হারারে টেস্টের তৃতীয় দিনই গুঞ্জন ওঠে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিচ্ছেন মাহমুদউল্লাহ। পঞ্চম দিন এসে সেই গুঞ্জন সত্যিতে রূপ নিল। সতীর্থরা ‘গার্ড অব অনার’ দিয়ে দিলেন মাহমুদউল্লাহকে। একই সঙ্গে অভিজ্ঞ এই তারকার বিদায়ী ম্যাচ বড় জয়ে রাঙাল বাংলাদেশ।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে ২২০ রানে জিতেছে বাংলাদেশ। আজ রোববার টেস্টের পঞ্চম দিনে স্বাগতিকদের দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫৬ রানে অলআউট করে নিজেদের জয় নিশ্চিত করে মুমিনুল হকের দল। বিদায়ী টেস্টে ১৫০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা হয়েছেন মাহমুদউল্লাহ।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচটি দিয়েই ১৬ মাস পর টেস্ট ক্রিকেটে ফিরলেন মাহমুদউল্লাহ। প্রায় দেড় বছর পর ফিরে খেলেন ১৫০ রানের অসাধারণ ইনিংস। এটি ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের ৫০তম ম্যাচ। টেস্ট ম্যাচের হাফসেঞ্চুরি করেই ইতি টেনে দিলেন এই অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার।

দেশের বাইরে রানের হিসেবে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। এ জয়ে প্রথমবার জিম্বাবুয়ের মাটিতে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় টেস্ট সিরিজ জয়।এর আগে ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ।

দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট পেয়েছেন তাসকিন আহমেদ। এ ছাড়া আগের ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেওয়া মেহেদী হাসান মিরাজও নিয়েছেন ৪টি উইকেট। সাকিব পেয়েছেন একটি উইকেট।

ম্যাচটিতে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশকে ভালো সংগ্রহ এনে দিয়েছেন টপ অর্ডাররা। প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁরা দুর্দান্ত করেছেন। সাদমান ইসলাম, সাইফ হাসান ও নাজমুল হোসেন শান্ত — তিনজনই পেয়েছেন রানের দেখা। এর মধ্যে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন সাদমান ও শান্ত। জোড়া সেঞ্চুরিতে ভর করে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৮৪ রান তুলেছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসের লিডসহ বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে ওঠে ৪৭৬ রান।

গত শুক্রবার দিনের শেষভাগে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ভালোভাবে সামাল দিয়েছেন দুই ওপেনার সাইফ হাসান ও সাদমান ইসলাম। আজ টেস্টের চতুর্থ দিনও এই দুই ওপেনারে ভর করে ভালো শুরু করে বাংলাদেশ। ভালো শুরু এনে দিয়ে ফিরে গেছেন সাইফ। ৪৩ রানে আউট হয়েছেন তিনি। তবে সাইফ ফিরলেও সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন সাদমান। ১৭৯ বলে নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা পেলেন সাদমান।

সাদমানের পর শতকের দেখা পেয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। দুই সেঞ্চুরিতে ভর করেই এই সংগ্রহ পেয়েছে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ১১৫ রানে অপরাজিত ছিলেন সাদমান। ১৯৬ বলে তাঁর ইনিংসে ছিল নয়টি বাউন্ডারি। অন্যদিকে আরেক সেঞ্চুরিয়ান শান্ত অপরাজিত ছিলেন ১১৭ রানে। ১৮৮ বলের ইনিংসে পাঁচ বাউন্ডারি ও ছয়টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিনি।

শুক্রবার দিনের শুরুটা হয়েছিল হতাশা দিয়ে। প্রথম সেশনে বাংলাদেশি বোলারদের পরীক্ষা নিয়েছেন জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু সময় গড়াতেই ম্যাচের রূপ বদলাতে থাকে। স্পিনে জাদু দেখাতে থাকলেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসান। দুজন মিলেই নিয়েছেন স্বাগতিকদের নয় উইকেট। ফলে বেশি দূর যেতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। বিপরীতে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে একটি উইকেটও হারায়নি বাংলাদেশ। সবমিলিয়ে হারারে টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে স্বস্তিতে ছিল মুমিনুল হকের দল।

টেস্টের তৃতীয় দিন প্রথম ইনিংসে ২৭৬ রানে অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে। ১৯২ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৪৫ রানে দিন শেষ করে বাংলাদেশ।

প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়ের হয়ে ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ ৮৭ রান করেছেন কাইতানো। কাল ওপেনিংয়ে নেমে আজ দ্বিতীয় সেশন পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়েছেন তিনি। আক্রমণাত্মক খেলেছেন ব্রেন্ডন টেইলরও। ওয়ানডাউনে নেমেই ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিংয়ে করেন ব্রেন্ডন টেইলর। মারকুটে ব্যাটিংয়ে আগাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির পথে। কিন্তু শতকের ঘরে পৌঁছানোর আগেই টেইলরের প্রতিরোধ ভাঙলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৯২ বলে ৮১ রানে ফিরলেন টেইলর। তাঁর ইনিংসটি সাজানো ছিল ১২ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায়।

মিরাজের পর বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন সাকিব। চারে ব্যাট করতে নামা দিয়ন মায়ার্সকে ফিরিয়ে দিলেন তিনি। এরপর ফিরিয়ে দেন মারুমাকে। সাকিবের সঙ্গে স্পিনে দারুণ সাফল্য পেয়েছেন মিরাজ। কাইতানো, ডোনাল্ড তিরিপানো, ব্রেন্ডন টেইলর, মুজারবানিকে ভিক্টরকে নিজের শিকার বানান মিরাজ।

প্রথম ইনিংসে ৮২ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নিয়ে মিরাজই হয়েছেন সেরা বোলার। সমান রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় সেরা বোলার সাকিব। তাসকিন নিয়েছেন একটি উইকেট।

এর আগে ব্যাটিংয়ের মাহমুদউল্লাহর দেড়শ রান এবং তাসকিনের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে প্রথম ইনিংসে লড়াই করার বড় পুঁজি পেয়েছে সফরকারীরা। ব্যাট করে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৪৬৮ রানে থেমেছে বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১৫০ রান করেছেন ১৬ মাস পর টেস্টে ফেরা মাহমুদউল্লাহ। এটাই টেস্টে তাঁর ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। এর আগে সর্বোচ্চ ছিল ১৪৬ রান।

মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে তাসকিন আহমেদও দারুণ খেলেছেন। যেখানে দলের নিয়মিত ব্যাটসম্যানেরা ব্যর্থ হয়েছেন। সেখানে এই পেসার যেন বনে যান পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান। ক্যারিয়ারের প্রথম হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। শেষ পর্যন্ত করেছেন ৭৫ রান। তাঁর ইনিংসটি সাজানো ছিল ১১ বাউন্ডারি দিয়ে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৪৬৮

জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংস: ২৭৬

বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ২৮৪/১ (ইনিংস ঘোষণা)

জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংস : ৯৪.৪ ওভারে ২৫৬ (লক্ষ্য ৪৭৭) (শুম্বা ১১, কাইতানো ৭, টেইলর ৯২, মেয়ার্স ২৬, টিরিপানো ৫২, মারুমা ০, কাইয়া ০, চাকাভা ১, নিয়াউচি ১০, মুজারাবানি ৩০*, এনগারাভা ১০ ; সাকিব ১/৪৪, মিরাজ ৪/৬৬, তাসকিন ৪/৮২, ইবাদত ১/৩৯, মাহমুদউল্লাহ ০/৯)

ফল: বাংলাদেশ ২২০ রানে জয়ী।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading