বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের গ্রেপ্তারকৃত ছাত্রদের ঈদের আগে জামিনে মুক্তির দাবিতে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়েছেন ১৮ বিশিষ্ট নাগরিক।

শনিবার (৮ মে) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান বিচারপতির কাছে দেওয়া চিঠি তুলে ধরা হয়।

চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন, ড. কামাল হোসেন, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, হাফিজ উদ্দিন খান, আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, অধ্যাপক পারভীন হাসান, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, বদিউল আলম মজুমদার, শিরিন হক, নৃবিজ্ঞানী রেহনুমা আহমেদ, অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, বীর মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, ইসতিয়াক আজিজ উলফাত, বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু ও জোনায়েদ সাকি।

সংবাদ সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন ড. কামাল হোসেন। সঞ্চালনা ও চিঠি পাঠ করেন অধ্যাপক আসিফ নজরুল। উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন লেখক ও নৃবিজ্ঞানী রেহনুমা আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, মুক্তিযোদ্ধা ইসতিয়াক আজিজ উলফাত, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান বিচারপতির কাছে দেওয়া চিঠি তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল।

চিঠিতে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, পেনাল কোডসহ বিভিন্ন আইনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক সমাজকল্যাণ সম্পাদক আখতার হোসেনসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের অর্ধ শতাধিক ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের আদালতে হাজির করা হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আদালত তাদের পুলিশ রিমান্ডে পাঠিয়েছেন।

গ্রেফতারের পর পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে যেসব মামলার কথা বলেছে, তা কয়েক মাস থেকে কয়েক বছরের পুরনো এবং মামলাগুলো রাজনৈতিক হয়রানির জন্য করা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। দেশের করোনা পরিস্থিতি ও সামনে ঈদ—সর্বোপরি ন্যায়বিচারের স্বার্থে আমাদের সন্তানতুল্য এই ছাত্ররা অবিলম্বে জমিনে মুক্তি পাওয়ার অধিকারী বলে আমরা মনে করি। কিন্তু আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, নিন্ম আদালতে বিভিন্ন প্রশাসনিক ও পদ্ধতিগত জটিলতা কারণে তারা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

প্রধান বিচারপতির কাছে বিশিষ্টজনদের দাবি:

১. গত ২ মাসে রাজনৈতিক মামলায় গেপ্তারকৃত সব ছাত্রকে রোজার ঈদের আগে জামিনপ্রাপ্তির জন্য স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা নিন।

২. এরমধ্যে রিমান্ডে এবং করোনাকালে তাদের প্রতি কোনো নিপীড়ন হচ্ছে কিনা তা তদন্ত করার ব্যবস্থা নিন।

৩. ডিজিটাল আইনে যার বিরুদ্ধে কটূক্তি বা মানহানি করা হয়েছে বলে বলা হচ্ছে, তিনি ছাড়া অন্য কেউ সংক্ষুব্ধ হয়ে মামলা করতে পারবে না—এ ধরনের নির্দেশনা দিন।

সংবাদ সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি অংশ নিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, ছাত্রদের জামিন দেওয়া উচিত। জামিন একটা অধিকারের ব্যাপার। বিশেষ করে ছাত্র সমাজ ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখে এসেছে। তারা বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে জনমত গঠন করে, আন্দোলন করে। সেইগুলোকে আমরা সবসময় উৎসাহিত করেছি এবং এখনো সেটা হওয়ার কথা। অতীতে নিন্ম আদালত সাহসী ভূমিকা রেখেছেন, অনেক সময় তারা জামিন দিয়েছেন। উচ্চ আদালত পর্যন্ত আসতে হয়নি। জামিন সবারই অধিকার, জামিন পাওয়ার অধিকার সবারই আছে।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, জামিন আমাদের মানবিক ও আইনগত অধিকার। আমাদের বিচারকরা বিবেকবান নন। তারা অত্যাধিকভাবে সরকার নিয়ন্ত্রিত, পুলিশ নিয়ন্ত্রিত। আমরা প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। বিচারে দীর্ঘ প্রক্রিয়া সবচেয়ে বড় অত্যাচার। আজ এক মাস হয়ে গেছে এখনো মামলা ওঠেনি। একই ধরনের মামলা ৫টা দিয়ে রেখেছে। ৫টার জন্য জামিন নিতে হয়। এ জায়গায় প্রধান বিচারপতির সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রয়োজন। কয়দিন পরে ঈদ। ঈদের আগে প্রধান বিচারপতির সাংবিধানিক শক্তির বলে এসব ছাত্রদের জামিনের ব্যবস্থা করতে আহ্বান জানিয়েছি।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading