকে।”

৫৭ পৃষ্ঠায় লেখক লিখেছেন, “তাজউদ্দীনের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর আমি গেলাম এ. এইচ, এম, কামরুজ্জামানের বাড়ি। আমাকে দেখেই বললেন- জর্দা কই? হেসে আশ্বস্ত করলাম : হোটেলে রয়েছে আপনার জর্দা। পাবেন। তারপরে শুরু করি আমার আসল কথা। এসব কী শুনছি। কামরুজ্জামান বললেন : আগে বলুন কার কার সঙ্গে দেখা হয়েছে আপনার, কী পেলেন শুনি।

আমি বললাম, আপনিই বলুন না, কী হাল এখানকার । – খুব খারাপ। কামরুজ্জমানের মুখে বিষন্ন হাসি। আমি প্রশ্ন করি- খারাপটা কী বলুন না।

তিনি বললেন : খোন্দকার এক দারুণ ষড়যন্ত্র করেছে। এর বেশি বলবো না। বাকিটা আপনি চেষ্টা করলেই জানতে পারবেন। শিগগিরই কলকাতা যাচ্ছি। সুযোগ হলে সেখানে হয়তো সব বলতে পারব।”

এরপর একই পৃষ্ঠায় লেখক লিখেছেন, “রাতে জাহানারা ইমামের এলিফ্যান্ট রোডের বাড়িতে এক পার্টিতে গেলাম আমন্ত্রিত হয়ে। সেখানে কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাও ছিলেন। এদের মধ্যে মেজর ডালিম (বঙ্গবন্ধু হত্যায় অভিযুক্ত পলাতক খুনি) অন্যতম। তথ্য দফতরের মহাপরিচালক এম আর আখতার মুকুল, বিবিসির সংবাদদাতা শ্যামল লোধ প্রমুখ। মুজিব সরকারের ব্যর্থতার প্রসঙ্গ আলোচনায় এলো। সেখানে মেজর ডালিম স্পষ্ট বললেন, মুজিবের হাত থেকে দেশ বাঁচাতে একমাত্র উপায় সামরিক শাসন কায়েম।”

আজাদ ভাইয়ের কাছে আমার প্রশ্ন ছিল এই হত্যা চক্রান্ত বা একটা সামরিক অভ্যুত্থান যে হতে যাচ্ছে তা প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের অনেকেই জানতো এবং এই হত্যাকাণ্ড প্রতিহত করা সম্ভব ছিল। তিনি আমার সাথে একমত পোষণ করে কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন। তৎকালীন সময়ে জনাব আজাদ গুরুত্বপূর্ণ কিছু দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জাতীয় যুব লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাঁকে এবং মোহাম্মদ নাসিমকে জাতীয় যুব লীগের প্রতিনিধি হিসাবে যুগোস্লাভিয়া সফরে পাঠিয়েছিলেন। যুগোস্লাভিয়া থেকে তখন তাঁরা সবেমাত্র দেশে ফিরে ঢাকাতেই অবস্থান করছিলেন। তখন জাতীয় যুব লীগের কার্যালয় ছিল প্রেসক্লাবের বিপরীত দিকে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাশেই তোপখানা রোডে।

আগস্টের প্রথম সপ্তাহে একদিন তাঁরা জাতীয় যুবলীগের কার্যালয়ে বসে অ-দাপ্তরিক আলোচনা করছিলেন। তখন তোফায়েল আহমদ জাতীয় যুব লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং তিনি সে সময় বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিবও ছিলেন। অতএব তিনি সব সময় সেখানে থাকতেন না। রাষ্ট্রপতির সব কাজ করে সন্ধ্যার পর কার্যালয়ে আসতেন জনাব তোফায়েল আহমদ। যাহোক সেদিন জাতীয় যুবলীগ কার্যালয়ে তাঁর জন্য নির্ধারিত কক্ষে তাঁরা আলোচনা করছিলেন। সেখানে ছিলেন সর্ব জনাব আজাদুল ইসলাম আজাদ, মোহাম্মদ নাসিম, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, মেসবাহ উদ্দিন আহম্মেদ যিনি তৎকালীন যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক, ড. শেখ হায়দার আলী, বর্তমানে ব্রিটেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ব্যারিস্টার সুলতান শরীফ, শফিকুল আজিজ মুকুল (একসময় বাংলার বাণীর বার্তা সম্পাদক, কিশোর সম্পাদকও ছিলেন)। হঠাৎ সেখানে একজন শীর্ষস্থানীয় যুবলীগ নেতা প্রবেশ করেন যিনি এখনও জীবিত আছেন। ঘরে ঢুকেই তিনি অকস্মাৎ ঘরের দরজা ও খোলা জানালা বন্ধ করলেন। ঐ চেম্বারের সাথেই যে হলরুম সেখানে লম্বা করে টেবিল পাতা, দুপাশে চেয়ার সেখানে সবাই বসতো, নেতাকর্মীরা পেপার পড়ত।

