রাতে ঘুমাতে যাওয়া থেকে শুরু করে সকালে ক্লাসে কিংবা অফিসে যাওয়ার পথেও কানে বাজতে থাকে পছন্দের গান।
কাজের ফাঁকে, মন খারাপ কাটাতে কিংবা একা সময়ে এই গানই যেন সবচেয়ে ভালো সঙ্গী। গান শোনায় কোনো সমস্যা নেই, নেই কোনো বাধাও। সমস্যাটা অন্যখানে। সেটা হলো গান শোনার মাধ্যম। সাধারণত হেডফোন কিংবা ইয়ারফোনের সাহায্যেই গান শোনা হয়ে থাকে এখনকার সময়ে। অথচ এই যন্ত্রটি ব্যবহারের ফলে প্রতিনিয়ত আমাদের শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আর হেডফোন বা ইয়ারফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে তরুণদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ঝুঁকিতেও তারাই বেশি। তবে, শুধু হেডফোন বা ইয়ারফোনের ব্যবহার নয়, কনসার্টে উচ্চশব্দে গান শোনার কারণেও তরুণ-তরুণীরা শ্রবণশক্তি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে।
সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৩০ কোটি তরুণ-তরুণী হেডফোনে গান শোনার কারণে বা মিউজিক ভেন্যুতে উপস্থিত থেকে উচ্চশব্দে গান শোনার কারণে শ্রবণশক্তি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বাধীন গবেষণায় তরুণদের গান শোনার অভ্যাস সম্পর্কে আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি সরকার ও নির্মাতাদের ভবিষ্যতের শ্রবণশক্তি রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিএমজে গ্লোবাল হেলথ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাভিত্তিক বিশ্লেষণে গত দুই দশকে ইংরেজি, স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ এবং রাশিয়ান ভাষায় প্রকাশিত ৩৩টি গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ডেটা দেখানো হয়েছে। এতে ১২-৩৪ বছর বয়সী উনিশ হাজারের বেশি অংশগ্রহণকারীকে অর্ন্তভুক্ত করা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, ২৪% তরুণ তরুণী স্মার্টফোনের মতো ডিভাইসের সঙ্গে হেডফোন ব্যবহারের ফলে ঝুঁকিতে রয়েছে।
এছাড়া, ৪৮% অংশগ্রহণকারী কনসার্ট বা নাইটক্লাবের মতো বিনোদন স্থানগুলোতে অনিরাপদ শব্দের মাত্রার সংস্পর্শে এসেছে বলে দেখা গেছে।
এই ফলাফলগুলোকে একত্রিত করে গবেষণায় অনুমান করা হয়েছে যে, বিশ্বে প্রায় ১৩০ কোটি তরুণ-তরুণী শ্রবণশক্তি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে।
মেডিকেল ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ক্যারোলিনার একজন অডিওলজিস্ট লরেন ডিলার্ড এই গবেষক দলে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
তিনি এএফপিকে বলেন, “হেডফোন থেকে মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাসের ঝুঁকি কমানোর সর্বোত্তম উপায় হলো ভলিউম কমিয়ে দেওয়া এবং অল্প সময়ের জন্য শোনা।”
কনসার্ট বা নাইটক্লাবের মতো উচ্চস্বরে ইভেন্টগুলো ইয়ারপ্লাগ ব্যবহারেরও পরমার্শ দেন তিনি।
এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে- বর্তমানে বিশ্বের ৪৩০ মিলিয়নেরও বেশি লোকের শ্রবণশক্তি হ্রাস পেয়েছে, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৫%। ২০৫০ সালে এ সংখ্যা ৭০০ মিলিয়ন ছাড়াবে বলে আশঙ্কা সংস্থাটির।