বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন ও জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সূচনা হয় বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ বিভাগের...
মুক্তমত
বাংলাদেশের চেয়ে ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি বেশি বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ...
প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী কয়েকজনের কিছু ছবি দু’দিন যাবত সোস্যাল মিডিয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে। কয়েকজন সাংবাদিককেও দেখা গেল। সবাই সিনিয়র।...
ক’দিন ধরে ১লা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে বেশ কিছু লেখালেখি পড়ছি। কেউ বলছেন এটা আবহমান বাংলার বা...
উন্নয়নশীল দেশের গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রঃ একটি রূপরেখা” পুস্তিকায় খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও বাজার অর্থনীতির...
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এবং আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। গতকাল রোববার ইউরোপীয়...
বাংলাদেশ নামক এই ভূখন্ডের সমসাময়িক ইতিহাসের প্রধান মাইলফলক বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম। এর ইতিহাস শুধুমাত্র ২৫শে মার্চের কালরাত্রি...
. ড. নূরুল হক ভুঁইয়া। তিনি ভাষা সৈনিক এবং দেশের গর্ব। দেশের এমন একজন কৃত্ত্বিমান বীর পুরুষের...
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু হয়েছিল প্রায় এক বছর আগে। সেই যুদ্ধ থামানো নিয়ে কূটনৈতিক কোনো প্রচেষ্টার চেয়ে...
২০০০ সালে আমাদের গ্রাম এবং আশপাশের অধিকাংশ গ্রামের বাড়িতেই সে সময়ে বিদ্যুৎ ছিল না। হাতেগোনা কিছু বাড়ি ছিলবিদ্যুৎ সুবিধার আওতাভুক্ত। ওই বাড়িতে টেলিভিশন ছিল আর সাড়া গ্রামে সবমিলে আরো ২টি টেলিভিশন অন্য ২টি বাড়িকেঅলঙ্কৃত করতো। এ দুটি টিভি চলতো ব্যাটারির সাহায্যে, মাঝেমধ্যেই দেখতাম সাইকেলের পেছনটায় ব্যাটারি বেঁধে চার্জারেরদোকানে চার্জ দিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শুক্রবারে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হত পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি। দিনটি যুবক-কিশোরদের জন্য ইদের দিনের মতোআনন্দের ছিল। যে বাড়িতে টিভি আছে, সে বাড়ি পরিণত হত লোকারণ্যে। বাদ জুম্মা টিভিতে পবিত্র কুরআান হতে তিলাওয়াত, গীতা ও ত্রিপিটক পাঠান্তে একটি দেশের গান হতো। তারপর ঘোষক হাসিমুখে উপস্থিত হয়ে বলতেন সুধী দর্শক, আজকে দেখবেনপূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি ‘ভণ্ড’ অথবা ‘আখেরি জামানা’; শ্রেষ্ঠাংশে রুবেল, পপি, মৌসুমী, মিজু আহম্মেদ, দিলদার ওঅন্যান্যরা। এই ঘোষণার সময় এবং গোটা সিনেমা জুড়ে তীব্র টানটান উত্তেজনা বিরাজ করতো। সিনেমার বিরতিতে বিজ্ঞাপনচলার সময় অতিরিক্ত চার্জ খরচ বাঁচানোর জন্য খুলে রাখতে হতো ব্যাটারির ক্লিপ। এ সুযোগে অনেকেই প্রাকৃতিক কাজ সেড়েআসতো। আবার শুরু হতো সিনেমার ডুসডুস, ফুঁসফুঁস, চরম উত্তেজনা। মুহূর্তেই দর্শক হৃদয় হাস্যরস, করুণরস অথবাবীররসে হয়ে উঠত আপ্লুত। চলচ্চিত্রের শেষ দৃশ্যেই শুধু দর্শকগণ নায়কনায়িকার মিলনদৃশ্য দেখে হাঁফ ছেড়ে বাঁচতো। এই হাফছেড়ে বাঁচাকেই বোধ হয় গ্রিক পণ্ডিত এরিস্টটল ‘ক্যাথারসিস’ বলেছিলেন। সিনেমা ছাড়া গুলসানাবার, মুগলি ও অন্যান্য অনুষ্ঠান ব্যাটারি চালিত টিভির মালিকগণ খুব হিসেব করে দেখতেন, দীর্ঘমেয়াদীক্রিকেট খেলা দেখানোরতো প্রশ্নই উঠে না। কারণ চার্জ পোড়ানো যে মহা অন্যায়। আর ওইসব অনুষ্ঠানে সকলের প্রবেশাধিকারওছিল না। পরিবারের সদস্যবর্গ এবং বিশেষ প্রতিবেশী স্বজনেরাই ওসব অনুষ্ঠান উপভোগ করার সাথেসাথে ভোগও করতেন। মাঝেমধ্যে বাড়ির মালিক কিছু তরুণদেরকে গৃহস্থালি কাজ যেমন ধানের আঁটি আনা, শুপারি সহ অন্যান্য ফল পাড়ানো প্রভৃতিকাজ করার বিনিময়ে টিভি দেখার অনুমতি দিতেন। ওইসব তরুণরাও ‘কাজের বিনিময়ে টিভি দেখা’ প্রকল্পে সোল্লাসে সাড়া দিত।গ্রামের মাঝবয়সী ও মুরুব্বীগণ এহেন সিনেমা ( যাকে তারা ‘বই’ বলতেন) দেখাকে গর্হিত পাপকাজ বলে গণ্য করতেন। ২০০০ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্তও গ্রাম অঞ্চলে টিভি খুব বেশি মানুষের বিনোদন মাধ্যম ছিল না। বৃহত্তর পরিসরে এবংনানাঙ্গিকে মনকে রাঙিয়ে তুলতো রেডিও। রেডিও শোনার মাধ্যমেই সবার কাজে সঞ্চারিত হতো গতি। শৌখিন গৃহবধূগণরেডিওর গান শুনতেশুনতে তরকারি কুটতেন, মাটির চুলায় রান্না বসাতেন। অনেক শিক্ষার্থীদেরকেই বেতারের অনুষ্ঠান শুনতেশুনতে অঙ্ক করতে দেখেছি। আমার চাচা রেডিও শুনতে শুনতে ধান কাটতেন, খড় নাড়তেন, জমির আগাছা পরিষ্কার করা সহসকল কাজই করতেন। বিজ্ঞাপনগুলোও অনেকের শুনতেশুনতে প্রায় মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল। তরুণ সমাজে রেডিও সবচে বড় ভূমিকা রেখেছিল ক্রিকেট ফুটবল খেলার ধারাবিবরণী শোনানোর মাধ্যমে। চৌধুরী জাফরুল্লাশারাফাত, খোদাবক্স মৃধা প্রমুখ ভাষ্যকারগণ তখন রীতিমত তারকা। ধারাভাষ্য শোনা ছাড়াও খবর, গানের ডালি, নাটক, নিশুথি অধিবেশন সহ নানা অনুষ্ঠানের পসরায় জমজমাট থাকতো রেডিও। রোজার দিনে সেহরি ইফতারের সময়সূচি জানারওপ্রধান অনুষঙ্গ ছিল রেডিও। সত্যিকার অর্থেই তখন বেতার ছিল গণমানুষের অন্যতম প্রধান বিনোদন মাধ্যম। গ্রামের কয়েকঘরে টেপ(গ্রামে ক্যাসেট বলে) বাজতে দেখেছি। তারা ক্যাসেটের ফিতা বাজিয়ে গান শুনতো। জেমস, বাচচু, মনিরখান, আসিফ, মমতাজ, আশরাফ উদাসের গান। অনেকেই শুনতেন ‘মনিরের ফাঁসি’ পালা এবং নানা ধরনের ওয়াজ।মাঝেমধ্যে ক্যাসেট চুরির গল্পও উৎসুক জনের মুখে শুনতাম। গ্রামের বিয়েতে, মুসলমানির অনুষ্ঠানে, ধানকাটা শেষে অথবা নির্বাচনে জয়ের পর চাঁদা তুলে বা কারো সৌজন্যে ভিসিআরভাড়া করে আনা হতো। বাড়ির আঙিনা ভরে যেত তরুণযুবকের সমাগমে। রাতভর দিনভর চলতো ইলিয়াস কাঞ্চন, মান্না, শালমান শাহ, রিয়াজ, অঞ্জু ঘোষ, মৌসুমী, শাবনুর, পুর্ণিমা, পপিদের ছবি। মৌলভীগণ মাঝেমধ্যে লাঠি নিয়ে তেড়ে আসতেন।তখন সাময়িকভাবে বন্ধ করে লুকিয়েছাপিয়ে রাখা হতো। ২০০৩ সালের পর গ্রামে ভিসিআরের পরিবর্তে কয়েকবছর সিডিপ্লেয়ারের আগমন নির্গমন দেখেছি। ২০০৬ সাল পর্যন্ত জনপ্রিয় গানগুলো গ্রামের সবাই একযোগে শুনতো আইসক্রিম ওয়ালাদের মাধ্যমে অথবা কোনও উপলক্ষেমাইক ভাড়া করে আনার বদৌলতে। সাধারণত মমতাজ, আসিফ, মনির খান, শান্ত, বেবি নাজনীনের গান অথবা তরতাজাজনপ্রিয় সিনেমার গানগুলো আইসক্রিমওয়ালা সাগ্রহে বাজাতেন। হালখাতার মাইকেও এমনসব গান শুনতে শুনতেই গানগুলোমুখস্থ হয়ে যেত আগ্রহী সমোঝদারদের।...