এসব টিকার মেয়াদ শেষ হয়ে এলেও তা তারা অন্যদের দিচ্ছে না। ধনী দেশগুলোকে ইঙ্গিত করে মন্ত্রী বলেন, কখনো কখনো তারা টিকা দিচ্ছে কিছু একটার বিনিময়ে। এজন্য তারা পরোক্ষভাবে চাপ দিচ্ছে। বিকালে ঘণ্টাব্যাপী চলা ওই সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী তার ইউরোপ সফরের বিস্তারিত তুলে ধরেন। বিদেশে বাংলাদেশের মান-ইজ্জত এখন অনেক বেড়েছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, এর ফুল ক্রেডিট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মন্ত্রীর দাবি, আগে অনেক দেশের মন্ত্রীদের অ্যাপয়েনমেন্ট পেতে কষ্ট হতো। এখন তারা নিজে থেকে এসে দেখা করেন। সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী আফগান পরিস্থিতি, বৃটেনে বাংলাদেশি প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বিদেশিদের প্রশ্ন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা জবাব দেন।
আফগানিস্তানে বৃহত্তর জনগণের সরকার হলে স্বাগত জানানো উচিত
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, আফগানিস্তান সার্কের সদস্য এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। সেই হিসেবে আফগানিস্তানের উন্নতি হোক- এটাই চায় বাংলাদেশ। তার মতে, বৃহত্তর জনগণের সরকার হলে তাদের স্বাগত জানানো উচিত। তবে একদিন আগে দেশটিতে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারকে বাংলাদেশ স্বাগত জানাবে কি-না? এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে মন্ত্রী বলেন, এ নিয়ে লন্ডনে এবং হেগেও আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছে। আমি বলেছি, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা তাদের অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত নিবো। মন্ত্রী বলেন, তারা আমার কাছে জানতে চেয়েছে- ভারত কি করে সেটা দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নিবো কি-না? আমি বলেছি, ভারত, পাকিস্তান কে কি করছে সেটা আমাদের বিবেচ্য নয়। আমরা দেশের স্বার্থ এবং তাদের অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত নিবো। মন্ত্রী বলেন, আমরা চাই আফগানিস্তানের উন্নতি হোক। বৃহত্তর জনগণের সরকার হলে আমাদের উচিত হবে তাদের উৎসাহিত করা এবং স্বাগত জানানো। মন্ত্রী বলেন, আফগানিস্তান ইস্যু নিয়ে আমাকে অনেকে জিজ্ঞাসা করেছেন যে তাদের ব্যান্ডওয়াগনে যোগ দেবো কিনা। আমরা বলেছি, আফগানিস্তান ইস্যুতে আমরা এখনো বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রেখেছি। সেখানে আমাদের যারা ছিলেন, তারা মোটামুটি বের হয়ে এসেছেন।
মিডিয়া এবং বিদেশিদের প্রতি ক্ষোভ
ওদিকে গুম, খুন ধর্ষণসহ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বিদেশিদের মন্তব্যের সমালোচনা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইউরোপের তিনটি দেশ সফর করে এলাম। কোথাও কেউ আমাকে খুন-গুম বা বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে কোনো প্রশ্ন করেনি। মন্ত্রী বলেন, এটা করে কিছু ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান, যাদের কাছে গিয়ে কেউ না কেউ ধরনা দেয় তারা স্টাফদের দিয়ে একটা স্ট্যাটমেন্ট দিতে বাধ্য হোন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালে নাকি বাংলাদেশে ৯শ’ নারী-শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। অথচ ওই একই বছরে বৃটেনে ৭ লাখ ৭০ হাজার ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। আমেরিকাতে ৮৫ হাজার ৭৬৭ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। যার ১ শতাংশ শাস্তি হয়েছে। তাও লঘুদণ্ড। মাত্র একদিনের জেল। এসব নিয়ে তো দেশগুলোর মিডিয়া কখনো হৈ চৈ করে না। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যখন বিদেশি মিডিয়ায় রিপোর্ট হয় তখন বাংলাদেশের মিডিয়া তা ফলাও করে প্রচার করে- এমন অভিযোগ করে মন্ত্রী বলেন, একটি স্বাধীন দেশের মিডিয়ার এ আচরণ হওয়া অনুচিত। এটা হতে পারে না। তিনি মিডিয়ার এই বাড়াবাড়িকে বদঅভ্যাস বলে নিন্দা করেন। একইসঙ্গে তিনি, ব্যক্তিবিশেষের প্ররোচনায় যে সমস্ত বিদেশি রাজনীতিক এবং প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের বদনাম করে তাদের নিজের চেহারা আয়নায় দেখার অনুরোধ জানান।
ভারত পার পেয়ে গেলেও ঝামেলায় বাংলাদেশ: বৃটেন ভ্রমণের রেড লিস্টে ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশই ছিল। কিন্তু দিল্লি পার পেয়ে গেলেও ওই তালিকায় এখনো রয়েছে ঢাকা। বৃটেন কেন এখনো বাংলাদেশকে রেড লিস্টে রেখেছে সেই প্রশ্ন বৃটিশদের করার জন্য সাংবাদিকদের পরামর্শ দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভালো, কিন্তু তারা পার পেয়ে গেছে। আমরা ঝামেলায় আছি। তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তান থেকে শরণার্থী নিচ্ছে বৃটেন। তাদের টিকা দেয়া নাই। তাদের বেলায় সমস্যা হয় না কিন্তু আমাদের ডাবল ডোজ নিতে হবে। তিনি বলেন, আমি বিষয়টি (বৃটেন সফরকালে) উত্থাপন করেছিলাম। অন্য লোক নেয়ার সময় কোনো খেয়াল নাই আর আমাদের নিতে গেলে বারোটা বাজাও। মন্ত্রী বলেন, আমাদের ডাবল ডোজ টিকা নিয়ে যেতে হবে। সিনোফার্ম নিলেও হবে না। সেখানে মডার্না বা ফাইজার নিতে হবে। কী ঢং দেখেন! একাত্তর সালে বাংলাদেশকে বৃটেন যেভাবে সাহায্য করেছে তা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে মন্ত্রী বলেন, আমি তাদের বলেছি কোয়ারেন্টিন, করোনা টেস্ট ইত্যাদি নিয়ে এখন যা করছেন তা খুবই দুঃখজনক। দয়া করে আপনাদের লোক (বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ) যারা বাংলাদেশে আটকা পড়ে আছে এবং আমাদের যারা যেতে চায় তাদের যাত্রা সহজ করুণ রেড লিস্ট থেকে আমাদের মুছে দিন ।
প্রত্যাশা অনুযায়ী টিকা না পাওয়ায় গভীর হতাশা ব্যক্ত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেছেন, ধনী দেশগুলো বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের টিকা মজুত করে রেখেছে। তারা কোভ্যাক্সের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশকে টিকা দেয়ার অঙ্গীকার করেছে। কিন্তু টিকার মেয়াদ শেষ হয়ে এলেও দরিদ্র দেশগুলোকে দিচ্ছে না। তারা টিকা নষ্ট করছে। তারা টিকা দিলেও সেটার বিনিময়ে কিছু না কিছু নিচ্ছে। ইউরোপের ৩ দেশ- বৃটেন, সুইজারল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডস সফর শেষে দেশে ফিরে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। মন্ত্রণালয়ের আনক্লজ সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, টিকার বিষয়ে যতটা আশা করেছিলাম ততটা হয়নি। ধনী দেশগুলো করোনাভাইরাসের অনেক টিকা মজুত করে রেখেছে।