
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি বলেছেন, আমরা সব নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। আমরা দেখতে চাই এবং মানুষকে দেখাতে চাই, সরকার কী করছে, সরকার কী করতে চায়। প্রার্থীরা বলছেন সিটি নির্বাচনে ইভিএম চাপিয়ে দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে ইভিএম আতঙ্ক শুরু হয়েছে। সরকার ও নির্বাচন কমিশন বলেই যাচ্ছে ইভিএমকে ভয় পাবেন না। দেশের মানুষ কিন্তু বোকা নয়। ইভিএম নিয়ে বর্তমান সরকার কেরিকেচার করেছে। ইভিএমে কে কোথায় ভোট দিল তার প্রমাণ থাকে না। কে কিভাবে ডিক্লেয়ার করে তার প্রমাণ থাকে না। সাধারণ মানুষ মনে করে ইভিএম দিয়ে সরকার যাকে খুশি বিজয়ী ঘোষণা করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, সাধারণ মানুষ বলেন, ভোট দিতে গেলে সরকারদলীয় লোকজন ভোট দিয়ে দেয়। আমরা ভোট দিলেও সরকারি দল আর না দিলেও সরকারি দলই পাশ করছে। সরকার, প্রশাসন ও নির্বাচনব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত সবাই ইভিএম ব্যবহার করে সরকারের ইচ্ছেমতো ফলাফল ঘোষণা করার ব্যবস্থা করছে। সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে চাইলে ইভিএম বাদ দিয়ে নির্বাচন দিতে হবে। কোনো সিটি নির্বাচনেই ইভিএম দেওয়া ঠিক হবে না। ক্ষমতায় থেকে, প্রশাসন ব্যবহার করে এবং দলীয়করণের মাধ্যমে নির্বাচনব্যবস্থা কুক্ষিগত করে নির্বাচনে পাশ করলে জনগণের সমর্থন প্রয়োজন হয় না। এমন নির্বাচনে যারা বিজয়ী হন জনগণ তাদেরও সম্মান করে না। কারণ, তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হননি। নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস করে বিরাজনীতিকরণের দিকে দেশ ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে দেশের গণতন্ত্র হত্যা করা হয়েছে।
সোমবার জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয়ে এক যোগদান অনুষ্ঠানে জিএম কাদের এসব কথা বলেন। বিকল্প স্বেচ্ছাসেবক ধারার সভাপতি আবুল বাসার ও সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন বাবুর নেতৃত্বে সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন।
জিএম কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। একটি দল খারাপ কিছু শুরু করলে পরবর্তীতে অন্য দল ক্ষমতায় এসে তা আরও বাড়িয়ে দেয়। দোষত্র“টির দিক থেকে কেউ কারও চেয়ে কম না। এভাবে দুটি দল দেশকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এমন বাস্তবতায়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিপক্ষে একটি বিকল্প শক্তি হতেই বিকল্পধারা সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু তারা বিকল্প শক্তি হতে পারেনি। তাই যারা বিকল্প শক্তি হতে চেয়েছিল তারা এখন জাতীয় পার্টিতে দলে দলে যোগ দিচ্ছেন। এতে প্রমাণ হয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিপক্ষে জাতীয় পার্টি একমাত্র বিকল্প শক্তি। জাতীয় পার্টিই পারবে এই দুটি দলের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে। আর জাতীয় পার্টি ব্যর্থ হলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশকে ধ্বংস করে দেবে।
জিএম কাদের বলেন, দলীয়করণের মাধ্যমে দেশে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। ’৯১ সালের পর থেকে টেন্ডারবাজি করে একশ্রেণির লোক আঙুল ফুলে বটগাছ হয়ে গেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে। আওয়ামী লীগ একবার আর বিএনপি দুর্নীতিতে চারবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এরশাদের সময় দেশ কখনোই দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়নি। বিএনপি দেশে বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড শুরু করেছে। আওয়ামী লীগসহ আমরা তার প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আরও বেড়েছে। এখন সারা পৃথিবীতে আমাদের দুর্নাম ছড়িয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হচ্ছে লুটপাটের উদ্দেশ্যে। মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি, এটা এখন ওপেন সিক্রেট। যারা লুটপাট করেছে তারা বিদেশে টাকা পাচার করেছে, বাড়ি-ঘর বানিয়েছে। কিন্তু দেশের মানুষ কী খেয়ে থাকবে। আইএমএফের তথ্য মতে, মুদ্রাস্ফীতি আরও বাড়বে। আগামী দিনে আরও রিজার্ভ কমতে পারে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শেরীফা কাদের এমপির সভাপতিত্বে এবং লালমনিরহাট জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব জাহিদ হাসানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, বিকল্প স্বেচ্ছাসেবক ধারার সভাপতি আবুল বাশার, সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন বাবু। উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা একেএম মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, খান মোহাম্মদ ইসরাফিল খোকন, মাসরুর মওলা, ইঞ্জিনিয়ার মনির আহমেদ, মো. খলিলুর রহমান খলিল, মো. মাশরেকুল আজম রবি।