১ অক্টোবর সারা বিশ্বে পালিত হয় বিশ্ব কফি দিবস। ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক কফি সংস্থা (আইসিও) দিনটিকে কফির জন্য উৎসর্গ করে। ২০১৫ সালে ইতালির মিলানে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক কফি দিবস পালিত হয় ঘটা করে। ব্যাপারটা এমনি এমনি আসেনি। জনপ্রিয় পানীয় হিসেবেও একটি এক নম্বরে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কফি আমাদের প্রতিদিনের শরীরে কি কি ভূমিকা রাখে।

কর্মক্ষমতা বাড়ায়

কফির ক্যাফেইন মানুষের মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটার অ্যাডেনোসাইনকে ব্লক করে। ফলে নোরপাইনফ্রাইন ও ডোপামিন নিঃসরণ বেড়ে যায়। যা নিউরনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়। কফি পান করলে এই ক্যাফেইন রক্তে মিশে মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছে যা আমাদের মেজাজের উন্নতিতেও সাহায্য করে। এ সব কারণে কফি খেলে আপনি তুলনামূলক কম ক্লান্ত অনুভব করবেন।

চর্বি কমায়

ক্যাফেইন প্রায় ৩ থেকে ১১ শতাংশ পর্যন্ত আমাদের মেটাবোলিক রেট বা বিপাকের গতি বাড়ায়। এটি আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপ্ত করে যা চর্বি ভাঙতে উৎসাহ জাগায়। একইসঙ্গে এটি আমাদের রক্তের এপিফ্রাইন বাড়াতে সাহায্য করে। এই হরমোন আমাদের শারীরিক পরিশ্রম করতে উদ্দীপনা জাগায়।

স্মৃতিশক্তি বাড়ায়

কফি স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। ফলে এটি আলঝেইমার্সের মতো স্মৃতিবিলোপকারী রোগ প্রতিরোধ করে। সাধারণত ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু স্বাস্থ্যকর খাবার ও নিয়মিত ব্যায়ামের পাশাপাশি কফি পানেও উপকার পাওয়া যাবে।

যকৃৎ সুরক্ষায় কার্যকর

যকৃতের সুস্থতায় বিশেষ ভূমিকা রাখে কফি। প্রতিদিন অন্তত তিন কাপ কফি সিরোসিস আর ক্যানসার থেকে রক্ষা করে। কফিতে রয়েছে নানা ধরনের অন্তত শতাধিক রাসায়নিক যৌগ। এ নিয়ে চলছে আরও গবেষণা।

আছে পুষ্টি

এক কাপ ব্ল্যাক কফিতে প্রতিদিনের পুষ্টি চাহিদার প্রায় ১১ শতাংশ রিবোফ্লাভিন (ভিটামিন বি১২), ৬ শতাংশ প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড (ভিটামিন বি-৫), ৩ শতাংশ ম্যাঙ্গানিজ ও পটাশিয়াম, ২ শতাংশ ম্যাগনেসিয়াম ও নিয়াসিন (ভিটামিন বি-৩) থাকে।

হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়

আগে মনে করা হতো হৃৎপিণ্ডের সঙ্গে কফির শত্রুতা আছে। সবাই বলতো ক্যাফেইন হার্টের ক্ষতি করে থাকে। কিন্তু আধুনিক গবেষণা বলছে, ক্যাফেইন হৃৎপিণ্ডের উপকারই করে বেশি। প্রতিদিন তিন কাপ কফি পানে রক্তনালীতে ক্যালসিয়াম তৈরি বাধাপ্রাপ্ত হয়। এতে হৃৎপিণ্ডের রোগাক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে।

অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট

গবেষণায় দেখা গেছে কফিতে ফল ও শাকসবজির তুলনায় বেশি অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট রয়েছে। মানুষের শরীরের কোষের ক্ষতি করে ফ্রি র‌্যাডিক্যালস। কফির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ধ্বংস করে। শরীরের গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে কিংবা স্থিতিশীল রাখতেও ভূমিকা রাখে কফি।

বিষণ্নতা কমায়

২ লাখ ৮ হাজার ৪২৪ জনের ওপর একবার একটি গবেষণায় হয়েছিল। দেখা গেছে যারা দিনে ৪ কাপ বা এর বেশি কফি পান করেছে তাদের মধ্যে বিষণ্ণতায় ভুগে আত্মহত্যার প্রবণতা ৫৩ শতাংশ কম দেখা গেছে।

ঠেকাবে পারকিনসন্স ও আলঝেইমারস

নিয়মিত কফি পানে মস্তিষ্কের রোগ পারকিনসন্স ও আলঝেইমারসের ঝুঁকি কমে। এ রোগে মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ নষ্ট হতে থাকে। ক্রমে অসাড় হতে থাকে শরীর। গবেষণা বলছে, পারকিনসন্সের প্রাথমিক উপসর্গ দূর করতে বিশেষ কার্যকর ক্যাফেইন। তাই কফি মস্কিষ্ককে এই রোগের আক্রমণ রুখতে সাহায্য করে। অন্যদিকে কফির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আলঝেইমার্সের বিরুদ্ধে ঢাল হিসেবে কাজ করে।

ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়

শরীরের কোন অংশে অনিয়ন্ত্রিত কোষের বৃদ্ধিকেই ক্যানসার বলে। বিশ্বে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ ক্যানসার। আর সব ক্যানসারের মধ্যে লিভার ক্যানসার মারা যাওয়ার দিক দিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আর কলোরেক্টাল ক্যানসার আছে চতুর্থ অবস্থানে। লিভার ও কলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় কফি। স্তন ও প্রস্টেট ক্যানসার ঠেকাতে কফি কার্যকর ভূমিকা রাখে। এমনকি ডিম্বাশয় ও পাকস্থলীর ক্যানসার প্রতিরোধ করে থাকে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading