বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের সাদামাটা জীবন যাপনের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, মুজিবপত্নীর মধ্যে বাঙালি মায়ের চিরন্তন প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

সোমবার (০৮ আগস্ট) বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।

আবদুল হামিদ বলেন, বঙ্গমাতা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পত্মী হয়েও সবসময় সাদামাটা জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। নির্লোভ, পরোপকারী ও নিরহংকার মুজিবপত্নীর মধ্যে বাঙালি মায়ের চিরন্তন প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। ক্ষমতার চূড়ায় থেকেও তিনি অমায়িক ও আন্তরিক ব্যবহারে সবাইকে আপন করে নিয়েছিলেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, তিনি (ফজিলাতুন্নেছা মুজিব) বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে নিজ জীবনে লালন ও ধারণ করে তার সন্তানদেরকেও একই আদর্শে গড়ে তোলেন। তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একই শিক্ষা, আদর্শ ও চেতনাকে অবলম্বন করে বাংলাদেশকে আজ বিশ্বের বিস্ময়, উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে গড়ে তুলেছেন।

বঙ্গমাতার রেখে যাওয়া আদর্শকে ধারণ করে তরুণ প্রজন্ম দেশমাতৃকার কল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত করার আহ্বান জানান আবদুল হামিদ।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত নম্র, শান্ত ও অসীম ধৈর্যের প্রতিমূর্তি। তিনি বুদ্ধিমত্তা, ধৈর্য্য ও সাহস নিয়ে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতেন। তিনি আমৃত্যু স্বামীর পাশে থেকে একজন যোগ্য ও বিশ্বস্ত সহচর হিসেবে দেশ ও জাতি গঠনে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন।

আবদুল হামিদ বলেন, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কেবল জাতির পিতার সহধর্মিণীই ছিলেন না, বাঙালির মুক্তিসংগ্রামেও তিনি ছিলেন অন্যতম অগ্রদূত। দেশের স্বার্থে বঙ্গবন্ধুকে অসংখ্যবার কারাবরণ করতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সেই কঠিন দিনগুলোতে ছিলেন দৃঢ় ও অবিচল। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের নেপথ্যেও ছিলেন তিনি। তারই পরামর্শে বঙ্গবন্ধু হৃদয় থেকে উৎসারিত অলিখিত এ ভাষণ দেবেন।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে হানাদার বাহিনীর হাতে গৃহবন্দী অবস্থায় পাকিস্তানে কারাবন্দী স্বামীর জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও তিনি সীমাহীন ধৈর্য্য, সাহস ও বিচক্ষণতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তিনি যুদ্ধবিধ্বস্থ দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। দেশ ও জাতির জন্য অপরিসীম ত্যাগ, সহমর্মিতা, সহযোগিতা ও বিচক্ষণতা তাকে বঙ্গমাতায় অভিষিক্ত করেছে।

১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে স্বামী-পুত্র-পুত্রবধূসহ নিকট আত্মীয়ের সঙ্গে তিনি ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্রের হাতে নির্মমভাবে শহিদ হন। জাতির ইতিহাসে যা এক কলঙ্কজনক অধ্যায়।

রাষ্ট্রপতি বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকীতে তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।

বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ৩ বছর বয়সে তিনি পিতা এবং ৫ বছর বয়সে মাকে হারান। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পিতা-মাতার কাছে লালিত-পালিত হন। মহীয়সী নারী ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছোটবেলা থেকেই ছিলেন দৃঢ়চেতা ও বলিষ্ঠ চরিত্রের অধিকারী। তিনি শুধু জাতির পিতার সহধর্মিণীই ছিলেন না, বাঙালির সুদীর্ঘ স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিসংগ্রামের নেপথ্যের কারিগর হিসেবে প্রতিটি পদক্ষেপে তাকে সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দৃঢ় চেতনাকে আরও শাণিত করেন।

জাতির পিতা কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে অধ্যয়নকালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন। তখন থেকেই বঙ্গমাতা তার রাজনীতি ও ভবিষ্যৎ কর্মপন্থার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। দেশ বিভাগের পূর্বে ১৯৪৬ সালে দাঙ্গার সময় বঙ্গমাতা নিজেও অসুস্থতা সত্ত্বেও স্বামীকে কাছে না রেখে কলকাতার দাঙ্গাপীড়িত মানুষকে সহায়তা করার পরামর্শ দিয়ে দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তার সাহসী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্তে মামলার সকল রাজবন্দীর জীবন রক্ষা হয় এবং স্বাধীনতার আন্দোলনকে আরও বেগবান করে তোলে। ৬-দফা ও ১১-দফা আন্দোলনে তিনি বলিষ্ঠ অবদান রাখেন।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading