ঝালকাঠিতে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দগ্ধ ৭০ জনকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দগ্ধদের দেখতে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সামনে ভিড় করছেন স্বজনরা। দগ্ধদের আর্তনাদ ও স্বজনদের আহাজারিতে হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে।

এদিকে, হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে ঢাকা থেকে ৫০ সদস্যের একটি চিকিৎসক দল বরিশালে যাচ্ছে। এ ছাড়া পুড়ে যাওয়া ব্যক্তিদের চিকিৎসায় হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের সাপ্তাহিক ছুটিও বাতিল করা হয়েছে।

অগ্নিকাণ্ডে ভাইয়ের ছেলে দগ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান চাচা জালাল আহমেদ। বরগুনা সদর উপজেলার বালিয়াতলী এলাকার এই বাসিন্দাকে সার্জারি ইউনিটের সামনে বসে থাকতে দেখা যায়।

জালাল বলেন, নারায়ণগঞ্জে একটি মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আমার ভাইয়ের ছেলে লোকমান হোসেন। আগুনে পুড়ে সে এখন মেডিকেলে ভর্তি। কথা বলতে পারছে না।

আগুনে ভাগ্নে রাশেদ সর্দারেরে দগ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে তার মামী বরগুনার বাসিন্দা তাহেরা আক্তার ছুটে এসেছেন।

তিনি বলেন, রাশেদ বাবুর্চির কাজ করে সংসার চালায়। কিছুদিন আগে তার বাবা মারা যায়। বাবার চেহলামে বাড়ি এসেছিল তার বড় ভাই, ভাবি ও দুই ভাতিজি, ভাতিজা ও তার মা। লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে রাশেদের ভাই ও মা বেঁচে গেলেও ভাবি ও দুই ভাতিজি, ভাতিজা নেই।

শেবাচিমের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার ভোর ৫টা থেকে দগ্ধদের আনা শুরু হয়। সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ৭২ জনকে ভর্তি হয়। এর মধ্যে পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডের দুটি ইউনিটে ৪০ জন, নারী সার্জারি ওয়ার্ডে ২০ জন এবং শিশু সার্জারি ওয়ার্ডে সাত জনকে ভর্তি করা হয়। এ ছাড়া অর্থোপেডিকস ওয়ার্ডে পাঁচজন ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আবুল কালাম আজাদ জানান, বর্তমানে ৭২ জনের মধ্যে ৫০ জনের অবস্থা গুরুতর।

শিশু সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, শিশু সার্জারি ওয়ার্ডে সাত শিশুকে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তাদের বয়স ৫ থেকে ৭ বছর।

হাসপাতালের পরিচালক এইচএম সাইফুল ইসলাম জানান, চিকিৎসক না থাকায় দীর্ঘদিন বার্ন ইউনিট বন্ধ রয়েছে। তবে সার্জারি ওয়ার্ডে দগ্ধদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালটির চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আগুনে বেশিরভাগেরই শরীরের ৫০ শতাংশ পুড়ে গেছে। ৭০ ভাগ দগ্ধ তিন শিশুসহ ১০ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় নেওয়ার পথে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

পরিচালক আরও বলেন, দগ্ধদের সবাইকে জরুরি বিভাগে ফ্রি টিকিটে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ, স্যালাইন, অক্সিজেন, বালিশ, বিছানা, কম্বল সরবরাহ করা হয়েছে। এ ছাড়া ব্লাড ডোনেশন ক্লাবগুলোকে রক্ত সরবরাহের জন্য বলা হয়েছে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading