
ইংরেজি নববর্ষের মত বাংলা নববর্ষ কে জনপ্রিয় করতে অর্চক শিল্পী গোষ্ঠী গত আট বছর ধরে শিলিগুড়ি শহরে একটি বাংলা বর্ষবরণ উৎসব আয়োজন করে থাকে। যেটি শুধু শিলিগুড়ি নয় উত্তরবঙ্গের চৌহদ্দি পেরিয়ে পুরো পশ্চিমবঙ্গে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বলাবাহুল্য, বর্ষবরণ অনুষ্ঠান আগে থেকে প্রচলিত থাকলেও বর্ষবরণে পথ অল্পনা সহযোগে নিদাঘ উৎসব পশ্চিমবঙ্গে প্রথম।

এই উৎসবের সূচনায় ছিল শুভেচ্ছা বিনিময়পত্র রচনা প্রতিযোগিতা। পহেলা বৈশাখের অঙ্গ হিসেবে শুভেচ্ছা বিনিময় পত্র অর্থাৎ কার্ড তৈরি করা, শুভেচ্ছা সূচক ছড়া লেখা এবং প্রিয়জনদের মধ্যে তা বিতরণ করার সংস্কৃতি আজকাল আমরা প্রায় ভুলতে বসেছি। এই প্রজন্মের শিশুদের মধ্যে সৃজনমূলক প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে এবং বঙ্গসংস্কৃতি রক্ষার্থে, অর্চক একটি নান্দনিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে প্রতিযোগিদের মুল অনুষ্ঠানের দিন পুরস্কৃত করা হয়েছে। দেড়শর বেশি শিশু কিশোর কিশোরী রা তাদের কল্পনা কে মেলে ধরেছিল কার্ডের পাতায়। সুচারু হাতের লেখা প্রচ্ছন্ন বাংলা ভাষায় লেখা শুভেচ্ছা বাণী বিচারকদের মোহিত করেছিল।

বাংলা বর্ষের বিদায় দিনে অর্থাৎ বসন্তের শেষ সন্ধ্যায় ছিল অর্চকের বর্ণিল সম্ভার চৈত্র অবসান। চৈত্রের শেষ বেলায় অর্থাৎ ১৪ ই এপ্রিল ২০২৩, বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বাঘাযতীন পার্ক সংলগ্ন রাজপথ শিলিগুড়ির প্রথিতযশা চিত্রশিল্পীরা আলপনায় রাঙ্গিয়ে তোলার পাশাপাশি ছিল বাংলা ব্যান্ডের গান বাংলা লোকসংগীত লোকনৃত্য। অনু নাটক মূকাভিনয় বাঙালি সাজে বঙ্গনারী ছিল বাংলার ব্রতচারী বৈরাতি নাচ গাজনের নাচ এবং রায়বেশে । জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের ১০৪ তম বর্ষ কে স্মরণ করে ঐদিন ছিল একটি স্মরণ আলোচনা, এছাড়া ছিল নতুন কবিদের পাশাপাশি প্রবীণ কবিদের স্বরচিত কবিতা পাঠ, কবিতার কোলাজ নববর্ষ ও আজকের বাঙালি বিষয়ক আলোচনা। এদিন বিভিন্ন বাংলা ব্যান্ড দল হাজির হয়েছিল বাংলা লোকগানের সম্ভার নিয়ে। তারমধ্যে প্রতিশ্রুতি, তিতাস, সব পেয়েছি দল, কলাঙ্গন উল্লেখযোগ্য। আজকের দিনে দাড়িয়েও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বঙ্গসংস্কৃতি ও বাংলা গান নিয়ে উন্মাদনা সত্যি নজর কেড়েছিল। পরদিন অর্থাৎ ১৫ই এপ্রিল ২০২৩ নববর্ষের প্রথম ঊষাকালে সূর্যোদয়ের সাথে সাথেই শুরু হয়ে যাবে নতুন বঙ্গাব্দ ১৪৩০।

এই শুভ মুহূর্ত কে স্বাগত জানাতে অর্চক আয়োজন করেছিল একটি প্রভাতী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এর শুরুতে ছিল একটি মাঙ্গলিক শোভাযাত্রা। অর্চকের সদস্য-শিক্ষার্থী’রা বঙ্গ সংস্কৃতির ম্লান স্মৃতি থেকে খুঁজে পাওয়া বিভিন্ন উপাদান কে দিয়ে সাজিয়ে তুলছিল এই শোভাযাত্রা। এরপর মূল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতে ছিল শিলিগুড়ির প্রথিতযশা সঙ্গীত শিল্পী সমন্বয়ে গঠিত ‘আহ্বান’ গ্রুপ এবং নৃত্যে ‘অর্চক’ পরিবেশন করে সূর্য বোধন। ছিল শিলিগুড়ির প্রথিতযশা বাচিকশিল্পী নৃত্যশিল্পী সংগীত শিল্পী সমন্বয়ে কোলাজ অনুষ্ঠান। এছাড়া অর্চকের নিজস্ব সৃষ্টিশীল নৃত্যানুষ্ঠান তো ছিলই, বলা বাহুল্য এদিন শিলিগুড়ি র সুপরিচিত শিল্পীদের পাশাপাশি কলকাতা থেকে আগত প্রখ্যাত প্রথিতযশা নজরুল গবেষক,সুকন্ঠী সোমঋতা মল্লিকের পরিবেশনা দর্শক দের মুগ্ধ করে। সমগ্র অনুষ্ঠানটি যে মঞ্চে মঞ্চায়িত হয় সেটিও চিত্রশিল্পীদের দ্বারা নান্দনিক উপাচারে সজ্জিত হয়েছিল। বাঙালিয়ানা শুধু অনুষ্ঠানে নয় রয়েছে উৎসব অনুসঙ্গেও। বাঙালির পার্বণ হবে অথচ খাওয়া-দাওয়া থাকবেনা তাতো হয় না। দুপুরে ছিল পয়লা বৈশাখের বিশেষ পদ ইলিশ মাছ পান্তাভাত দই চিড়ে মিষ্টিমুখের ব্যবস্থা। আয়োজক সংস্থা অর্চকের পক্ষ থেকে অনির্বাণ দাস ও অদিতি দাস ঘোষ জানান যে ইংরেজি নববর্ষের মতো বাংলার নববর্ষকে জনপ্রিয় করতে যে কর্মযজ্ঞ শুরু করেছিলেন তা অনেকটাই সফল। এই উৎসবের মাধ্যমে আপামর শিলিগুড়িবাসী বাঙালি অবাঙালি নির্বিশেষে উৎসব প্রাঙ্গনে উপস্থিত হয়ে বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছে এবং একে উভয়কে শুভেচ্ছা জানিয়েছে।