এ সময় তোফায়েল আহমেদের কক্ষে উপস্থিত নেতৃবৃন্দের মধ্য থেকে কেউ একজন জিজ্ঞাসা করেন, ‘কেন সব বন্ধ করছেন তিনি?’ সেই নেতা বলেন, “খুব কনফিডেন্সিয়াল একটা মেসেজ আছে।” তখন তাঁরা সবাই সতর্ক হয়ে যান। এরপর তিনি বলেন, “এই মাত্রই একটা মেসেজ গেলো, রেডিও টিভিতে ব্রডকাস্ট হবে সন্ধ্যা ছয়টার নিউজে। সেটা হল নুরুল ইসলাম মনজুর হ্যাজ অলরেডি বিন স্যাকড। (অভ্যুত্থান ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার কারণে) আর এই অভ্যুত্থান চক্রান্তের নেতা হল খন্দকার মোশতাক। এর সঙ্গে আর্মি কারা আছে, এটি এখনও পর্যন্ত আমি জানতে পারিনি।”

পরেরদিন সব দৈনিকে খবরটি ছিল যে, তাকে মন্ত্রীসভা হতে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে কিন্তু অজ্ঞাত কারণে চক্রান্তের কথা অনুপস্থিত ছিল। জনাব আজাদ আমাকে জানিয়েছেন সবাই এটা জানতো একটা কিছু চক্রান্ত চলছে। নুরুল ইসলাম মনজুর ছিল যোগাযোগ উপমন্ত্রী এবং তার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান চক্রান্তের অভিযোগ ছিল। যে নেতা আজাদ ভাইদের একথা জানিয়েছিলেন তার নামটা আমি আজ প্রকাশ করতে পারছি না।

ঐ দিনই সেই নেতা (যার নাম প্রকাশ করতে পারছিনা) এই কথা বলেন যে, “১৫ই আগস্টে রাষ্ট্রপতির প্রটেকশন নিয়ে সবার বিরুদ্ধে অ্যাকশন হবে, তখন মোশতাকের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা হবে।”

এরপর জনাব আজাদুল ইসলাম জানান, “আসলে আওয়ামীলীগ নেতারা তো আর রাষ্ট্রীয় প্রটোকল গুলো ফিক্স আপ করেনা, এগুলো ফিক্স আপ করে সরকারি কর্মকর্তা বা ঐ ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত মানুষজন। বলা যেতে পারে হোম মিনিস্ট্রি কনসার্ন, তারা অ্যাকশন নিচ্ছে। তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সম্ভবত টাঙ্গাইলের মান্নান সাহেব অথবা এম মনসুর আলী সাহেবের একজন। অবশ্য তাদের ঘাড়েই তো দায়টা যায়। প্রকৃতপক্ষে এইসব তো কোনো মন্ত্রী করেনা। এখন যদি ধরে নাও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিল। তার প্রয়োগ করবে কারা। মন্ত্রীর বড় জোর একটা নির্দেশ দিয়ে ছেড়ে দেন। কিন্তু এটা প্রয়োগ করে বড় সরকারি কর্মকর্তারা। সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা চক্রান্তের সাথে জড়িত ছিল এতে কোন সন্দেহ নেই।

