বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার বাবা বরকত উল্লাহ্। বুয়েটে জানাজা শেষে মঙ্গলবার সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে আবরারের লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার রায়ডাঙ্গা গ্রামে পৌঁছলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি এ অভিযোগ করেন।

আবরারের বাবা বলেন, ‘এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। যে ছেলেটা বিকেল ৫টায় ঢাকায় পৌঁছাল, তাকে ৮টার দিকে নির্যাতন করার জন্য ডেকে নিয়ে গেল। ছয় ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চালাল, এটা অবশ্যই পরিকল্পিত।’

আবরার হত্যাকাণ্ডে ক্ষমতাসীন দলের বড় কোনো নেতার নির্দেশ আছে বলে অভিযোগ করেছেন তার চাচা মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় কোনো নেতার ইন্ধন রয়েছে। কেননা দু-একজন নয়, সেখানে ১৫ জনেরও বেশি ছেলে হত্যায় অংশ নিয়েছে। পূর্বপরিকল্পনা ছাড়া এতজন কাউকে মারতে পারে না। হাইকমান্ডের নির্দেশেই এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে।’

সকাল পৌনে ৮টার দিকে আবরারের লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি কুষ্টিয়ার রায়ডাঙ্গা গ্রামে পৌঁছলে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। সেখানে হাজারও মানুষ জড়ো হন। এ সময় আবরারের বন্ধু, স্বজন ও প্রতিবেশীরা লাশ ঘিরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। স্বজনদের সঙ্গে পুলিশ সদস্যদেরও কাঁদতে দেখা যায়।

আবরারের মা লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন। জ্ঞান ফিরলেই বিলাপ করছিলেন।

বেলা ১০টার আবরারের তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

প্রসঙ্গত, রোববার দিবাগত রাত তিনটার দিকে বুয়েটের শের-ই-বাংলা হলের একতলা থেকে দোতলায় ওঠার সিঁড়ির মাঝ থেকে আবরারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জানা যায়, ওই রাতেই ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরারকে ডেকে নিয়ে পেটান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা।

পুলিশ জানিয়েছে, আবরারের দেহে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ণ পাওয়া গেছে। তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার লাশে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

আবরার বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে সোমবার সন্ধ্যার পর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহত আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ্। এ ঘটনায় বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুয়েট ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে ১১ জনকে।

শুদ্ধস্বর/এইচ বি

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading