বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে আদালতের আলাদা অনুমতির কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ তার মুক্তি দেওয়া হয়েছে নির্বাহী আদেশে। কাজেই বাকি সব পদক্ষেপও এই আদেশের আওতায়ই হওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক।

সোমবার যুগান্তরকে টেলিফোনে এ কথা বলেন দেশের প্রথিতযশা এ আইনজীবী।

তিনি বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির  ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার চাইলে শর্ত সাপেক্ষে বা শর্ত ছাড়া যেকোনো বন্দিকে মুক্তি দিতে পারে। খালেদা জিয়াকে প্রথম মুক্তি দেওয়া হয়েছে দুটি শর্ত দিয়ে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে তিনি বাড়িতে থাকবেন এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে তাকে দেশেই চিকিৎসা নিতে হবে।

শাহদীন মালিকের মতে, আইনমন্ত্রী যা বলছেন যে শর্ত পরিবর্তন করা যাবে না, সেটা আসলে এরইমধ্যে পাঁচবার বদলানো হয়েছে।

 

তিনি বলেন, প্রথমে তো ছয় মাসের মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, তারপর সেটা যখন আবার ছয় মাসের জন্য বাড়াচ্ছে সেটার জন্য তো নতুন করে নির্বাহী আদেশ হচ্ছে, তার মানে সিম্পলি সরকার চাইলে ঢাকায় চিকিৎসা করার জায়গায় ঢাকা শব্দটা বাদ দিলেই হলো।

এটি আদালতের ব্যাপার নয় উল্লেখ করে আইন বিশেষজ্ঞ ড. মালিক বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালত এরই মধ্যে তার রায় দিয়েছেন। আদালতের কাছে কয়েক বার তার জামিনও চাওয়া হয়েছে এবং সেটি নাকচ করা হয়েছে। তার মানে আদালতের ‘চ্যাপ্টার’ সেখানেই শেষ হয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, আদালতে হয়তো যাওয়া যায়, কিন্তু এটা তো আদালতের ব্যাপার না, কারণ আদালত তো তাকে মুক্তি দেয় নাই। তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে নির্বাহী আদেশে।

তিনি আরও বলেন, ‘আইনমন্ত্রীর যে ব্যাখ্যা তাকে (খালেদা জিয়া) জেলে গিয়ে আবেদন করতে হবে। এই ব্যাখ্যা আইনের যৌক্তিক ব্যাখ্যা বলে আমার কাছে মনে হয় না।’

দীর্ঘ দেড় মাস ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ১০ জুন রাত পৌনে তিনটার দিকে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।

গত বছরের ১০ জুন গভীর রাতে বুকে ব্যথা নিয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের অধীনে ভর্তি হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। পরে দ্রুত এনজিওগ্রাম করে তার হার্টে একটি রিং বসানো হয়। হার্টের দুটি ব্লক এখনো রয়ে গেছে।

৭৮ বছর বয়সি খালেদা জিয়া হার্টের সমস্যা, লিভারসিরোসিস ছাড়াও নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতা রয়েছে তার। কারাগার থেকে বেরোনোর পর চিকিৎসার জন্য কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন তিনি।

এর আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। গত বছরের ২২ আগস্টও স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে গিয়েছিলেন। এক সপ্তাহ পর ২৮ আগস্ট ফের হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে ভর্তি করানো হয়। দুদিন হাসপাতালে থাকার পর ৩১ আগস্ট বাসায় ফেরেন খালেদা জিয়া।

খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে কারাগারে গিয়েছিলেন। দেশে করোনা মহামারি শুরুর পর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাকে নির্বাহী আদেশে ‘সাময়িক মুক্তি’ দেয় সরকার। এরপর কয়েক দফা তার দণ্ডাদেশ স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সুত্র, যুগান্তর ।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.