আব্দুল মোমেন বঙ্গবন্ধুর আমলে চুয়াত্তর সালে যখন দুর্ভিক্ষ হল সেই সময়ে খাদ্য সচিব ছিল। সে ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যা চক্রান্তের একজন। আমি ব্যক্তিগতভাবে বলতে পারি ঐ চুয়াত্তর সালে খাদ্য সচিব থাকাকালীন বঙ্গবন্ধু এবং গভর্নমেন্টকে একটা মিসলিড করার সুযোগ নিয়েছিল সে। সেটা হল সে সরকারকে জানিয়েছিল খাদ্য এখন পর্যন্ত দুই থেকে তিন মাসের মজুদ আছে, অথচ মজুদ ছিল না। সে তো পরে জিয়াউর রহমানের খাদ্যমন্ত্রী হল। হি ওয়াজ অ্যাওয়ার্ডেড ফর দ্যাট সাকসেস, যে তার কারণেই দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। এবং সরকারি হিসাবে আটাশ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছিল।

সেই দুর্ভিক্ষটা একটা মস্ত বড় রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ সৃষ্টির জন্যে অ্যাফেক্টিভলি কাজ করাতে পেরেছিল। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু তারপরও যে খাদ্যটা কিনেছিলেন সেই খাদ্যটা মাঝপথ থেকেই কিসিঞ্জার কেনা খাদ্যের জাহাজ রাস্তা থেকে ফেরত নিয়ে গিয়েছিল। এমনকি একটা জাহাজ ডুবিয়েও দিয়েছিল। এইভাবে একটা কন্সপিরেসি ইন্টারন্যাশনালি এবং ন্যাশনালি ডেভেলপ করানো হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে। জাস্ট তাঁর বিরুদ্ধে একটা ক্ষোভ তৈরি করা, ব্যর্থতা, দায়হীনতা তাঁর কাঁধে চাপানো, তাঁকে হত্যা করার জন্য একটা প্রেক্ষাপট তৈরি করা।”

এরপর আজাদ ভাই মনকষ্টের সাথে জানান, “আর আমার প্রশ্নটা হল, হত্যাকাণ্ডের আগের দিনও ১৪ই আগস্ট হাঁস রান্না করে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে সেই খন্দকার মোশতাক খাওয়াতে গেল, আমি এগুলো নিয়ে ভাবি। যে যুব লীগ নেতা বললো, ‘মোশতাক ইজ দ্য লিডার, লিডার অফ কন্সপিরেসি এবং আর্মি কারা এটা এখন পর্যন্ত আমি জানতে পারিনি, তবে নুরুল ইসলাম মনজুর অলরেডি বিন স্যাকড্, ছয়টার নিউজে যাচ্ছে। তখন বাজে বোধহয় সাড়ে চারটা পাঁচটা। তো সেই মোশতাক বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে যাচ্ছে! বঙ্গবন্ধুর খাবার নিয়ে! বঙ্গবন্ধু জানছে যে সে কন্সপিরেসির লিডার! এটা তো আমার মনেই বারবার প্রশ্ন। আসলে যে কথাটা প্রচলিত আছে যে উনি কোনোভাবেই ওনার মনে জায়গাই দিতে পারেননি যে তাঁকে মেরে ফেলার কোনো ষড়যন্ত্র হতে পারে।”

বঙ্গবন্ধুকে এক বিদেশি সাংবাদিক জিজ্ঞাসা করেছিলেন মাননীয় রাষ্ট্রপতি আপনার যোগ্যতা কী? বঙ্গবন্ধু উত্তর দিয়েছিলেন, “আমি আমার জনগণকে ভালবাসি।”

তারপর সাংবাদিক তাঁকে আবার প্রশ্ন করেন আপনার অযোগ্যতা কী? বঙ্গবন্ধুর উত্তর ছিল, “আমি আমার জনগণকে খুব বেশি ভালবাসি।”

নিজের সম্বন্ধে এমন সরল ও নির্ভেজাল মন্তব্য খুব কম মানুষই করতে পারে। কুচক্রীরা বঙ্গবন্ধুর এই দুর্বলতা জানতো এবং এটাকে পুঁজি করেই তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ছক তৈরি করতে সক্ষম হয়।

দেশে যে একটা সামরিক অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্র চলছিল সেটা তথ্য দফতরের ডিরেক্টর জেনারেল এম. আর. আখতার মুকুল, সাংবাদিক আব্দুল গাফফার চৌধুরী ও বিবিসির সাংবাদিক শ্যামল লোধ জানতেন, সে রকম তথ্যই দিয়েছেন সুখরঞ্জন দাসগুপ্ত তাঁর গ্রন্থে। তারা সবাই না হলেও কেউ কেউ হয়তো বঙ্গবন্ধুকে অবহিত করেছিলেন চক্রান্তের বিষয়ে। কিন্তু তিনি বিশ্বাসই করতে পারেননি কেউ তাঁকে হত্যা করতে পারে।

১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তায় নিয়োজিত আর্মড ব্যাটেলিয়ান পরিবর্তনের কথা ছিল, এবং তিনি তাতে স্বাক্ষরও করেছিলেন। এর আগে অনেক লেখায় পড়েছি খুনিরা ১৫ই আগস্টকে বেঁছে নিয়েছিল ভারতের স্বাধীনতা দিবস বিধায়। কিন্তু সব বিবেচনায় আমার সেটা মনে হয় না। ১৫ই আগস্টের পরে মোস্তাকের দিন শেষ হয়ে যেত। আর্মড ব্যাটেলিয়ন পরিবর্তিত হত। বাকশাল গভর্নরদের প্রশিক্ষণ শেষ হয়ে যেত। তাতে খুনিরা কোনভাবেই সফল হত না, সেটা তারা জেনে গিয়েছিল। আর তাই শেষ সুযোগটাই তারা কাজে লাগিয়েছিল।

আজাদ ভাইয়ের দেওয়া তথ্যানুযায়ী সিদ্ধান্ত হয়েছিল ১৫ই আগস্টের পর মোশতাকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার? কেন তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? ব্যবস্থা নেওয়া হলে কোনভাবেই এই জঘন্য হত্যাকাণ্ড ঘটতো না। জাতী রাষ্ট্র বিপথে হাটতো না। এই ষড়যন্ত্রে আরও অনেকে জড়িত ছিল মোটকথা পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র এটার সাথে জড়িয়ে গিয়েছিল। সব তালিকা দিয়ে আমি এই লেখা দীর্ঘায়িত করবো না। সব তালিকা দিলে এটা নিবন্ধ থাকবে না, একটা কমপক্ষে পুস্তিকায় রূপ নেবে।

পরিশেষে কর্নেল সাফায়াত জামিলের গ্রন্থের কিছু অংশের উদ্ধৃতি দিয়ে শেষ করবো। তিনি লিখেছেন, “আমি মনে করি, এ হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধ করা সম্ভব ছিল। সেনাপ্রধান এজন্য যথেষ্ট সময় পেয়েছিলেন। ডিএমআই (পরিচালক, সামরিক গোয়েন্দা পরিদফতর) লে. কর্নেল (অব.) সালাহউদ্দিনের ভাষ্যানুযায়ী সেনাপ্রধান এই বিদ্রোহের কথা তার কাছ থেকে অবহিত হন রাত প্রায় সাড়ে চারটায়। ডিএমআই-এ তথ্য দিয়েছিলেন ১৯৭৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমার বিরুদ্ধে এক কোর্ট অফ এনকোয়ারির সময়। কাজেই এটিকে প্রামাণ্য বলে ধরা যায়। সেনাপ্রধান আমাকে ফোন করেন সকাল প্রায় ছ’টায়। ততোক্ষণে সব শেষ।

তিনি সর্বশেষ কথা বলেন আমার সঙ্গে। বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এভাবে প্রায় দেড় ঘণ্টা মহামূল্যবান সময়ের অপচয় হয়। সেনাপ্রধান আমাকে সতর্ক করতে অহেতুক দীর্ঘ বিলম্ব করেন। রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুর প্রাণ রক্ষার জন্য সময়মতো ফোর্স পাঠানোর কোনো সুযোগই তাই আমার ছিল না।

