ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজেপির বিরুদ্ধে কলকাতায় জোট বাঁধলেন বিরোধী রাজনীতিকরা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে শনিবার ব্রিগেড ময়দানে অনুষ্ঠিত সভায় এক হয়ে চলার ঘোষণা দেন তারা।
বিদায় চান মোদি সরকারের। এদের মধ্যে রয়েছেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়া, চন্দ্রবাবু নাইডু, দিল্লির অরবিন্দ কেজরিওয়াল, কুমারস্বামী, উত্তরপ্রদেশের অখিলেশ যাদব, বিহারের তেজস্বী যাদব, গুজরাটের হার্দিক প্যাটেল, কাশ্মীরের ফারুক আবদুল্লাহ, মহারাষ্ট্রের শারদ পাওয়ার প্রমুখ।
কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী না আসতে পেরে দলের নেতা মল্লিকার্জ্জুন খারগেকে চিঠি দিয়ে পাঠান। চিঠি লিখে বিরোধী মহাজোটকে সমর্থন জানান সোনিয়া গান্ধীও। সভায় সেই চিঠি পড়ে শোনান লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা খারগে।
সভায় ছিলেন বলিউড অভিনেতা বিজেপির সংসদ সদস্য শত্রুঘ্ন সিনহাও। তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বললে যদি বিদ্রোহ হয় তবে আমি বিদ্রোহী।’ ছিলেন অটল বিহারি বাজপেয়ির অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিনহা, সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুন শৌরিও।
বিরোধী নেতারা বলেন, ‘দেশের সংবিধান বাঁচাতে, ভারতকে অখণ্ড রাখতে আসন্ন লোকসভা ভোটে বিজেপির বিদায় চাইই।’ ধর্মের নামে হিন্দু মুসলমান ভাগের জন্য সভায় মোদিকে দায়ী করেন কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী। শারদ পাওয়ার স্লোগান দেন, ‘মোদি হটাও, দেশ বাঁচাও।’
তবে বিরোধীদের এ জোট ও কলকাতার জনসভা নিয়ে মোদি গোয়ার সিলভাসার জনসভা থেকে পাল্টা তোপ দেগেছেন। বলেছেন, ‘বিজেপির জনপ্রিয়তায় ভয় পেয়ে গিয়ে সব অবসর নেয়া নেতারা এক হয়েছেন। কোনো লাভ হবে না, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে জিতবে, সরকারে ফিরবে বিজেপি।’
বিজেপির বিরুদ্ধে আঞ্চলিক দলগুলোর এ জোটের চলার শুরু ঘোষণা করে মমতাবিরোধী নেতাদের বলেন, ‘এরপর এমন মহাজোটের সভা হবে দিল্লি ও অন্ধ্রপ্রদেশের অমরাবতীতে। সেখানেও হাজির থাকবেন সব বিরোধী নেতা।’ দেবগৌড়া বলেন, ‘কে বিরোধীদের থেকে প্রধানমন্ত্রী হবেন তা নিয়ে বিজেপিকে মাথা খারাপ করতে হবে না। ভোটের পর জনতাই ঠিক করবে।’
বিজেপিবিরোধীদের আসল সুরটি বেঁধে দিয়েছেন খারগে। তিনি বলেন, ‘বিজেপিকে হঠাতে দিল মিলে না মিলে, হাত তো মিলাও।’ জনসভার পর কলকাতায় সরকারি অতিথি নিবাসে এক চা চক্রে মিলিত হন বিরোধী ২৪ দলের নেতা। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, কংগ্রেসের অভিষেক মনু সিংভি, দিল্লির কেজরিওয়াল ও উত্তরপ্রদেশের অখিলেশ যাদব নির্বাচন কমিশনে ডেপুটেশন দেবে। বলা হবে, ইভিএম মেশিনে ভোট নয়, ব্যালট ফিরিয়ে আনতে হবে। কারণ ইভিএম মেশিনে কারচুপি করে ভোটে জিতছে বিজেপি।
চিঠিতে তৃণমূল নেত্রীকে ‘মমতা দি’ সম্বোধন করে রাহুল লিখেছেন, ‘আমাদের বিশ্বাস, গণতন্ত্র রক্ষায় একজোট বিরোধীরা। গণতন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতা থাকলে দেশের উন্নয়ন হবে। মোদি সরকার এগুলো ধ্বংস করতে চাইছে। বাংলা সব সময় পথ দেখায়।’ বিজেপি সরকারের সমালোচনা রয়েছে চিঠিতে। রাহুল আরও লিখেছেন, “ব্রিগেডের সমাবেশ ‘ইউনাইটেড র্যালি’ জোরালো বার্তা দিল ঐক্যবদ্ধ ভারতের।
মমতাদিকে সমর্থন করি। মোদি সরকারের মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে ক্ষুব্ধ দেশবাসী। ভারতজুড়ে ক্রোধ হতাশার বহিঃপ্রকাশ।” এই প্রথম এক মঞ্চে হাজির ছিলেন উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে মূল তিন শক্তি কংগ্রেস সপা বসপা। উত্তরপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব নিজে এসেছেন কলকাতায়, বসপার নেত্রী মায়াবতী পাঠিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠ সংসদ সদস্য সতীশ মিশ্রকে।
মানুষের ঢল : ভোরের আলো একটু ফুটতে না ফুটতেই মানুষের ঢল নামে গোটা শহরে। অলিগলি থেকে রাজপথ! এদিন শহরের সব রাস্তাই গিয়ে মিশেছে ব্রিগেডে। দার্জিলিং থেকে দিঘা। পুরুলিয়া থেকে দিনাজপুর কিংবা মুর্শিদাবাদ। গোটা রাজ্য যেন এদিন উঠে এসেছে এখানে। সমাবেশে যোগ দিতে দূরের জেলাগুলো থেকে আগেই শহরে এসেছেন বহু মানুষ।
শনিবার ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই ব্রিগেডমুখী মানুষের মিছিলে-স্লোগানে মুখরিত হয়েছে শহরের রাস্তা। কেউবা ধামসা-মাদল বাজিয়ে, কেউবা ঢোল-কাসর বাজিয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় পৌঁছেছেন সমাবেশস্থলে। সুদূর বর্ধমান থেকে হেঁটে ব্রিগেডে এসেছেন প্রায় ৩০০ মানুষ। আঞ্চলিক সংস্কৃতিকে সামনে রেখে মিছিলে পা মিলিয়েছেন জনতা। কেউ বা ট্রেন ধরেছেন ভোর চারটের সময়। সকাল থেকেই শহরে ঢোকার দুই প্রবেশপথ হাওড়া ও শিয়ালদহে চোখে পড়েছে মিছিল আর মিছিল। শুধু ট্রেন নয়, বাস, মেট্রো করেও এদিন মানুষ এসেছেন সমাবেশে যোগ দিতে।