আদিলুর-এলানের মুক্তি দাবি ২৭ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার

মানবাধিকার সংস্থা অধিকার-এর সম্পাদক আদিলুর রহমান খান এবং পরিচালক নাসির উদ্দিন এলানের মুক্তি দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে ‘এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ (ফোরাম-এশিয়া) এবং এর সদস্য সংস্থাগুলি। সম্প্রতি দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তাদের দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। ওই বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক ২৭টি মানবাধিকার সংস্থা স্বাক্ষর করেছে।

আদিলুর ও এলানের প্রতি অটুট সংহতি প্রকাশ করে বিবৃতিটি শুরু করা হয়। এতে বলা হয়েছে, তারা দুজন বাংলাদেশে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার লঙ্ঘন বিষয়ক ওয়াচডগ অধিকারের সদস্য। তারা যেভাবে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলি নিষ্ঠার সাথে নথিভুক্ত করেছেন তা অন্যদের জন্য অনুকরণীয়। বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন, জোরপূর্বক গুম এবং নারী ও সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনাগুলো নথিভুক্ত করেছেন তারা।

২০১৩ সাল থেকে অধিকার এবং এর কর্মীরা – বিশেষ করে আদিলুর এবং এলান অব্যাহত বিচারিক হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন৷ একটি বিক্ষোভ দমনের সময় ৬১ জনকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যার ঘটনা প্রকাশ্যে আনার পরই তাদের ওপর হয়রানি শুরু হয়। ২০০৬ সালে প্রণীত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার অধীনে আদিলুর এবং এলানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে কর্তৃপক্ষ। তাদের বিরুদ্ধে ভুয়া, অশ্লীল ও মানহানিকর তথ্য প্রকাশ করার অভিযোগ আনা হয়। পরবর্তীকালে আদিলুর এবং এলানকে স্বেচ্ছাচারীভাবে যথাক্রমে ৬২ এবং ২৫ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়।

অধিকার দৃঢ়ভাবে তাদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিদের ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়েছে।
মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে যাওয়ায় বছরের পর বছর ধরে অধিকার, আদিলুর এবং এলানকে টার্গেট করে নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। ২০২২ সালে এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরো (এনজিওএবি) বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং গুমের বিষয়ে ‘বিভ্রান্তিকর তথ্য’ প্রকাশের অভিযোগে অধিকারের নিবন্ধন পুনর্নবীকরণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। তাদের দাবি, অধিকারের এসব কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রাষ্ট্রের সুনাম নষ্ট করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও এই সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছিল।

 

এমন অবস্থায়, ‘ফোরাম-এশিয়া’ আদিলুর এবং এলানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছে। তারা বাংলাদেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকার রক্ষায় তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। এক দশকের অযৌক্তিক হয়রানির পর তাদের সাজা প্রদানের ঘটনা বাংলাদেশ এবং বিশ্বের সকল মানবাধিকার কর্মীদের কাছে একটি শীতল বার্তা পাঠায়। ফোরাম-এশিয়ার নির্বাহী পরিচালক মেরি আইলিন ডিজ-বাকালসো বলেন, ফোরাম-এশিয়া আদিলুর ও এলানের বিরুদ্ধে থাকা সকল অভিযোগ প্রত্যাহার করে তাদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। এই দুই মানবাধিকারকর্মীকে আটকে রাখা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সুনামকে আরও কলঙ্কিত করবে। আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি মানবাধিকারকর্মীদের অধিকার রক্ষার জন্য তার আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের আহ্বান জানাই।

ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয় যে, বাংলাদেশ সরকার পূর্ববর্তী পর্যালোচনাগুলির সুপারিশ বাস্তবায়নে কোনও স্পষ্ট পদক্ষেপ নেয়নি। মানবাধিকারকর্মীদের সুরক্ষা এবং ভয়ভীতি বা হয়রানি ছাড়াই কাজ করার পরিবেশ নিশ্চিতের যে সুপারিশ করা হয়েছিল তা নিয়ে বাংলাদেশ পুরোপুরি অমনোযোগী ছিল।
এমন অবস্থায় ফোরাম এশিয়া এবং এর সদস্য সংস্থাগুলি বাংলাদেশ সরকারের কাছে আদিলুর ও এলানকে অবিলম্বে এবং নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে থাকা সকল অভিযোগ বাতিল করার আহ্বান জানায়। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করছি, মানবাধিকারকর্মীদের অধিকারকে যেন সম্মান করা হয় এবং তারা যাতে নিপীড়ন ও প্রতিশোধের ভয় ছাড়াই তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারে তা নিশ্চিত করা হয়। পাশাপাশি মানবাধিকার নিয়ে কাজ করাকে অপরাধীকরণ করা থেকে বিরত থাকার পরিবর্তে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার- যেমন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারগুলি সমুন্নত রাখতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা মানবাধিকার সংস্থাগুলো হচ্ছে, কম্বোডিয়ান হিউম্যান রাইটস এন্ড ডেভেলপমেন্ট এ্যাসোসিয়েশন, আওয়াজ ফাউন্ডেশন পাকিস্তান: সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস, বালাওদ মিন্দানাউ- ফিলিপাইন, বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ – ভারত, বীর দুইনো- কিরগিজস্তান, বাইটস ফর অল, সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, সিভিল সোসাইটি এবং হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্ক, ডিফেন্স অফ হিউম্যান রাইটস, এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, হিউম্যান রাইটস মেজারমেন্ট ইনিশিয়েটিভ, ইন্টারন্যাশনাল লিগ্যাল ইনিশিয়েটিভ পাবলিক ফাউন্ডেশন, ইনফর্মাল সেক্টর সার্ভিস সেন্টার, কারাপাটান অ্যালায়েন্স ফিলিপাইন,
কাজাখস্তান ইন্টারন্যাশনাল ব্যুরো ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড রুল অফ ল, কম্বোডিয়ান লীগ ফর দ্য প্রমোশন অ্যান্ড ডিফেন্স অফ হিউম্যান রাইটস, মালদ্বীপস ডেমোক্রেসি নেটওয়ার্ক, ন্যাশনাল সেন্টার অ্যাগেইনস্ট ভায়োলেন্স, ফিলিপাইন অ্যালায়েন্স অফ হিউম্যান রাইটস অ্যাডভোকেটস, পিপলস ওয়াচ, ফিলরাইটস, পিপলস সলিডারিটি ফর পার্টিসিপেটরি ডেমোক্রেসি, পাবলিক অ্যাসোসিয়েশন ‘ডিগনিটি’, পুসাত কোমাস, টাস্ক ফোর্স ডিটেনিস অফ ফিলিপাইন্স, থিংক সেন্টার এবং ওমেনস রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার।

 

facebook sharing button
twitter sharing button
skype sharing button
telegram sharing button
messenger sharing button
viber sharing button
whatsapp sharing button

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.