দ্বিতীয়ত, বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সেনাদলের সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করে তাদেরকে অগ্রসরমান হত্যাকারীদের প্রতিরোধ করার নির্দেশ দেয়া যেতো। কুমিল্লা ব্রিগেড থেকে আসা ১২০ জন সেনাসদস্যের একটি দল বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ছিল। বিধি অনুযায়ী সেনাদলটির প্রশাসনিক দায়িত্ব থাকার কথা ঢাকার স্টেশন কমান্ডার লে. কর্নেল (অব.) হামিদের ওপর। সার্বিক দায়িত্ব ছিল লগ এরিয়া কমান্ডার এবং সেনাপ্রধানের। বঙ্গবন্ধুর বাসভবন আক্রান্ত হওয়ার সময় এই সেনাদলটিকে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু নিহত হন আনুমানিক ভোর পৌনে ছ’টার দিকে। সেনাপ্রধান শফিউল্লাহ রাত সাড়ে চারটায় খবর পাওয়ার পরপরই রক্ষীদের কমান্ডারকে ফোনে সতর্ক করে দিলে অভ্যুত্থানকারীরা তাদের একথা বোঝাতে পারতো না যে, এটা একটা সামরিক অভ্যুত্থান।

তৃতীয়ত, ১৫ আগস্টের বিদ্রোহ যে একদিনের ষড়যন্ত্রের ফসল ছিল না, সেটা এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট। কিন্তু ডিজিএফআই ও ডিএমআইসহ দেশের অন্যান্য সামরিক ও বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ ষড়যন্ত্রের কোনো পূর্বাভাস বঙ্গবন্ধু বা সরকারকে দিতে পারেনি। এটা এতো বড়ো ব্যর্থতা যে, কোনোমতেই তা মেনে নেয়া যায় না। বিদ্রোহ সংঘটিত হওয়ার খবর পাওয়ার দেড় ঘণ্টা পর সেনাপ্রধান আমাকে তা জানান। পরিস্থিতি দুষ্টে তাই মনে হয়, সর্বস্তরে ষড়যন্ত্রটিকে আড়াল করার একটি প্রচ্ছন্ন চেষ্টা ছিল। বিশেষত আমার সম্পর্কে সুতা চোরাচালানি ও নিষিদ্ধ সর্বহারা পার্টির সঙ্গে যোগসাজশের ভুয়া গোয়েন্দা তথ্য অতি উৎসাহের সঙ্গে স্বয়ং রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করা হলেও বিদ্রোহ সংগঠন ও সরকার উৎখাতের মতো একটি বিশাল ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতার কোনো আভাস গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পায় নি, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।

১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের মাস দুয়েক আগে আমার ব্রিগেডের একমাত্র গোয়েন্দা ইউনিটটিকে অজ্ঞাত কারণে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। গোয়েন্দা ইউনিটটির কমান্ডার ছিলেন মেজর শামসুজ্জামান (পরে কর্নেল)। সেনাপ্রধান ঐ ইউনিটটিকে তার অধীনে ন্যস্ত করেন। উল্লেখ্য, অন্যান্য ব্রিগেড কমান্ডারের অধীনস্থ গোয়েন্দা ইউনিটগুলো যথাস্থানেই বহাল ছিল। এর ফলে আমার ব্রিগেডের কোনো গোপনীয় তথ্য পাওয়া থেকে সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত হই আমি।”

আমাদের জাতির বিবেকের প্রশ্নে অনতিবিলম্বে একটি আন্তর্জাতিক মানের কমিশন অথবা আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে একটি কমিশন গঠন করে তদন্ত করা উচিৎ। কারণ দোষীদের চিহ্নিত হতেই হবে সেটা যেমন বিবেকের প্রশ্নে, জাতির জনকের কাছে দায়বদ্ধতার প্রশ্নে এমনকি জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নেও। তা নাহলে চক্রান্তকারীরা পেয়ে বসবে, তারা একের পর এ জাতীয় কাজে উৎসাহিত হবে। ১৫ই আগস্ট ও ২১শে আগস্টের মত ঘটনার পুনঃরাবৃত্তি ঘটবে।

 

 

 

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading