একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে যুক্ত হয়ে অনুতপ্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন নামের একটি পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রধান ও তাদের একজন বিদেশি স্বেচ্ছাসেবী। নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও তারা সন্দেহ পোষণ করেন।
গত ৩০ ডিসম্বেরের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের প্রধান মোহাম্মদ আব্দুস সালাম বলেন, নির্বাচনের আগে রাতে আওয়ামী লীগের কর্মীরা ব্যালট বাক্স ভরে রেখেছেন এবং ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছেন। ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ও ভোটারদের কাছ থেকে নির্বাচনের এমন বিবরণ শোনার পর তার কাছে এখন মনে হচ্ছে, নতুন করে নির্বাচন হওয়ার দরকার।
সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক এই বিচারপতি ৭৫ বছর বয়সী আব্দুস সালাম বলেন, এখন আমি সবকিছু জানতে পেরেছি এবং বলতে দ্বিধা নেই, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি।
ফাউন্ডেশনের হয়ে কাজ করা এক কানাডীয় পর্যবেক্ষক বলেন, তার কাছে এখন মনে হচ্ছে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে অংশ না নিলেই বোধ হয় ভালো হতো।
নির্বাচন চলাকালীন অনিয়মনের জন্য ইতিমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ।
পশ্চিমা দেশগুলোর বড় বড় ব্রান্ডের তৈরি পোশাকের গুরুত্বপূর্ণ রফতানিকারক হচ্ছে বাংলাদেশ। গার্মেন্ট পণ্য রফতানিতে চীনের পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দেশটি।
গত সপ্তাহে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ৫০ আসনে জরিপ চালিয়ে ৪৭টিতেই অনিয়ম দেখতে পেয়েছে তারা। এতে বিশেষ করে জাল ভোট, জোর করে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরা, ভোটকেন্দ্রে বিরোধী দলীয় এজেন্ট ও ভোটারদের ঢুকতে বাধা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি জানায়, তাদের জরিপ করা সব এলাকাগুলোতে নির্বাচনী প্রচারে কেবল ক্ষমতাসীন দলটিই সক্রিয় ছিল। কখনো কখনো স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সরকারি সম্পদের সহায়তা নেয়া হয়েছে।
বিশ্বাসযোগ্যতার অভাবের কথা বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের তদন্ত নাকোচ করে দিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম সংস্থাটিকে বিরোধী দল বিএনপির ‘পতুল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
আওয়ামী লীগ ও দলটির জোট সদস্যরা ৯৫ শতাংশ আসন নিশ্চিত করার পর বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। তখন থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন ভোট জালিয়াতি ও ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগের তদন্তের দাবি জানিয়েছে আসছে।
নির্বাচনকে সামনে রেখে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অসন্তোষ প্রকাশ করে জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় সময়সীমার মধ্যে ভিসা ইস্যু না করায় ভোট পর্যবেক্ষণের পরিকল্পনা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে মার্কিন তহবিলের বেশকিছু পর্যবেক্ষক। ভিসা বিলম্বের অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলাদেশ সরকার বলেছে, তারা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেন, নির্বাচনে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে পর্যবেক্ষকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। গত এক দশকের মধ্যে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন ছিল পুরোপুরি অংশগ্রহণমূলক। এর আগে ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট। সূত্র রয়টার্সের প্রতিবেদন ।