চীফ হীট অফিসার যেসব উত্তাপ কমাতে পারবেন না

চীফ হীট অফিসার যেসব উত্তাপ কমাতে পারবেন না। যে কয়টা বুঝেছি সে কয়টা লিখলাম।
১. টাকার গরম – দেশে নব নব লুটেরা পাচারকারী ব্যাংক প্রতারণা ও জালিয়াতি এবং ঋণখেলাপীরা যে টাকার পাহাড় গড়েছে ও কথায় কথায় টাকার গরমে ধরাকে সরা জ্ঞান করে কানাডা সিংগাপুর মালয়েশিয়া কেম্যান আইল্যান্ড অ্যান্টিগা ও বারবুডা, সেন্ট কিটস ও নেভিস থেকে দুবাই সব দখল করে নিচ্ছে , সেই আংকলদের টাকার গরম তিনি কমাতে পারবেন না।
২. ঝুলনদারদের গরম – পতিত সমাজতান্ত্রিকদের মশাল মার্কার নিভু নিভু আগুন তিনি কমাতে বা নেভাতে পারবেন না। কারণ গোলাবিহীন ট্যাংকের নলের সাথে ঝুলনৃত্যকারী এই নেতারা ক্ষমতার হালুয়ার গরমে এত গরম যে তাদের গরম কমানো হীট অফিসারের পক্ষে সম্ভব না।
৩. বাজারের গরম – কখনো চিনি কখনো লবন কখনো তেল কখনো চাল কখনো মুরগী কখনো তার ডিম, বাজারের উত্তাপ তথা অগ্নিমূল্য কমানোর সাধ্য তার, তার চাচাদের, তার বাবার, কারোই সাধ্য নাই। এরচাইতে তিনি কেকাপার সাথে শলা করে বরং নুডলসের অমলেট, কচুর রোস্ট আর বিভিন্ন বৃহদাকৃতি ফল ভিত্তিক রেসিপি জনপ্রিয় করে তুলতে পারেন।
৪. রাজনীতির গরম – তিনি চান বা না চান, জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বালো এই শ্লোগান দেয়া, কেউ কর্কশ কন্ঠে চিৎকার করলে তাকে অগ্নিকন্যা বলা ও কথায় কথায় কাগজে, টায়ারে, লাঠির আগায়, মোমবাতি বা মশালের মাথায় আগুন জ্বালানো ও কুশপুত্তলিকার নামে কিছু বালিশ পোড়ানো তিনি বন্ধ করতে পারবেন না।
৫. তিতাস গ্যাসের লীকজনিত গরম – লীক বা ফুটা বন্ধ করতে না পারায় মিথেন গ্যাসের দুর্গন্ধে অগ্নি ঝুঁকিতে থাকা শহরে যে কোন স্থানে আগুন বন্ধ করার কোন কার্যকর ব্যবস্থা তিনি নিতে পারবেন না।
৬. আতশবাজির গরম – কিছু হলেই আতশবাজি ও ফানুস জ্বালিয়ে মজমা করা তিনি বন্ধ করতে পারবেন না। এই আতশবাজি প্রকল্পে তার পিতারও অনেক আগ্রহ থাকায় পাখীর নিদ্রাভঙ্গ করে শতভাগ সফলতার সাথে মেট্রোরেলের লাইনে ফানুস ফেলে যাত্রভঙ্গ করার আগুন কমানোর সাধ্য তার নাই।
৭. গরম মসলা – দেশের বাজারে গরম মশলা নামের যে পদার্থগুলি পাওয়া যায় যার বেশির ভাগই আমদানী হয়ে আসে, এই মশলাগুলিকে ঠান্ডা মশলা বানানো তার পক্ষে সম্ভব হবে না।
৮. হট ও হটিজ – দেশে বোটক্স , ল্যাটেক্স , ডিটক্স, ট্রান্সপ্ল্যান্ট, ইমপ্ল্যান্ট ও এক্সটেনশন, ফিলার, সীলার করে , যেসব মানুষ থোতা কোরিয়ান ও চুল চাইনিজ বানিয়ে, হট ও হটিজ হচ্ছে তাদের হটনেস কমানো তার পক্ষে সম্ভব হবে না।
৯. হট প্যাটিস ও হট এন্ড সাওয়ার সুপ – এই খাবারটির একটি এই তিনকোনা আকৃতির ভেতরে মাংসের উচ্ছিষ্ট ও আরেকটি লাল মরিচের ঝোল দিয়ে বানানো হলেও এদের নামের হাজার বছরের ঐতিহ্য রয়েছে। এই নাম কখনো তিনি বদলাতে পারবেন না।
১০. ক্ষমতার গরম – নব নব ক্ষমতাবান হাইব্রিড ইঞ্জিন বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের গরম গরম বক্তৃতা, প্রতিপক্ষের চর্ম তুলে দুই গালে পাদুকা প্রদান সহ নানা রকম গরম ভাব বন্ধ করা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। চান্দাবাজ ধান্দাবাজ টেন্ডারবাজ সহ সকল নব্য লোকজনের গরম বাড়তেই থাকবে।
১১. ফেসবুকের সহমত ভাইবোনদের গরম – এদের গরম কেমন সেটা তিনি এরই মধ্যে টের পেয়েছেন। এটা কমানোর কোন চেষ্টা করলেই তিনি তার পূর্বপুরুষদের সৃষ্ট ছিপি ব্যাং এর ঘ্যাংগর ঘ্যাং সহ সব ধরণের গালাগালিভার্সদের লিলিপুটিয়ান আচরণ দেখতে পাবেন। অতএব সহমত গরম থেকে দুরে থাকাই ভালো।
১২. বংশের গরম – কার বাবার জুতা ছিলো নাকি ছিলো না, কার স্যুট ছিলো আর কার আচকান। কে লুংগীতে গিট্টু দিতো আর কে পায়জামার ফিতা বাঁধতে জানতো না, এইসব বংশগৌরবী , আজীবন গদির অধিকারী তথা গদাধিকারীদের মুখের গরম তিনি কমাতে পারবেন না। অবিলম্বে তার নিজের মুরুব্বীদের জুতার ছবি তুলে রাখাটাই হয়তো বেশি দরকার।
১৩. বিদ্যুত পানি ও এলপি গ্যাসের দামের গরম – এটা নিয়ে কথা না বলাই ভালো। এটা বাড়বেই। আই এম এফ ভাইয়াকে কথা দেয়া হয়ে গেছে।
১৪. জানিস আমি কে গরম – এই ভাইয়া ও আপুদের গরম কি সেটা তিনি তার আশেপাশে তাকালেই টের পাবেন।
১৫. ঢাকা শহরের গরম – এটা কমাতে হলে চাই সবুজ, চাই বাতাস, চাই খোলা মাঠ। এ বিষয়ে তিনি পারিবারিক ভাবে আলোচনা করলেই জেনে যাবেন খাল বিল নদী নালা খেলার মাঠ কারা দখল করেছে। কারা পাবলিকের মাঠ দখল করে ক্লাবের নাম লিখে দিয়েছে। কারা গাছ কেটে আবাসিক প্রকল্প বানিয়েছে আর তার পরিবারের মধ্যে কে গাছ কাটার নির্দেশে স্বাক্ষর করেছেন।
আশা করি এটা তিনি কমাতে পারবেন। তবে ইতিহাস বলে , এই বিষয়ে কথা হয়, কোন কাজ হয় না।
সবশেষে যা তিনি পারবেন না, কখনোই না সেটা হলো নিজের পদের নামের আগের হীট শব্দটা তিনি বদলাতে পারবেন না। ওখানে হীট থাকবেই।
নামটা হীট অফিসার না হয়ে কুলিং অফিসার হলে হয়তো ভালো হতো।
এশিয়ার প্রথম , বাংলাদেশের প্রথম, ঢাকা উত্তরের প্রথম হীট অফিসারের প্রতি রইলো অসংখ্য শুভেচ্ছা।
তার কাছে একটা কুইজ।
ঢাকা দক্ষিনের গাছ কাটা অব্যাহত রেখে ও বিভিন্ন মার্কেটে অগ্নিকান্ডে সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতায় তিনি কি করে ঢাকা দক্ষিনের উত্তাপ থেকে ঢাকা উত্তরকে আলাদা করবেন?
রবীন্দ্রনাথের বলে যাওয়া তাপস নিঃশ্বাস বায়ে, মুমূর্ষু উত্তরের গরমে উড়ে যাওয়া তিনি কিভাবে থামাবেন?
তার সফলতা কামনা করি।
ব্যর্থ হলেও ক্ষতি নাই।
তার জন্য পরামর্শ। হীট কমুক বা না কমুক, ওয়াসা , ক্রিকেট ও ফুটবল থেকে শিক্ষা নিয়ে তিনি যেন আজীবন এই পদে কিভাবে থাকতে হয় সেটা রপ্ত করে নেন।
আব্দুন নুর তুষারের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত ।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.