সালাহউদ্দিনকে ট্রাভেল পাস, ফিরতে পারবেন দেশে

ভারতে অনুপ্রবেশের মামলায় খালাস পাওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে ‘ট্রাভেল পাস’ (ভ্রমণের অনুমোদন) দিয়েছে বাংলাদেশ। ফলে এখন তিনি বাংলাদেশে ফিরতে পারবেন। কিন্তু মামলা ও পরোয়ানা থাকায় দেশে প্রবেশ করেই গ্রেপ্তারের মুখে পড়তে হতে পারে তাকে।
প্রায় আট বছর ধরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে অবস্থান করছেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। অনুপ্রবেশের মামলায় মেঘালয় পুলিশের মামলায় ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর নিম্ন আদালত থেকে খালাস পান তিনি। এরপর ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে ভারত সরকার। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি শিলং জজকোর্টের আপিল বিভাগও সালাহউদ্দিনকে বেকসুর খালাস দেন। তাকে দ্রুত দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশনা দেন আদালত। এরপর দেশে ফিরতে গত ৮ মে ভারতের গৌহাটিস্থ বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার বরাবর ট্রাভেল পাসের আবেদন করেন তিনি। সম্প্রতি বাংলাদেশের স¦রাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাকে ট্রাভেল পাস দেয়। ট্রাভেল পাস দেওয়ার বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতের গৌহাটি বাংলাদেশ মিশনকে জানিয়েও দিয়েছে। বাংলাদেশে সালাহউদ্দিনের আহমেদের নামে মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। এ কারণে দেশে ফিরে তাকে আইনি প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হবে। তিনি গ্রেপ্তারও হতে পারেন।
এদিকে আমাদের সময়কে গতকাল সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, ট্রাভেল পাস পাওয়ার বিষয়টি তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে পাননি।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, সালাহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের নাগরিক। যেহেতু তার পাসপোর্ট নেই, সুতরাং তার ফিরতে ট্রাভেল
পাসের দরকার হবে। তিনি আবেদন করেছেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ট্রাভেল পাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। সুতরাং দেশে ফিরলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে আমাদের সময়কে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি বিভাগের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, ‘সালাহউদ্দিন আহমেদ যে কোনো সময় দেশে ফিরতে পারবেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ভারতের আসাম রাজ্যের গৌহাটিতে আমাদের মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।’
ট্রাভেল পাসের আবেদনে সালাহউদ্দিন বলেন, ২০১৫ সালে থেকে তিনি ভারতে আটকে আছেন। দেশটিতে তার বিরুদ্ধে যে অনুপ্রবেশের মামলা হয়েছিল, সেই মামলায় আদালত তাকে খালাস দিয়েছেন। তিনি নিজ দেশে ফিরতে চান এবং দেশবাসী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হতে চান। তিনি আরও বলেন, ২০১৬ সালের ১১ জুলাই তার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ভারতে থাকার কারণে তিনি পাসপোর্ট নবায়নের সুযোগ পাননি।
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদ মুঠোফোনে আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমি স্বেচ্ছায় ভারতে আসিনি। আমি প্রথম দিন থেকে দেশে ফিরতে চেয়েছি; আমি দেশে ফিরব। ইতোমধ্যে অনুপ্রবেশের অভিযোগের আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আমি খালাস পেয়েছি। শুনেছি ট্রাভেল পাসের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আমি কাল বা পরশু যোগাযোগ করব এখানকার বাংলাদেশ হাইকমিশনে। অনুমোদন পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেব- কবে দেশে ফিরব।’
দেশে ফিরলে গ্রেপ্তার হওয়ার আশঙ্কা করেন কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ফেরার পর যা হওয়ার হবে। দেশে গিয়ে যেটা হবে, সেটা তখন দেখা যাবে। সব সময় দেশেই ফিরতে চেয়েছি।’ মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কতটি মামলা আছে, বলতে পারব না। কারণ, কখন কোথায় মামলা দিয়েছে, সেটা জানি না। তবে ৪০টার মতো হতে পারে।’
২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরা থেকে সালাহউদ্দিন নিখোঁজ হন। এরপর একই বছরের ১১ মে শিলং পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। ভারতের পুলিশের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, শিলংয়ে উদভ্রান্তের মতো ঘোরাঘুরির সময় লোকজনের ফোন পেয়ে তাকে আটক করা হয়। এরপর অনুপ্রবেশের অভিযোগে তার নামে মামলা করে মেঘালয় পুলিশ।