গত শনিবার ২৩শে সেপ্টেম্বর আউগবুর্গের ঐতিহাসিক ছোট গোল্ডেন হলে “জার্মান-বাংলাদেশ সমিতি আউগবুর্গ”, এক অনাড়ম্বর আনুষ্ঠানের মাধ্যমে ২৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন করেছে। আপ্যায়ন, আলোচনা আর সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি অতিথিদের কাছে একটি ভিন্ন মাত্রার আবেদন সৃষ্টি করে। প্রথমেই আগত সকল অতিথিদের হাতে তুলে দেওয়া হয় স্নাক্স বক্স সহ নানা রকম পানীয়। প্রারম্ভিক আপ্যায়ন শেষে ৩টা ৩০মি: শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান।
নওরিন আহমেদ এবং আন্নালেনা ভাগ্নার এর দ্বৈত উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানটি অনেক প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। বিশেষ করে জার্মান তরুণী আন্নালেনা ভাগ্নার বাংলা ভাষায় উপস্থাপনা যেন জার্মান বাংলা‌দেশ সমিতি নামটিকে যতার্থ করেছে। প্রধান অতিথি জার্মান বাংলাদেশ দূতাবাসের মাননীয় রাষ্ট্রদূত জনাব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া এন ডি সি এবং সকল সম্মানিত অতিথিদের আসন গ্রহনের পরেই জার্মান বাংলা‌দেশ সমিতি আউগবুর্গ এর প্রতিষ্ঠাতা ও পঁচিশ বছর ধরে যিনি সংগঠনটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন জনাব ফজলুর রহমান শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। শুভেচ্ছা বক্তব্যের শুরুতেই জনাব রহমান মাননীয় রাষ্ট্রদূত, জানাব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া এন ডি সি ও আউগবুর্গের মেয়র জনাবা মার্টিনা ভিল্ড কে বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ জানিয়ে এবং উপস্থিত আরও অনেক আমন্ত্রিত অতিথিদের সহ সকল দর্শক শ্রোতাদের শুভেচ্ছা ও এই অনুষ্ঠানে দূর দূরান্ত থেকে আসার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি তাঁর মূল বক্তব্য শুরু করেন।জনাব রহমান পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে এই সংগঠনটির জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত আউগবুর্গ ও বাংলাদেশে তাঁদের সকল কর্মযজ্ঞ তুলে ধরেন।
তাতে সংগঠনটির সকল সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কাজের এক সচিত্র প্রতিবেদন দর্শকরা উপভোগ করেন। জনাব ফজলুর রহমানের চমৎকার বক্তব্যের পর যথাক্রমে বাংলাদেশের মাননীয় রাষ্ট্রদূত জনাব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া এন ডি সি ও আউগবুর্গের মাননীয় মেয়র মার্টিনা ভিল্ডকে তাঁদের মূল্যবান বক্তব্য দিতে অনুরোধ করা হয়। মাননীয় রাষ্ট্রদূত তাঁর বক্তব্যে জনাব ফজলুর রহমান ও তাঁর সংগঠনের সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সংগঠনটির সকল কর্মযজ্ঞের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক সার্বিক উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে সেখানে প্রবাসীদের অবদানের কথাও তুলে ধরেন। মাননীয় রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের বর্তমান সরকার আগামী তিন- চার মাসের মধ্যে চমৎকার আরও একটি গনতান্ত্রিক ইলেকশন উপহার দেবার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আউগবুর্গের মেয়র তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই মননীয় রাষ্ট্রদূত সহ উপস্থিত সকলকেই আউগবুর্গ শহরের এই চমৎকার হলে স্বাগতম ও আন্তরিক অভিনন্দন জানান।
একটি বহুজাতিক- বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর শান্তির শহর আউগবুর্গে জার্মান বাংলা‌দেশ সমিতির পঁচিশ বছরের সকল কর্মের ভুয়োসি প্রশংসা করেন এবং আউগবুর্গে এমন সংগঠনের প্রয়োজনীতার কথা তুলে ধরেন। তিনি ব্যাক্তিগত ভাবে জনাব ফজলুর রহমানের অসাধারণ সকল কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরেন। গত বিশ বছর ধরে জার্মান বাংলা‌দেশ সমিতির পাশাপাশি এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া দুই মহাদেশের প্রবাসী প্রতিনিধিত্ব করে ইন্টিগ্রেসন বাইরাতে তাঁর সকল অবদানের জন্য শহর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তাঁকে বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ জানান। অতিথিদের বক্তব্যের পর “গণতান্ত্রিক জীবন দর্শন” শিরোনামে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এই পর্বে আলোচনার জন্য বাংলা‌দেশ থেকে এসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। তাঁর সাথে এই প্যানেলে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় রাষ্ট্রদূত জনাব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া, ছিলেন নেতাজী সুভাষ বোস কন্যা প্রফেসর ড. আনিতা বোস- পাফ্ফ। আরও ছিলেন আউগবুর্গশহরের ইন্টিগ্রেসন ও ইমিগ্রেশন বিভাগের ব্যুরো প্রধান ড. মারগ্রেট স্পোন। এই পর্বের সার্বিক পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন প্রফেসর ড. ফিলিপ আন্দ্রেসন। চমৎকার এই আলোচনায় জনাব ইমতিয়াজ আহমেদ একটি অসাধারণ বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে আমাদের উপমহাদেশের গনতান্ত্রিক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও ধারাবাহিকতা তুলে ধরেন। তাঁর প্রতিবেদনে অশোক ডোনাস্টি থেকে শুরু করে, বাউলিআনার লালন- রবীন্দ্র ধারা, সুফিবাদ থেকে শুরু করে ব্রিটিশ হটাও আন্দোলনের গান্ধী ও নেতাজী ধারাবাহিকতায় আজকের গনতান্ত্রিক সকল ধারাকে চমৎকার ভাবে তুলে ধরেন। তার পরেই শুরু হয় একে একে মাননীয় রাষ্ট্রদূত, প্রফেসর আনিতা বোস পাফ্ফ ও ড. স্পোন এর গনতান্ত্রিক জীবন দর্শনের উপর ধারাবাহিক আলোচনা।
১৫ মিনিট বিরতির পর শুরু হয় অনুষ্ঠানটির তৃতীয় পর্বের মূল আকর্ষণ; সঙ্গীত সন্ধ্যা। এই পর্বে স্হানীয় স্বনামধন্য সংগীত শিল্পীদের পরিবেশনা দর্শক শ্রোতাদের মন কেড়ে নেয়। মিনহাজ দীপনের তথ্যাবধানে পরিবেশনায় ছিলেন বার্লিন থেকে আগত অপূর্ব বিশ্বাস ও তাঁর স্ত্রী বৈশাখী বিশ্বাস, বিশিষ্ট নজরুল সংগীত শিল্পী আলোকানন্দ সুব্রিতা বিন্তি। তাঁরা সকলেই স্বনামধন্য স্ব স্ব ক্ষেত্রে এক একজন গুণী কণ্ঠ শিল্পী। আর বলাই বাহুল্য, জীবন্ত কিংবদন্তি শিল্পী বাপ্পা মজুমদার ও তাঁর দলের চমৎকার পরিবেশনার কথা। অসাধারণ তাঁর সকল এলবামের গানে গানে মুখরিত হয়ে উঠেছিল আউগবুর্গ শহরের এই ঐতিহাসিক নান্দনিক হলের পরিবেশ। সকলেই গানে গানে মেতে উঠেছিলেন দর্শক সারিতে সকলেই। অনুষ্ঠানে জার্মান বাংলা‌দেশ সমিতির ২৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে আউগবুর্গের ইন্টিগ্রেসন ও ইমিগ্রেশন কমিশনের সভাপতি মিসেস ডিডেম কারাবুলুট সহ বিশজনকে গুণীজন সংবর্ধনার মাধ্যমে তাঁদের হাতে সংগঠনটির পক্ষ থেকে ২০ ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়। তা ছাড়াও ছিল সকলের জন্য সংগঠনটি মনোগ্রাম খচিত একটি করে কলম আর নিয়ন টর্সলাইটসহ চাবির রিং। সভাপতির সমাপনি বক্তব্যে জনাব ফজলুর রহমান তাঁর পাশে থেকে জনাব আবু মোহাম্মদ ফাহিম তাঁর অনেক সহযোগিদের নিয়ে এই অনুষ্ঠানটিকে সাফল্য মন্ডিত করে তুলতে সার্বিক সহযোগিতার জন্য আন্তরিক ভাবে অভিনন্দন জানান। তিনি উপস্থিত সকলের প্রতি তাঁর আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি ঘোষণার মাধ্যমে সকলকে রাতের ডিনারের আমন্ত্রণ জানান।
ফাতেমা রহমান রুমা জার্মানি

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.