একাদশ  জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার ও গণসংযোগ শেষ হয়েছে। প্রচারযুদ্ধ শেষ, শুরু হবে ভোটযুদ্ধ। এখন ভোট গ্রহণের পালা। এই নির্বাচনের মাধ্যমে ভোটাররা তাদের প্রতিনিধিদের বেছে নিবেন। দলীয় সরকারের অধীনে এবারই প্রথম সব দল নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছে। নিবার্চনকে সামনে রেখে শেষ মুহুর্তের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে আজ শুক্রবার সকাল ৮টায় । তাই প্রচার-প্রচারনার শেষ দিনে প্রার্থীরা ভোটারদের বাড়ী বাড়ী গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ ও উঠান বৈঠক করে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। তারা শেষ মুহুর্তের প্রচার-প্রচারনাকালে ভোটারদের কাছে দোয়া প্রার্থনা করছেন এবং উন্নয়নে যোগ্য প্রার্থীকে মূল্যবান ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়াও প্রার্থীদের পক্ষে দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ লিফলেট বিতরণ, গণসংযোগ, মাইকিং করে নির্বাচনী প্রচারনায় ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। প্রার্থীরা একটি অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের দাবী করেছেন। ভোটাররা যাতে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান প্রার্থীরা। এখন অপেক্ষা ভোটের। ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদের ২৯৯টি আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। (বিএনপি মনোনীত প্রার্থী টি আই এম ফজলে রাব্বী চৌধুরীর মৃত্যুতে গাইবান্ধা-৩ আসনের ভোট আপাতত অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।) এই নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অপেক্ষায় আছেন এসব আসনের প্রায় ১০ কোটি ৪২ লাখ ভোটার। এ দিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে ভোট গ্রহণ করা হবে। সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীও মাঠে রয়েছে। সড়ক, মহাসড়কে সতর্ক রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলই অংশ নিচ্ছে। এই নির্বাচনকে ঘিরে গঠিত আওয়ামী লীগের জোটের নাম মহাজোট। এই জোটে আরও আছে বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবং ক্ষমতাসীনদের সমমনা আরও কিছু দল। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে আছে ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, এলডিপি, জেএসডি এবং অনিবন্ধিত জামায়াতে ইসলামী ও নাগরিক ঐক্য। আসুন আমরা সত্য ও সুন্দরের পক্ষে থেকে আমাদের আমানত পবিত্র ভোট প্রয়োগ করি। “আমার ভোট আমি দেব যাকে খুশি তাকে দিবো”। ভোটাররা যেন শান্তিতে ভোট দিতে পারে সেজন্য ভোটারদের উৎসাহিত করতে হবে। সব রাজনৈতিক দলের কাছেও আবেদন করছি শান্তির জন্য। আমরা কোনও অশান্তি চাই না। মানুষ নিশ্চিন্তে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করুন।নির্বাচনটা হোক গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। আমরা সব রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন করব, শান্তিতে ভোটটা হোক, স্বস্তিতে নির্বিঘ্নে ভোট দিন। আগামী পাঁচ বছরের জন্য সরকার গঠন করবে কোন জোট? কোন জোট জয়ী হবে? তা দেখার অপেক্ষায় এখন মুখিয়ে আছে পুরো জাতি। ভোটের দিন পরিবেশ কেমন থাকবে এ প্রশ্নে উদ্বেগমুক্ত নন দেশবাসী। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর স্থানীয় মুখপাত্ররাও সহিংসতার আশঙ্কা করছেন। সাধারণ মানুষের মধ্যেও পছন্দের দলের পক্ষ নিয়ে চলছে বাগযুদ্ধ। তবে এতকিছুর মধ্যেও দল-মত নির্বিশেষে সাধারণ সব মানুষেরই প্রত্যাশা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন এবং নির্বাচনে জনগণের ঢল নামুক, ভোটকেন্দ্র হোক ভোটারের। আমরা সরকার অথবা নির্বাচন কমিশনের উপরে নির্বাচনের দায়-দায়িত্ব প্রদান করে থাকি। কিন্তু একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে সরকার গঠনের সকল ক্ষেত্রে আমাদের ভোটারদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন। জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সঠিক ব্যক্তিকে প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করার দায়িত্ব এখানে ভোটারদেরকেই পালন করতে হবে। আগামী পাঁচ বছর শান্তিতে থাকতে এবং বাংলাদেশ কে উন্নয়ন দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে একদিন কষ্ট স্বীকার করে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ব্যালটের মাধ্যমে বিশ্বাসযোগ্য ও সৎ লোক বা প্রার্থীকে ভোট প্রদান করাটা সর্বদাই যুক্তিযুক্ত। অন্যথায় ফলাফল হবে অর্থহীন কারণ দুর্নীতিগ্রস্থ নেতা ও রাজনীতিবিদরাই ক্ষমতায় আসবে। তাই আমাদের উচিৎ এমন কাউকে ভোট দেবার উদ্যোগ নেয়া, যার মাধ্যমে আমাদের সামগ্রিক মতামত প্রতিফলিত হবে। এজন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ভোটারদের তাদের দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে পালন করা। তাহলেই শুধুমাত্র আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলার দিকে আমরা অগ্রসর হতে পারবো, যা প্রতিটি বাংলাদেশী নাগরিকের আজন্ম প্রত্যাশা। যদি আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে একটি শক্ত বার্তা পৌঁছাতে পারি যে, আমরা ভোটার হিসেবে আর অন্ধভাবে আমাদের প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করবো না, তাহলে তারা ভালো রাজনৈতিক নেতা গড়ে তোলায় ও নির্বাচনে তাদের প্রার্থী করায় বাধ্য হবে। যদি আমরা এটি করতে সক্ষম হই, তবে সুযোগ্য নেতাদের হাত ধরেই দেশের সুন্দর ও উন্নত ভবিষ্যত নিশ্চিত হবে। আশা করি নির্বাচনের দিন সবাই নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে যাবেন, ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন এবং ভোট উৎসব পালন করবেন। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হোক এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করুক এই প্রত্যাশা রইল।

20181210_131841

লেখক: আবু জাফর শিহাব(এল এল বি)

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading