যে তরুণ কবি একদিনে প্রেসিডেন্টের চেয়েও জনপ্রিয় হয়ে গেলেন তার কবিতার বক্তব্যের জন্যে।
আমেরিকায় আবার গণতন্ত্রের সুবাস বইতে শুরু করেছে। ৭৮ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে সব পুরোনো প্রেসিডেন্ট আর সব সেলিব্রিটিদের মধ্যে সব চেয়ে বেশি নজর কেড়েছে ২২ বছর বয়সী অশেতাঙ্গ কবি অ্যামান্ডা গোরম্যান।
লস এঞ্জেলেসে জন্ম নেয়া সিঙ্গেল মাদারের সন্তান অ্যামান্ডা ছোটবেলা ‘কথা বলতে ভয় পাওয়া’ রুগী ছিলো, জড়তা আর তোতলামি এসে যেতো বক্তব্য শুরু করলে। কিন্তু শৈশব থেকেই সে কবিতা লিখতে পছন্দ করতো।
গতকালের আমেরিকার প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে জো বাইডেনের স্ত্রী জিল যিনি নিজে একজন স্কুল টিচার; তিনি তার স্বামীর অনুষ্ঠানে অ্যামান্ডা গোরম্যানকে কবিতা পড়তে দাওয়াত দিয়েছিলেন। উল্লেখ্য জিল বাইডেন ফার্স্ট লেডি হলেও তিনি স্কুল শিক্ষকতার চাকুরী চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
অ্যামান্ডা গোরম্যান তার পাঁচ মিনিটের সহজাত হাত নাড়ানো সুন্দর ভঙ্গিমায় নিজস্ব রচিত মুখস্ত কবিতায় আমেরিকানদের ও সারা বিশ্বের মানুষের প্রতি ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন। তার কবিতার নাম:–
“যে পাহাড়ে আমাদের উঠতে হবে”। “দ্য হিল উই ক্লাইম্ব।
“কখনো সময় আসে যখন জানতে ইচ্ছে হয় অসীম কালো ছায়ার শেষে আলো কোথায়?
তাই আমরা যে দেশে ছিলাম সেটিকে পিছনে ছেড়ে আরো ভালো একটি দেশের দিকে সবাই যেতে চায়।
আমরা এমন একটি শক্তি দেখেছি
যা আমাদের দেশকে সবার জন্য না বানিয়ে
জাতিকে বিভক্ত ও ছিন্নভিন্ন করতে চেয়েছে।
গণতন্ত্রকে বিলম্বিত করার অর্থ একটি দেশকে ধ্বংস করে দেয়া।
এবং এই প্রচেষ্টাটি প্রায় সফল হয়েছিল।
তবে গণতন্ত্র কোন কোন সময়ে পর্যায়ক্রমে বিলম্বিত হতে পারে।
কিন্তু এটি কখনও স্থায়ীভাবে পরাজিত হতে পারে না।
আমরা এমন একটি দেশকে দেখলাম যা ভাঙার চেষ্টা করলেও ভেঙে যায়নি।
তবে অসম্পূর্ণ এমন একটি দেশের উত্তরসূরি হয়ে, একজন চর্মসার কালো মেয়ে দাসীর কন্যা হয়ে,
একক মা দ্বারা পালিত হয়েও
আমরা এই দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারি।
আমরা শিখেছি যে শান্তি সবসময় শান্তি হয় না।
এবং ‘ন্যায়সঙ্গত’ বলে যে আদর্শ ও ধারণার কথা
কিছু মানুষ সর্বদা প্রচার করে
তা আসলে সর্বদা ন্যায়বিচার হয় না।
আমরা একটি উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের দেশের ইউনিয়ন তৈরির চেষ্টা করছি।
মানুষের সমস্ত সংস্কৃতি, বর্ণ, চরিত্র এবং অবস্থার ঐক্যের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটি দেশ রচনা করার জন্য
আমরা দৃষ্টি আকর্ষণ করছি সবার।
আমাদের অবশ্যই নিজেদের
মত-পার্থক্যকে একপাশে রেখে
ভুলে যেতে হবে সব ঘৃণা ও বিভেদ।
আমরা সবাই চোখ তুলে একটু সামনে তাকাই।
যেগুলো আমাদের মাঝে বিভেদের বিষয় হয়ে আছে সেগুলিকে না দেখি।
দেখি, দেশের সামনে কি কি বিষয় দাঁড়িয়ে আছে।
জনগণের মনের ফাটলকে জোড়া লাগিয়ে
তার উপর দিয়ে হেটে এগিয়ে
ভবিষ্যৎকে সামনে নিয়ে আসি।
আমাদের হাতে ধরে রাখা সব অস্র
মাটিতে ফেলে দেই।
তারপর সবার সেই খালি হাতে
একে অপরের হাতকে জড়িয়ে ধরি।
আজকে শপথ নেই।
আমরা কেউ কারো ক্ষতি করবোনা এবং সবার জন্য চাই সম্প্রীতি। “
তরুণ কবি গোরম্যান একটি আংটি পরেছিলেন অলংকার হিসাবে যাতে খাঁচার মাঝে একটি পাখীর ডিজাইন ছিলো। এটি ছিলো বাক স্বাধীনতার সংগ্রামের প্রতীক। এই রিংটি উপহার দিয়েছিলেন অপ্রা উইনফ্রে। অ্যামান্ডা গোরম্যান অনুষ্ঠানে প্রাডার ডিজানের ‘হিমু’ হলুদ স্যুট ও লাল চে গুয়েভারার ইন্সপাইরেশনের ক্যাপ পড়েছিলেন।
কবির একক মা ক্লাস সিক্সের ইংরেজি শিক্ষক; মেয়ের বক্তৃতা প্রতিবন্ধকতার কারণে অনেক চিন্তিত থাকতেন। কিন্তু মেয়েকে গানের অনুশীলন করিয়ে এই ভয়কে কাটিয়ে উঠিয়েছেন।
ইংরেজি তথ্য সূত্র ও ছবি: একটি ওয়ার্নারমিডিয়া সংস্থা।
আরিফুর রহমানের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত ।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading