এই সরকার নিজে নিজেই পড়ে যাবে : গয়েশ্বর রায়

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে নিরাপদে ক্ষমতা ছাড়ার রাস্তা তৈরির আহ্বান জানিয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘অবৈধ এই সরকার নিজে নিজেই পড়ে যাবে। কারণ ক্ষমতায় থাকার জন্য যা যা যোগ্যতা থাকার দরকার তারা তা হারিয়েছে।’
সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি তথা সরকার পতনের এক দফা দাবিতে টানা ১৫ দিনের কর্মসূচির প্রথম দিনে মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে টঙ্গীতে গাজীপুর মহানগর বিএনপি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
টঙ্গী কলেজ গেট চেয়ারম্যান বাড়ি রোডে আয়োজিত এ সমাবেশে সভাপত্বি করেন গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি মো: শওকত হোসেনর সরকার এবং সঞ্চালনা করেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মঞ্জুরুল করীম রনি।
গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে জনগণকে শান্তিতে থাকতে দিন, তাহলে জনগণও আপনাদেরকে শান্তিতে থাকতে দিবে।’
তিনি বলেন, ‘একাত্তরে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছি, আর এখন গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করছি। জনগণের টাকায় জনগণের বুকে আর একটি গুলিও চালাবেন না, চালালে যে চালাবে তাকে বের করার ক্ষমতা এদেশের জনগণের আছে। জনগণ আমাদের সাথে আছে, পুলিশ এসপি আমাদের কিছু লাগবে না। আগামী কোনো কর্মসূচির জন্য আর পুলিশের অনুমতি নিব না। জনগণের রাস্তায় জনগণ বসে থাকবে। কেউ উঠাতে পারবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে মানুষ আজ পরাধীনভাবে জীবনযাপন করছে। মানুষের বাকস্বাধীনতা নেই, ভোটের অধিকার নেই, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই। এ অবস্থায় সরকার আরেকটি পাতানো নির্বাচন করার চেষ্টা করছে। নির্বাচন করে তারা বলবে, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। এই পাতানো নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য ইতোমধ্যে কেনা-বেচা শুরু হয়েছে। এই পাতানো নির্বাচনে কেউ পা বাড়ালে তার পা থাকবে না, জনগণ তাদের পা ভেঙ্গে দিবে।’
‘আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য শুধু লড়াই করছি না। দেশের মালিক জনগণ, জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য লড়াই করছি,’ বলেন গয়েশ্বর।
সমাবেশের প্রধান বক্তা বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে নেমেছিল। মুক্তিযুদ্ধের পরে আজকে মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে আরেকটি যুদ্ধে নেমেছে। সেই যুদ্ধ হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে পাওয়ার আন্দোলন। এই আন্দোলন হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে পাওয়ার আন্দোলন, এই আন্দোলন হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়ার আন্দোলন, এই আন্দোলন হচ্ছে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার আন্দোলন, বাকস্বাধীনতার আন্দোলন, জীবনের নিরাপত্তার আন্দোলন।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ আজ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফ্যাসিস্ট, অবৈধ দখলদার, অনির্বাচিত সরকারকে বিদায় দেয়ার। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আজ লাখো জনতা মাঠে নেমেছে। এই আন্দোলন সফল সমাপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ইনশাআল্লাহ।’
তিনি আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দলটাকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিকভাবে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগে এখন আর রাজনীতি নাই, এটি তাদের নেতাকর্মীরা বুঝে গেছে। তাদেরকে শিখিয়েছে কেমনে ভোট চুরি করতে হবে, কেমনে টেন্ডারবাজি করতে হবে, কেমনে জায়গা দখল করতে হবে, কেমনে অস্ত্রবাজি করতে হয়। আওয়ামী লীগ এখন আর কোনো রাজনৈতিক দল নেই।’
সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোটে আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটো, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, কেন্দ্রীয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার, কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, ডা: মাজহারুল আলম, শ্রমিকদলের কেন্দ্রীয় কার্যকরি সভাপতি মো: সালাহ উদ্দিন সরকার, যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পু, অ্যাডভোকেট মেহেদি হাসান এলিস, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম শামীম প্রমুখ।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, ‘অব্যবস্থাপানা ও লুটপাটের মাধ্যমে আমার প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। বিগত পনের বছরে গোটা টঙ্গী-গাজীপুরে আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তাদের চাঁদাবাজি ও লুটপাটে অতিষ্ঠ শিল্পোদ্যোক্তারা ব্যবসা গুটিয়ে চলে যাচ্ছেন।’
কেন্দ্রীয় নেতা ডা: মাজহারুল আলম বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত গাজীপুর থেকে শুরু হওয়া কোনো সংগ্রাম কখনো ব্যর্থ হয় না। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান টঙ্গী শিল্প এলাকা থেকে আবার ’৭১ প্রথম সশস্ত্র সংগ্রাম গাজীপুর থেকেই শুরু হয়েছিল। ইতিহাসের ধারায় এবারেও ভোটচোর সরকার পতনের একদফার প্রথম জনসভা গাজীপুর থেকেই শুরু হলো।’