ফ্রান্সে প্রবাসী বাংলাদেশী আদিবাসীদের সংগঠন “ইউরোপিয়ান জুম্মো আদিবাসী পরিষদ” এর আয়োজনে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু ও বিহু উৎসব উদযাপন করা হয়েছে। ১৪ এপ্রিল রোববার প্যারিসের অদূরে ভিরি সাটিও (Viry Chatillon) শহরে দিনব্যাপী এই উৎসবের আয়োজন করা হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি আদিবাসীদের তিন দিনব্যাপী বর্ষবরণের উৎসব হয়ে থাকে। পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী এই প্রধান সামাজিক উৎসবটি সম্প্রদায়ভেদে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু ও সাংক্রান উৎসব নামে পরিচিত। বাংলা বছরের শেষ দু’দিন ও নতুন বছরের প্রথম দিন এ উৎসব পালন করে থাকেন পাহাড়ে বসবাসরত আদিবাসীরা।

প্রথম দিনটিকে ফুল বিজু বলা হয় এবং নিকটবর্তী নদীগুলিতে ফুলের শ্রদ্ধা নিবেদন করে পালন করা হয়। ঘরগুলি বিশেষভাবে ফুল দিয়ে সজ্জিত করা হয়, বৌদ্ধ মন্দিরগুলিতে প্রদীপ জ্বালানো হয় এবং সমস্ত জীবের মঙ্গল কামনা করে বুদ্ধের কাছে প্রার্থনা করা হয়।

দ্বিতীয় দিনটিকে মুল বিজু বলা হয় এবং ঐতিহ্যবাহী নাচ এবং গানের সাথে উদযাপন করা হয়, বিশেষ সুস্বাদু খাবার এবং মিষ্টি প্রস্তুত করা হয়, লোকেরা তাদের বন্ধুবান্ধব এবং বর্ধিত পরিবারের সাথে দেখা করতে এবং তাদের ঐতিহ্যবাহী খেলা গুলি খেলে দিনটি কাটায়। দিনের সমাপ্তি ঘটে বিশেষ বিজু, সাংগ্রাই, বৈশু, বিসু নৃত্যের মধ্য দিয়ে যা পুরানো বছরকে বের করে দেয় এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। সমস্ত জুম্ম সম্প্রদায় তাদের রঙিন ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে এবং গান গায়, নৃত্য পরিবেশন করে যা ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রের ছন্দের সাথে থাকে যার মধ্যে রয়েছে বাঁশি।

তৃতীয় দিনটিকে ‘গোটচে পোচে বিজু’ বলা হয় যেখানে সম্প্রদায়ের প্রবীণদের সম্মান করা হয়।

বিজু, সাংগ্রাই, বৈশু এবং বিসু উৎসব চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা এবং ত্রিপুরা নামে সমগ্র জুম্ম সম্প্রদায়কে একত্রিত করে। পাহাড়ের সবচেয়ে বড় এ সামাজিক উৎসবটি পার্বত্য চট্টগ্রামের সব জাতিসত্তার মধ্যে পারস্পরিক ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন রচনা করে। সমাজের তথাকথিত শ্রেণিভেদ ভুলে সব সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি ও আস্থার সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়। পাহাড়ের এ উৎসবে নেই কোনো ধর্মীয় গোঁড়ামি। মোটকথা হলো পুরোনো বছরের সব গ্লানি, হিংসা-বিদ্বেষ, দুঃখ-কষ্টকে ঝেড়ে ফেলে নতুন বছরে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা।

তাই এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে “ইউরোপিয়ান জুম্মো আদিবাসী পরিষদ” ফ্রান্সের (EJIC) উদ্যোগে এ বছর জুম্ম সাংস্কৃতিক উৎসব সফলভাবে আয়োজন করা হয়। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজনে ছিল ঐতিহ্যবাহী পাহাড়ী নাচ, গান, সুস্বাদু খাবার ইত্যাদি। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যে শিল্পীরা পরিবেশন করেন তাঁরা হলেন জেসি চাকমা, মিতু দেওয়ান, শার্লিন বর্গী চাকমা, নকশাফুল চাকমা, ইতি তঞ্চঙ্গ্যা চাকমা, সোনাবী চাকমা, তেজন্ত চাকমা, তরুণ কান্তি চাকমা, উলা সিং মারমা, জিমিলনী চাকমা, টমেলী ত্রিপুরা, ক্যাথি এমা ত্রিপুরা ও আরিয়া চাকমা।

 উৎসবে সংগঠনের পক্ষ থেকে সভাপতি সুবন তঞ্চঙ্গ্যা ও সদস্য সচিব সিদ্ধার্থ তঞ্চঙ্গ্যা জুম্ম উৎসব ২০২৪ এর শুভেচ্ছা জানান এবং সকলের সাফল্য ও সুখ কামনা করেন।

রাকিবুল ইসলাম, শুদ্ধস্বর ডটকমের ফ্রান্স প্রতিনিধি ।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading