ছাত্রলীগ নেতাদের বিনা মূল্যে খাওয়াতে’ খাবারের দাম বৃদ্ধি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলে ছাত্রলীগ নেতাদের বিনা মূল্যে খাওয়াতে খাবারের দাম বৃদ্ধির অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে ক্যানটিনে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ করেছেন হলের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার দুপুরের দিকে হলের ক্যানটিনে তালা দিয়ে প্রায় ঘণ্টাখানেক বিক্ষোভ করেন তারা।
শিক্ষার্থীদের দাবি, হল প্রশাসন, ছাত্রলীগ ও ক্যানটিন মালিক আলোচনা করে খাবারের দাম বৃদ্ধি করেছে। খাবারের বর্ধিত মূল্য তালিকায় হল কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষরও রয়েছে।
তবে হল প্রাধ্যক্ষ বলছেন, দাম বৃদ্ধি করার ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না, স্বাক্ষরটিও তার নয়।
এ ছাড়া হলের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, ক্যানটিন মালিক ওই হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মীকে বিনা টাকায় খাওয়ান। মূলত তাদের মদদেই হঠাৎ করে খাবারের দাম বাড়ানো হয়েছে।
তবে ওই হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বিষয়টি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অন্যান্য হলের তুলনায় খাবারের মান অনুযায়ী এ হলে দাম বেশি। হল প্রশাসনকে শিক্ষার্থীরা এ ব্যাপারে বেশ কয়েকবার জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ক্যানটিন মালিককে এ বিষয়ে কোনো কথা বললে তিনি দুর্ব্যবহার করেন। আজ (বুধবার) সকালে নতুন খাবারের মূল্য তালিকা প্রকাশ করেন ক্যানটিন মালিক। যাতে প্রত্যেক খাবারের দাম ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, এসব বিষয়ে হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বুধবার সকাল ১০টায় টিভি রুমে আলোচনায় বসেন। খাবারের দাম না কমানো পর্যন্ত ক্যানটিনে তালা মেরে আন্দোলন করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন তারা। পরে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে ক্যানটিনে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় হল ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম আন্দোলন থামাতে চেষ্টা করেন। পরে হল প্রশাসন সেখানে এসে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। একপর্যায়ে খাবারের মূল্য তালিকায় হল প্রশাসনের স্বাক্ষর রয়েছে এবং ছাত্রলীগ নেতাদের মদদে দাম বাড়ানো হয়েছে বলে শিক্ষার্থীরা দাবি করে। তখন সেখানে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে শিক্ষার্থীরা কয়েকটি দাবি উত্থাপন করেন। হল প্রশাসন সেগুলো বাস্তবায়ন করবে আশ্বাস দিলে আন্দোলন স্থগিত হয়।
ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী শেখ মো. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা খাবারের নতুন মূল্যের একটি প্রস্তাব দিয়েছি। ক্যানটিন মালিক সেগুলো মানতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। পরে প্রাধ্যক্ষ সেগুলো মেনে নিয়ে নতুন ক্যানটিন মালিকের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন বলে জানিয়েছেন।
ক্যানটিনে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন করার সময় কথা হয় ওই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী শাহ আলমের সঙ্গে। তিনি শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
তিনি বলেন, ‘নতুন খাবারের মূল্য তালিকায় প্রতিটি আইটেমে ৫-১০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ডিম ভাজি ১৫ টাকার জায়গায় ২০ টাকা, মুরগির মাংস ১০ টাকা বাড়িয়ে ৪০ টাকা করা হয়েছে। কিন্তু দাম অনুযায়ী খাবারের মান বাড়ানো হয়নি’।
নতুন বর্ধিত মূল্য তালিকার বিষয়ে কিছু জানেন না উল্লেখ করে জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ ড. সুজন সেন বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে খাবারের বর্ধিত মূল্য তালিকা সহনশীল নয় বলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছেন। পরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা খাবারের নতুন মূল্য রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন এবং জানিয়েছেন এ রেটে খাবার পরিবেশন করলে তারা খেতে পারবেন। ক্যানটিন মালিক শিক্ষার্থীদের এ দাম অনুযায়ী ক্যানটিন চালাতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। তাই শিগগিরই নতুন ক্যানটিন মালিকের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হবে’।
প্রাধ্যক্ষ আরো বলেন, ‘আমাকে হল সুপার কল দিয়ে বলেছিলেন যে খাবারের নতুন মূল্য তালিকা দিয়েছে। আমি বলেছি বাকি হলের খাবারের দামের সঙ্গে সমন্বয় করে যেন অনুমতি দেওয়া হয়। তবে যে দাম বাড়ানো হয়েছে বিষয়টি আমি জানি না’। সুত্র, দেশ রূপান্তর ।