বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া বাংলাদেশ তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বের ওপর ভর করে সোনার বাংলা রূপে বিশ্বসভায় পরিচয় লাভ করবে বলে প্রত্যাশা করছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজন উপলক্ষে ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যের আলোচনায় অংশ নেন স্পিকার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রী রামনাথ কোবিন্দ, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, মুজিব জন্মশতবর্ষ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক কামাল আবদুল নাসের ছিলেন মঞ্চে।

বক্তব্যের শুরুতে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে সহযোগিতার জন্য সব মিত্ররাষ্ট্রের জনগণকে শুভেচ্ছা জানান স্পিকার।

স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের পেছনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান স্মরণ করে স্পিকার বলেন, শতবছরের শত সংগ্রাম শেষে ৪৮ থেকে ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬৬ সালের ছয় দফা, ৬৯ সালের গণঅভ্যত্থান, ৭০ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়, একাত্তরে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে ২৪ বছরের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যিনি, পরাধীনতার গ্লানি মুছে দিয়ে জাতিকে মুক্তি ও স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন যিনি, বাঙালিকে বিশ্বসভায় আত্মপরিচয় নিয়ে চলার পথ রচনা করেছেন যিনি…তিনিই বিশ্ববরেণ্য মহান নেতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলার বন্ধু, জাতির পিতা শেখ মুজিব।

পাকিস্তানের কারাগার থেকে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফেরার পর মাত্র সাড় তিন বছর সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যে অবদান রেখেছিলেন, তা তুলে ধরেন তিনি।

স্পিকার বলেন, স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনি ১১৬টি রাষ্ট্রের কাছ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বীকৃতি অর্জন করেন। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘে মাতৃভাষা বাংলায় ভাষণ দেন। ভারতের সঙ্গে স্থলসীমানা চুক্তি সম্পাদন, সমুদ্র আইন প্রণয়ন করেন তিনি।

‘বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিশ্বের শোষিত নিপীড়িত মুক্তিকামী মানুষের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। শান্তি ও মানবতা প্রতিষ্ঠায় আজীবন কাজ করেছেন তিনি।’

জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ স্মরণ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলার মানুষ ও মাটিকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। আর তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন, ‘একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালির সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়।’

স্পিকার বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া বাংলাদেশ তার কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নত রাষ্ট্রের মর্যাদার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নারী শিক্ষা ও ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ ‘রোল মডেল’। সারাদেশে প্রায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন, ৯ লাখ গৃহহীনকে গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া, দারিদ্র্য হ্রাস প্রতিটি ক্ষেত্রেই সফলতা অর্জিত হয়েছে।

‘স্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ বিশ্বে বাংলাদেশের সক্ষমতা প্রমাণ করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ বাস্তবতা। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ সফলার জয়যাত্রায় এক অনন্য মাইলফলক।’

যুক্তরাজ্যের সেন্টার ফর রিচার্স অন বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমির বরাত দিয়ে বলেন, বিশ্বের বিৃহৎ অর্থনীতির দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪১তম, যা ২০৩০ সালে ২৮তম এবং ২০৩৫ সালে ২৫তম।

বাংলাদেশের ভবিষ্যত বিনির্মাণে তরুণ প্রজন্মের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে শিরীন শারমিন বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। তরুণ প্রজন্ম সফলতার এই ধারাকে চলমান রেখে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। ঊষার দূয়ারে হানি আঘাত, তরুণরাই সূচনা করবে নবপ্রভাত। গণতান্ত্রিক, অন্তর্ভূক্তিমূলক, শোষণ ও বৈষম্যমুক্ত, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের মধ্য দিয়ে রচিত হবে সমৃদ্ধ আগামীর পথ।

‘তারুণ্যদীপ্ত বাংলাদেশ সকল চ্যালেঞ্জ উত্তরণ ঘটিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিশ্বসভায় অধিষ্ঠিত হবে এই হোক আজ আমাদের প্রত্যয়। সফল হোক আগামীর পথচলা, শুভ হোক অগ্রযাত্রা।’

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading