ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে বঙ্গবাজারের টিনশেড দোতলা মার্কেট। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে মার্কেটের সব দোকান। মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটের দিকে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। এরপর থেকে প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় বেলা ১২টা ৩৬ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের খবর চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। সকাল থেকে টেলিভিশনগুলোতে লাইভ খবর প্রচারিত হয়। অনলাইন গণমাধ্যমগুলোতেও টানা সংবাদ প্রচার হয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও বঙ্গবাজারে আগুনের খবর গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার হয়।

রয়টার্স, এপি, আলজাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান ও সিজিটিএন, ডেকান হেরাল্ড, আল আরাবিয়া নিউজ, আরব নিউজ, হিন্দুস্তান টাইমসসহ প্রধান প্রধান আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা ও সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়েছে বাংলাদেশের এই খবর। 

সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে এই আগুন লাগার তথ্য পাওয়া যায় বলে ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুমের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। কিন্তু ঠিক কীভাবে আগুন লেগেছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সেখানে চার হাজারের বেশি দোকান আছে। মূলত বঙ্গবাজার পাইকারি ও খুচরা কাপড়ের জন্য বাংলাদেশের প্রধান ও পরিচিত মার্কেটগুলোর একটি।

এদিকে আগুনের ঘটনা জানার পর ঢাকা এবং আশপাশের জেলার সবগুলো ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট সেখানে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। একপর্যায়ে সেখানে ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে নিযুক্ত হয়।

আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেয় সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীসহ সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটও। দীর্ঘ সময় ধরে আগুন জ্বলতে থাকায় বঙ্গবাজার ও আশপাশের কয়েকটি মার্কেটে আগুন ছড়িয়ে পড়ে বলে জানা গেছে।

আল-জাজিরা জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে ঢাকার বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুনের সূত্রপাত হয়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি বলে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা রাফি আল ফারুক টেলিফোনে দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস নিউজ এজেন্সিকে জানিয়েছেন। পরে অবশ্য ফায়ার সার্ভিসের কমপক্ষে পাঁচজন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ঢাকার পোশাক কারখানায় টমি হিলফিগার এর মতো পশ্চিমা ফ্যাশন ব্র্যান্ডের জন্য উৎপাদিত কিন্তু রপ্তানি মান পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়া কাপড় এই বঙ্গবাজারে বিক্রি হয়ে থাকে এবং এই কারণে অগ্নিকাণ্ডের শিকার মার্কেটটি সবার কাছেই বেশ জনপ্রিয় গন্তব্য ছিল।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, দুর্বল পর্যবেক্ষণ এবং যথাযথ অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবের কারণে বাংলাদেশের বহু বাণিজ্যিক স্থানে প্রায়ই আগুন লেগে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের পোশাক শিল্পখাত গত এক দশকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নয়ন হয়েছে। যদিও বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড-সহ অতীতে অনেকবারই বড় ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে বাংলাদেশের এই শিল্পখাত।

রয়টার্স বলছে, দুর্বল নীতি ও সেগুলোর প্রয়োগ না থাকায় শিল্পসংশ্লিষ্ট নানা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে শত শত প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া প্রায় একই ধরনের সংবাদ প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি), ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্যা গার্ডিয়ান, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া, আল আরাবিয়া নিউজ, আরব নিউজ, বিজনেস রেকর্ডারসহ আরও অনেক গণমাধ্যম।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading